নেই যথেষ্ট ডাক্তার, ভুগছে তিন বিভাগ

পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে জেরবার দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের তিনটি বিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে সদ্যোজাতদের জন্য তৈরি ‘সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট’-ও (এসএনসিইউ)। ডাক্তার কম থাকায় অন্যত্র ‘রেফার’ করার সংখ্যা বাড়ছে বলেও অভিযোগ রোগীর পরিজনদের। হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাস বলেন, “বিষয়গুলি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গোচরে আনা হয়েছে। আশা করি দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।”

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৪ ০২:১৩
Share:

দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল।—ফাইল চিত্র।

পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে জেরবার দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের তিনটি বিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে সদ্যোজাতদের জন্য তৈরি ‘সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট’-ও (এসএনসিইউ)। ডাক্তার কম থাকায় অন্যত্র ‘রেফার’ করার সংখ্যা বাড়ছে বলেও অভিযোগ রোগীর পরিজনদের। হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাস বলেন, “বিষয়গুলি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গোচরে আনা হয়েছে। আশা করি দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।”

Advertisement

দুর্গাপুরের এই হাসপাতালের উপরে শহর এলাকার একটি বড় অংশের মানুষ ছাড়াও কাঁকসা, ফরিদপুর, অন্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর ব্লকের হাজার হাজার মানুষ নির্ভরশীল। এসএনসিইউ গড়ে ওঠার পরে এই হাসপাতালে প্রসূতির সংখ্যা বেড়েছে। কারণ, সদ্যোজাতের কোনও সমস্যা হলে হাতের কাছে আধুনিক চিকিৎসার সুবিধা রয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্ত্রীরোগ, প্রসূতি ও শিশু বিভাগে এখন ডাক্তারের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তিন জন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের মধ্যে এক জনকে সম্প্রতি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে চুঁচুড়ায়। আর এক জনকে দিন তিনেকের জন্য পাঠানো হয়েছিল আসানসোল জেলা হাসপাতালে। তবে, গত শুক্রবার থেকে ফের তিনি কাজে যোগ দেওয়ায় পরিস্থিতির কিছুটা সামাল দেওয়া গিয়েছে। এসএনসিইউ-এ ২৪ ঘণ্টার জন্য ৫ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। সেখানে এখন রয়েছেন দু’জন। অভিযোগ, এমন পরিস্থিতিতে প্রসূতি ও শিশুদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি দিন গড়ে ৪-৫ জন প্রসূতির অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে। তার বাইরে স্ত্রী-রোগ সংক্রান্ত অস্ত্রোপচারও হয়। তিন জন চিকিৎসকই কাজ সামলাতে হিমসিম খান। যেখানে আরও চিকিৎসকের প্রয়োজন রয়েছে, সেখান থেকে ইতিমধ্যে পাকাপাকি ভাবে এক জন চলে গিয়েছেন। অন্য এক জনকে দিন কয়েকের জন্য আসানসোল হাসপাতালে পাঠানোয় সমস্যা আরও বেড়েছিল। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া’র (এমসিআই) পরিদর্শনের জন্য এমন ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল। তবে পরিদর্শনের নির্ঘণ্ট পিছিয়ে যাওয়ায় আপাতত তাঁকে দুর্গাপুরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে দরকার হলে তাঁকে আবার সেখানে পাঠানো হবে। মাঝে কয়েক দিন হাসপাতালে এক জন মাত্র স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। একা তাঁর পক্ষে বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ এবং অপারেশন থিয়েটার চালানো সম্ভব না হওয়ায় বাধ্য হয়ে বহু রোগী ও প্রসূতিকেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘রেফার’ করতে হয়েছে বলে হাসপাতালের একটি সূত্রের খবর। বর্ধমানে বা অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার গাড়ি ভাড়া, সেখানে রোগীকে দেখভালের জন্য পরিজনদের থাকার খরচ জোগাড় করতে বিপাকে পড়েছেন প্রসূতির বাড়ির লোকজন। এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিতে হাসপাতালের আশপাশে দালাল চক্রও সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ রোগীর আত্মীয়-পরিজনদের। দালালের খপ্পরে পড়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্থানীয় কোনও নার্সিংহোমে যেতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে, দাবি তাঁদের।

Advertisement

বছরখানেক আগে হাসপাতালে তৈরি করা হয়েছিল এসএনসিইউ বিভাগ। কিন্তু সেখানেও ২৪ ঘণ্টার জন্য নিজস্ব চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল। ২০১১ সালে রাজ্যের নানা হাসপাতালে পরপর এক সঙ্গে বহু শিশুমৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পরে রাজ্যের কিছু মহকুমা স্তরের হাসপাতালে এসএনসিইউ চালুর পরিকল্পনা নেয় স্বাস্থ্য দফতর। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ২০১৩ সালের মার্চে সেটি চালু হয়। মাসে গড়ে ৪৫টি জটিল রোগে ভোগা সদ্যজাত শিশুর চিকিৎসা হয় সেখানে। এই বিভাগে সর্বক্ষণের জন্য ৫ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও শুক্রবার পর্যন্ত ছিলেন মাত্র এক জন। সে দিন আর এক জন যোগ দেওয়ায় চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দুই।

হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার তথা আইএমএ-র অন্যতম কর্তা মিহির নন্দী বলেন, “চিকিৎসক সঙ্কটে জেরবার মহকুমা হাসপাতাল। বিশেষ করে প্রসূতি ও শিশুদের চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। ভুগছেন সাধারণ মানুষ।” আসানসোল স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) মনিকাঞ্চন সাহার অবশ্য আশ্বাস, “এমন পরিস্থিতি সাময়িক। চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে রাজ্য সরকার। আশা করি দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন