প্রসূতিকে মারধরে অভিযুক্ত চিকিৎসক

শারীরিক সমস্যা হওয়ায় পরীক্ষা করাতে হাসপাতালে লেবার রুমের বাইরে অন্য প্রসূতিদের সঙ্গে অপেক্ষা করছিলেন এক অন্তঃসত্ত্বা। ভিড়ের জন্য গোলমাল হওয়ায় বিরুক্ত হয়ে এক চিকিৎসক লেবার রুম থেকে বেরিয়ে ওই অন্তঃসত্ত্বার পেটে লাথি মারেন বলে অভিযোগ। শনিবার দুপুরে ওই ঘটনাকে ঘিরে ধুন্ধুমার বাধল পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৪ ০২:৫১
Share:

সদর হাসপাতালে সুপারকে ঘিরে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

শারীরিক সমস্যা হওয়ায় পরীক্ষা করাতে হাসপাতালে লেবার রুমের বাইরে অন্য প্রসূতিদের সঙ্গে অপেক্ষা করছিলেন এক অন্তঃসত্ত্বা। ভিড়ের জন্য গোলমাল হওয়ায় বিরুক্ত হয়ে এক চিকিৎসক লেবার রুম থেকে বেরিয়ে ওই অন্তঃসত্ত্বার পেটে লাথি মারেন বলে অভিযোগ। শনিবার দুপুরে ওই ঘটনাকে ঘিরে ধুন্ধুমার বাধল পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে।

Advertisement

ঘটনার পরে পেটে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হওয়ায় পুরুলিয়া মফস্সল থানার পখুরিয়া গ্রামের ওই বধূ শকুন্তলা মাহাতোকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে বধূর পরিজনরা হাসপাতালে এসে সুপার এবং ওই চিকিৎসককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বধূর স্বামী হাসপাতাল সুপারের কাছে প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক প্রিয়ব্রত কারকের বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রীর পেটে লাথি মারার লিখিত অভিযোগ করেন। পরে জেলা পরিষদের দুই কর্মাধ্যক্ষও সুপারের কাছে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। তবে ওই চিকিৎসক লাথি মারার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “ভিড়ের জন্য গোলমালে রোগী দেখতে অসুবিধা হচ্ছিল। তাই ঠেলে সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় কারও গায়ে ধাক্কা লাগতে পারে। লাথি মারব কেন?” হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে শকুন্তলা অভিযোগ করেন, “রক্তক্ষরণ হওয়ায় শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ পরীক্ষা করানোর জন্য লেবার রুমের বাইরে বসতে বলা হয়। আমি অন্য প্রসূতিদের সঙ্গে দরজার বাইরে বসেছিলাম। হঠাৎ এক নার্স লেবার রুম থেকে বেরিয়ে আমাদের সরে যেতে বলে। তারপরেই এক চিকিৎসক দুদ্দাড় করে এসে আমার পেটে সজোরে লাথি মারে। ছিটকে পড়ে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাই।” সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা পানুবালা মাহাতো। তাঁরও অভিযোগ, “প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলাম। উল্টে আমাকেও নার্সরা ঠেলে সরিয়ে দেয়।”

শকুন্তলার বাপের বাড়ি কাছেই সিহলি গ্রামে। সেখান থেকে লোকজন এসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। আসেন ওই গ্রামের বাসিন্দা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ হলধর মাহাতো। তিনি সুপারের কাছে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। খবর পেয়ে আসেন জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “যে অভিযোগ উঠেছে তা অত্যন্ত অমানবিক ও নিন্দনীয়। প্রকৃত তদন্ত হওয়া দরকার।” বধূর স্বামী দিনমজুর হরেন মাহাতো পরে সুপারের কাছে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। সুপার নীলাঞ্জনা সেন বলেন, “ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় অভিযোগ উঠেছে। গুরুত্ব দিয়েই অভিযোগের তদন্ত হবে।”

Advertisement

এ দিকে কিছু দিন আগেই এই হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের ভিতরে ছাদের চাঙড় খসে পড়ে এক প্রসূতি আহত হয়েছিলেন। সে দিনই হাসপাতালের অন্য এক ওয়ার্ডে ছাদ থেকে পাখা পড়ে গিয়ে আহত হন এক কিশোর ও তার বাবা। তার আগে রোগী নিয়ে লিফট আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। তারপরে এই ঘটনা। জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, “এখানে তো দেখছি রোগীদের স্বার্থ বারবার বিঘ্নিত হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে আরও সজাগ হওয়া প্রয়োজন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন