পলিক্লিনিকে ডাক্তারদের অনীহা, সঙ্কট রোগীদের

দুই রুগ্‌ণ সন্তানকে নিয়ে অকূল পাথারে পড়েছেন অভিভাবকেরা। বছরের পর বছর তাদের রোগ সারে না। আর সারানোর জন্য যাঁদের সচেষ্ট হওয়ার কথা, মুখ ফিরিয়ে থাকেন তাঁরাও। ফলে দু’জনেরই ভবিষ্যত্‌ পুরোপুরি অনিশ্চিত। এক সন্তান পিজি পলিক্লিনিক, আর অপরটি বিআইএন পলিক্লিনিক। কোথাও অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতেই কেটে যাচ্ছে দীর্ঘদিন, কোথাও আবার নির্ধারিত দিনেও দেখা মিলছে না চিকিত্‌সকদের। দু’জায়গার কর্তৃপক্ষই মানছেন, পলিক্লিনিকে আসা চিকিত্‌সকদের ‘ফি’ না বাড়ানোর বিষয়টিই মূলত এর জন্য দায়ী।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০৬
Share:

দুই রুগ্‌ণ সন্তানকে নিয়ে অকূল পাথারে পড়েছেন অভিভাবকেরা। বছরের পর বছর তাদের রোগ সারে না। আর সারানোর জন্য যাঁদের সচেষ্ট হওয়ার কথা, মুখ ফিরিয়ে থাকেন তাঁরাও। ফলে দু’জনেরই ভবিষ্যত্‌ পুরোপুরি অনিশ্চিত। এক সন্তান পিজি পলিক্লিনিক, আর অপরটি বিআইএন পলিক্লিনিক। কোথাও অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতেই কেটে যাচ্ছে দীর্ঘদিন, কোথাও আবার নির্ধারিত দিনেও দেখা মিলছে না চিকিত্‌সকদের। দু’জায়গার কর্তৃপক্ষই মানছেন, পলিক্লিনিকে আসা চিকিত্‌সকদের ‘ফি’ না বাড়ানোর বিষয়টিই মূলত এর জন্য দায়ী।

Advertisement

কম ভিড়ে ‘বড় ডাক্তারবাবু’দের কাছে দেখানোর যে সুযোগ সাধারণ মানুষকে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে ওই পলিক্লিনিক দু’টি চালু হয়েছিল, তা আজ পুরোপুরি ব্যথর্। এসএসকেএম এবং বিআইএন কর্তৃপক্ষই জানিয়েছেন, কবে এই পরিস্থিতির বদল ঘটতে পারে বা আদৌ বদলাবে কি না সে সম্পর্কে তাঁরা নিজেরাও অন্ধকারে। তবে এ ব্যাপারে সরকারি নীতির পরিবর্তনটাই যে এখন সব চেয়ে জরুরি, তা মেনে নিয়েছেন দু’তরফই।

কোন নীতি? পলিক্লিনিকে ডাক্তারদের ভিজিট ১০০ টাকা। এর মধ্যে ৫০ টাকা যায় সরকারের কোষাগারে। আর বাকি ৫০ টাকা সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের ভাগে, কর বাদ দিয়ে যে অঙ্কটা পড়ে থাকে, সেটাই তাঁর রোগীপিছু ফি। যেখানে সব কিছুরই মূল্য দ্রুত বাড়ছে, সেখানে এক জন দক্ষ, নামী চিকিত্‌সকের ফি কেন বাড়বে না সেই প্রশ্ন স্বাস্থ্যকর্তারা কেউ তোলেননি। ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। ডাক্তারেরা পলিক্লিনিকে রোগী দেখতে অনীহা প্রকাশ করছেন। যেহেতু পলিক্লিনিকে বসাটা বাধ্যতামূলক নয়, তাই এঁদের কাউকেই বাধ্য করা যাচ্ছে না। বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

Advertisement

পলিক্লিনিকের কর্মীরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীরা এসে জানান, কিছুটা বেশি খরচ করতে তাঁদের আপত্তি নেই। কিন্তু তাঁরা পরিষেবাটা চান। এক কর্মীর কথায়, “বাসের ভাড়া না বাড়ানোয় বাসের সংখ্যা কমছে আর রিসোলিং করা টায়ার দিয়ে বাস চালানো হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেশি। তাঁরা কিন্তু সামান্য বেশি ভাড়া দিতে আপত্তি করবেন না। এ ক্ষেত্রেও ঠিক তাই।”

বিআইএন-এ বহু ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে সাত থেকে আট মাস লাগছে। তত দিনে রোগ আরও বাড়ছে। শুধু তা-ই নয়, বহু ক্ষেত্রে দীর্ঘ অপেক্ষার পর নির্ধারিত দিনে রোগী এসে জানতে পারছেন, ওই ডাক্তারবাবু সে দিন আসতে পারবেন না। ফলে ভোগান্তিই সার। বিআইএন অর্থাত্‌ বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি রাজ্যের সরকারি পরিকাঠামোয় স্নায়ুর পূর্ণাঙ্গ চিকিত্‌সার একমাত্র প্রতিষ্ঠান। এমনিতেই সেখানে রোগীর ভিড় উপচে পড়ে। রোগীরা চাইলে আউটডোরের ভিড় এড়িয়ে সামান্য বেশি খরচে পলিক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতে এলে একদিকে যেমন তাঁদের সুবিধা, তেমনই অন্য দিকে সরকারের আয়ও বাড়বে। গোড়ার দিকে এই প্রকল্প ভালই চলেছিল। কিন্তু ক্রমে তা ধাক্কা খেতে শুরু করে। পিজি পলিক্লিনিক এখন খাঁ খাঁ করে। প্রায় একই অবস্থা বিআইএন-এও। সপ্তাহের অধিকাংশ দিনই কেউ বসেন না।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিকিত্‌সক সুব্রত মৈত্রের নেতৃত্বে স্বাস্থ্যে যে উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শদাতা কমিটি তৈরি করেছিলেন, সেই কমিটি স্বাস্থ্য দফতরকে পলিক্লিনিকে ডাক্তারদের ভিজিট বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। এসএসকেএম তথা ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘আমরাও সুপারিশ জমা দিয়েছি। আমাদের প্রস্তাব, প্রোফেসরদের জন্য ৪০০ টাকা, অ্যাসোসিয়েট প্রোফেসরদের জন্য ৩০০ টাকা ফি করা হোক। এখনও এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত আমাদের জানানো হয়নি।”

ফি সংক্রান্ত এমন নীতির আবার অন্য রকম মাসুল গুনছে এসএসকেএমেরই নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগ। ফিজিসিস্ট না মেলায় সেখানে স্রেফ পড়ে নষ্ট হচ্ছে কয়েক কোটি টাকার যন্ত্র। কারণ, ডাক্তারদের তুলনায় ফিজিসিস্টের বেতন বেশি হতে পারবে না, সেই নীতিতেই আটকে যাচ্ছে নিয়োগ।

সত্যিই কি এ সব নিয়ে কিছু ভাবছে না স্বাস্থ্য দফতর? এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “যেখানে জনমুখী নীতির জন্য ধাপে ধাপে পেয়িং বেড তুলে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে হঠাত্‌ করে সরকারি কোনও পরিষেবার মূল্য এত গুণ বাড়িয়ে দেওয়াটা খুব বড় পদক্ষেপ। সেটা করতে উপর মহল থেকেই সায় মিলছে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন