কাটোয়া হাসপাতাল

দর হাঁকে অ্যাম্বুল্যান্স, নেই নিয়ন্ত্রণ

দু’দিকে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স ও যাত্রীবাহী গাড়ি। রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি লেগেই রয়েছে। এক ঝলকে মনে হবে অ্যাম্বুল্যান্স স্ট্যান্ড। কিন্তু আদতে এই ছবি কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের।বেআইনি ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ওই অ্যাম্বুল্যান্সগুলিকে সরানোর ক্ষমতা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেই বলে স্বীকার করে নিয়েছেন কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার বর্ণমান টুডু। তিনি এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদারও সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৩০
Share:

সার দিয়ে দাঁড়িয়ে বেআইনি অ্যাম্বুল্যান্স।—নিজস্ব চিত্র।

দু’দিকে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স ও যাত্রীবাহী গাড়ি। রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি লেগেই রয়েছে। এক ঝলকে মনে হবে অ্যাম্বুল্যান্স স্ট্যান্ড। কিন্তু আদতে এই ছবি কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের।

Advertisement

বেআইনি ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ওই অ্যাম্বুল্যান্সগুলিকে সরানোর ক্ষমতা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেই বলে স্বীকার করে নিয়েছেন কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার বর্ণমান টুডু। তিনি এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদারও সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আলোচনা করে সমাধানের উপায় বের করা হবে।”

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকমাস ধরেই নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে একেবারে জরুরি বিভাগের সামনে কার্যত ২৪ ঘন্টা অ্যাম্বুল্যান্সগুলি দাঁড়িয়ে থাকে। প্রতিদিন সকাল থেকেই ৭-৮টি অ্যাম্বুল্যান্স ও গোটা চারেক যাত্রীবাহী গাড়ি দেখতে পাওয়া বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের কর্মীরাও। গাড়িগুলির অধিকাংশই ‘কমার্শিয়াল’ নয়। হাসপাতালের কর্তারা এ ব্যাপারে জানতে চাইলেই এক বাক্যে সব চালকেরা জানিয়ে দেন, তাঁরা গ্রাম থেকে রোগী নিয়ে এসেছেন। ওই রোগীর আত্মীয়েরা চিকিত্‌সা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন। তাই তাঁরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেই বোঝা যায়, অ্যাম্বুল্যান্স জরুরি বিভাগের সামনে রেখে চালকেরা ‘খদ্দের’ ধরার জন্য ঘোরাঘুরি করছেন। অ্যাম্বুল্যান্সের উপরে প্রশাসনের কোনও নিয়ন্ত্রণও নেই। সে কারণেই অ্যাম্বুল্যান্স বা গাড়িগুলি যা ইচ্ছে তাই ভাড়া হাঁকে বলেও রোগীর পরিজনদের অভিযোগ। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের চিকিত্‌সকদের একাংশেরও দাবি, সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার দুরবস্থার জন্যই বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সগুলির রমরমা।

Advertisement

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ভাড়া নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগও জমা পড়েছে মহকুমাশাসক ও স্বাস্থ্য দফতরে। বেশির ভাগ অভিযোগের ক্ষেত্রে জানানো হয়েছে, কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। কিন্তু তার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা দেড় থেকে দু’হাজার টাকা দাবি করেন। এমন কী কাটোয়া থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর পরিবারকে সাতশো টাকা গুনতে হয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে মুর্শিদাবাদের জেলা হাসপাতালে বেআইনি ভাবে অ্যাম্বুল্যান্সের জায়গা আটকে রাখা নিয়ে গণ্ডগোল বেধেছিল। পুলিশ জোর করে অ্যাম্বুল্যান্সগুলি সরিয়ে দেওয়ায় প্রতিবাদে চালকেরা গুরুত্বপূর্ণ ওই পরিষেবা বন্ধ করে দেন। ফলে হাসপাতালে পৌঁছতে না পেরে এক তরুণীর মৃত্যু হয়। বীরভূমের রামপুরহাট হাসপাতালেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল।

এই হাসপাতালের উপর কাটোয়া মহকুমা ছাড়াও পাশের জেলা মুর্শিদাবাদের সালার, বড়ঞা, ভরতপুর থানার বাসিন্দারা নির্ভরশীল। নদিয়ার কালীগঞ্জ, নাকাশিপাড়া এবং বীরভূম জেলার মানুষজনেরও নিত্য যাতায়াত এখানে। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে এক সময় সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স ছিল ২টি। তবে এখন সেখানে কোনও সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স নেই। হাসপাতালের সুপার বলেন, “একটি অ্যাম্বুল্যান্স ছিল, সেটি দুর্ঘটনায় পড়ে গ্যারেজে রয়েছে।” আর মওকা বুঝে দাঁও মারতে কসুর করছেন না অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা।

কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদারও বলেন, “দুর্ঘটনার সময় অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের দেখা মেলে না বলে অভিযোগ রয়েছে। রোগী কল্যাণ সমিতিতে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। তারপর চালকদের সঙ্গে বসে সমাধানের পথ বের করতে হবে।”

তবে ভাড়ার ‘অত্যাচার’ নিয়ে কোনও আশার কথা শোনাতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর। বেশ কয়েকমাস আগে এ ব্যাপরে স্বাস্থ্য দফতরের সচিব (যানবাহন) সুবীর চট্টোপাধায় কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে এসে বলেছিলেন, “অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নিয়ন্ত্রণের কোনও ক্ষমতাই সরকারের নেই। ভাড়াও ঠিক করে না স্বাস্থ্য দফতর।” সমস্যা থমকে আছে সেখানেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন