প্র: এমনিতে কিছু নেই, একটু কিছু সমস্যা হল, শেষমেশ বেরোল ক্যানসার। তার ওপর আবার অনেকগুলো স্টেজ গড়িয়ে গেছে। এমনটা আকছার হচ্ছে।
উ: বেশির ভাগ ক্যানসারের লক্ষণ থাকে। সমস্যা হল, প্রথম দিকে অনেকেই সেগুলোকে পাত্তা দিতে চান না। অনেকের ধারণা থাকে খারাপ জিনিস অন্য লোকের হবে, আমার হবে না। সেখান থেকেই মুশকিলটা শুরু হয়।
প্র: নানা ধরনের ক্যানসারের নানা লক্ষণ। কী করে বুঝব যে সেটা ক্যানসারেরই লক্ষণ?
উ: নির্দিষ্ট কয়েকটি লক্ষণ আছে। মূলত সেগুলিই খেয়াল রাখতে হবে। তা হলে অনেক ধরনের ক্যানসার প্রথম অবস্থায় ধরা পড়ে।
প্র: কী রকম?
উ: ব্রেস্ট ক্যানসারের কথাই ধরুন। একটু বয়সকালে মেয়েদের মধ্যে খুব বেশি দেখা যায়। ব্রেস্টে কোনও ব্যথাহীন লাম্প বা মাংসপিণ্ড তৈরি হলে সাবধান হতে হবে। মাসে এক বার নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করলেই ব্যাপারটা বেশির ভাগ সময় ধরা যায়। মুশকিল হয় কী, অনেকে ব্যাপারটা টের পেয়েও চেপে যান। তার পর যখন আসেন, তখন অনেকগুলি স্টেজ হয়তো গড়িয়ে গিয়েছে।
প্র: ব্রেস্টের ক্যানসার না হয় বোঝা গেল। কিন্ত বাদবাকি ক্যানসার?
উ: শুধু ব্রেস্টই নয়, শরীরের যে কোনও জায়গায় ব্যথাহীন মাংসপিণ্ড তৈরি হল, অথচ তাতে কোনও অসুবিধে না হলেই সতর্ক হতে হবে।
প্র: তার মানেই ক্যানসার?
উ: না না। ব্যথাহীন মাংসপিণ্ড মানেই ক্যানসার নয়। তবে হওয়ার একটা আশঙ্কা থাকে। তাই এ রকম কিছু বুঝলেই দেরি না করে ডাক্তার দেখিয়ে নিতে হবে। তাতে আপনিও নিশ্চিন্ত হবেন।
প্র: কিন্তু এ সব ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে আসতেই তো ভয় লাগে। কী না কী বেরোবে...
উ: সত্যিই যদি ক্যানসার হয়, তবে প্রথম অবস্থায় ধরা পড়লে বেশির ভাগ ক্যানসারই চিকিৎসায় ভাল হয়ে যায়। দেরি করে এলে তো অনেকগুলো স্টেজও গড়িয়ে যায়। তখন চিকিৎসাটা একটু সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। আর ক্যানসারের উপসর্গ কিন্তু আরও অনেক ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রেও হতে পারে। শুধু শুধু দেরি করে আসার কোনও মানেই হয় না।
প্র: আর কী কী উপসর্গ দেখলে সতর্ক হতে হবে?
উ: ধরুন শরীরের কোথাও আঁচিল, টিউমার হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করল। বা তার থেকে ব্লিডিং হতে শুরু করল। শরীরের যে কোনও জায়গা থেকে অস্বাভাবিক ব্লিডিং হলে সতর্ক হতে হবে। কোথাও ঘা হল, সেটা কিছুতেই সারছে না। সেটাও দেখিয়ে নিতে হবে।
প্র: ঘা সারতে দেরি হয়, এ রকম তো অনেক সময়ই হয়ে থাকে?
উ: হ্যাঁ। ঘা যদি তিন সপ্তাহের বেশি না সারে, তবে ডাক্তার দেখিয়ে নেবেন।
প্র: ওজন কমলেও শুনেছি সেটা ক্যানসারের লক্ষণ?
উ: হতে পারে। ৩ থেকে ৬ মাসে যদি ১০-১৫% ওজন কমে যায় তবে সেটা দেখিয়ে নেওয়া দরকার। আবার উল্টোটাও হয়। ধরুন কারও হঠাৎ করে ভুঁড়ি বাড়তে শুরু করল। সে ক্ষেত্রেও ডাক্তার দেখানো দরকার।
প্র: আর কিছু?
উ: দীর্ঘ দিন বদহজম, ওপর পেটে ব্যথা, অ্যাসিডিটি চলছে। অম্বল কমানোর ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন। খেলে পড়ে একটু কমে আবার যে কে সেই। কথায় কথায় মুখ টক হয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে এন্ডোস্কোপি, সোনোগ্রাফি করে দেখে নিতে হবে। আবার ধরুন, কারও কনস্টিপেশনের অভ্যাস। সেখানে হঠাৎ করে দেখলেন কনস্টিপেশন-এর বদলে লুজ মোশন হতে শুরু করল। ঘন ঘন ডায়েরিয়া হচ্ছে। স্টুলের সঙ্গে ব্লিডিং হচ্ছে। নিজে নিজেই ভেবে বসবেন না যে পাইলস হয়েছে। সে ক্ষেত্রে একটা কোলোনোস্কপি করে দেখা দরকার। কারণ পাইলস আর ক্যানসারের লক্ষণ প্রায় একই রকম।
প্র: কিছু ক্যানসার তো বিশেষ করে বয়স্কদের হয়। ওঁদের ক্ষেত্রে কি আলাদা করে কিছু নজর করা দরকার?
উ: যেগুলো বললাম, সেগুলো বয়স্কদের ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখবেন। তবে ওঁদের ক্ষেত্রে গলার আওয়াজ বদলে গেলে সতর্ক হতে হবে। গলার ক্যানসারের পূর্ব লক্ষণ হতে পারে।
প্র: আর বাচ্চাদের?
উ: বাচ্চাদের ঘুসঘুসে জ্বর হচ্ছে, সেই জ্বর না সারলে সতর্কতা প্রয়োজন।
প্র: ক্যানসার এড়াতে কী কী করতে হবে?
উ: ধূমপান একেবারেই চলবে না। অ্যালকোহল খাবেন না। খুব বেশি স্মোকড বা গ্রিল করা খাবার বা কাবাব জাতীয় খাবেন না। রেডমিট কম খাবেন। আর বাড়িতে কারও ক্যানসার হলে একটু বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বছরে এক বার স্ক্রিনিং করতে হবে, কোনও সমস্যা না থাকলেও। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, ক্যানসার কিন্তু কোনও ভাবেই ছোঁয়াচে নয়।
খেয়াল রাখুন
১) শরীরে কোথাও ব্যথাহীন মাংসপিণ্ড রয়েছে কি না।
২) অনেক দিন রয়ে গিয়েছে কোনও ঘা।
৩) পুরনো আঁচিল, টিউমার হঠাৎ বাড়তে শুরু করল। বা তার থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকল।
৪) যে কোনও জায়গা থেকে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হচ্ছে কি না।
৫) দীর্ঘ দিন বদহজমে ভুগছেন। ওষুধ খেয়েও সারছে না।
৬) কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বহু দিন। সেখানে হঠাৎ করে লুজ মোশন হতে শুরু করল। ঘন ঘন ডায়েরিয়া হচ্ছে।
৭) তলপেটে অস্বস্তি ভাব। পিরিয়ড অনিয়মিত হল। হঠাৎ করে ভুঁড়ি বেড়ে গেল।
৮) হঠাৎ অনেকটা ওজন কমে গেল। ৩ থেকে ৬ মাসে ১০-১৫%।
৯) গলার আওয়াজ বদলাচ্ছে কি না।
১০) বাচ্চাদের দীর্ঘ দিন ধরে ঘুসঘুসে জ্বর হয়ে চলেছে।
১১) জল ছাড়া খাবার গিলতে পারছেন না।