হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রোগীদের।—নিজস্ব চিত্র।
চিকিত্সার গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠল কালনা মহকুমা হাসপাতালে। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার। এই বিষয়ে কালনা থানা ও মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে রোগীর পরিবার।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম উদয়চাঁদ মণ্ডল (৬০)। এ দিন সকালে তিনি বুকে প্রবল ব্যাথা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। হাসপাতালে ভর্তির পরে তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হয়। রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, সেই সময় সামনে কোনও চিকিত্সক না থাকায় তাঁরা কতর্ব্যরত নার্সদের কাছে যান। কিন্তু নার্সরা টেলিফোন করেও কোনও চিকিত্সককে ধরতে পারেননি। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরে একজন মেডিক্যাল অফিসারের দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু তিনিও ওয়ার্ডে গিয়ে রোগী দেখতে গড়িমসি করেন বলে অভিযোগ। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ মারা যান উদয়বাবু। বিকেলে মৃতের মেয়ে শ্রাবনী সেন হাসপাতাল ও পুলিশের কাছে চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেন।
হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র গড়াই বলেন, “অভিযোগপত্র এখনও হাতে পাইনি। দেখে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।” মৃতের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, দীঘদিন ধরেই উদয়বাবু হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন। এ দিন সকালে তাঁর আচমকা শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বেলা দশটা নাগাদ তাঁকে মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উদয়বাবুর মেয়ে শ্রাবণীদেবীর বন্ধু সন্দীপ প্রামাণিকের অভিযোগ, এ দিন হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক ছিলেন না। অনেক কষ্টে বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ এক মেডিক্যাল অফিসারকে জোর করে রোগীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি।
এ দিন বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গিয়েছে, হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হওয়া অনেকেই প্রয়োজনীয় চিকিত্সা না পেয়ে জেলার অন্য হাসপাতালে চলে যাচ্ছেন। যে রোগীরা বাধ্য হয়ে হাসপাতালেই থাকছেন তাঁরাও পরিষেবা নিয়ে বিরক্ত। কালনা শহরের বাসিন্দা অমর কুমার রেজ তাঁর ক্যানসার আক্রান্ত মাকে রবিবার এই হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, মায়ের শরীরে দু’বোতল রক্তের প্রয়োজন। অথচ সেটা দেওয়ার জন্যও সারা দিন কোনও চিকিত্সকের দেখা মেলেনি। রবিবার নিজের বাড়িতেই অগ্নিদগ্ধ হয় নান্দাই গাবতলা এলাকার পাঁচ বছরের এক শিশু। তার বাবা শ্রীকান্ত হাঁসদার অভিযোগ, অবস্থা গুরুতর হলেও সারা দিন এক জন চিকিত্সকও তাঁর ছেলেকে দেখেননি।
কেন এই অবস্থা? হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনার এই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে দু’জন চিকিত্সক ছিলেন। মাসখানেক আগে তাঁদের মধ্যে একজন চিকিত্সককে স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে বদলি করা হয়। অন্য চিকিত্সক বর্তমানে ‘অসুস্থ’ থাকায় ছুটিতে রয়েছেন। ফলে মহকুমা হাসপাতালের মেডিসিনের মতো বিভাগ বর্তমানে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকহীন। হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র গড়াই জানান, মেডিসিন বিভাগের একমাত্র চিকিত্সক ছুটিতে যাওয়ার পরেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে বিভাগটি চলছে হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার-সহ কয়েক জন চিকিত্সককে নিয়ে। সমস্যার কথা জানানো হয়েছে ঊর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষকে। সমস্যার কথা স্বীকার করে কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ বলেন, “পরিস্থিতি বদলানোর চেষ্টা চলছে।” কালনার বিধায়ক বিশ্বজিত্ কুণ্ডুর ক্ষোভ, “স্বাস্থ্য দফতর আচমকা চিকিত্সক তুলে নেওয়ার ফলেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব