রোগীর পরিজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং প্রেসক্রিপশন নিয়েও বিতর্ক হয়। —নিজস্ব চিত্র
এক, প্রেসক্রিপশনে ব্র্যান্ডেড ওষুধের নাম লেখা। দুই রোগীর পরিজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার। ওই দুই অভিযোগকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল চত্বরেই নজিরবিহীন বচসায় জড়ালেন চিকিৎসক এবং রাজ্যের মন্ত্রী।
মঙ্গলবার দুপুরে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালের ওই ঘটনায় অস্থি-শল্য বিভাগের চিকিৎসক মনিরুল হককে শো-কজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসপাতাল সুপার সুবোধকুমার মণ্ডল। তিনি বলেন, “এ দিন যা কিছু ঘটেছে, আমার সামনেই ঘটেছে। ওই চিকিৎসকের কাছে শীঘ্রই জবাবদিহি চাওয়া হবে।” আর এ দিনের ঘটনার যিনি অন্যতম চরিত্র, সেই রাজ্যের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ঘটনার কথা রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে জানানো হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে নলহাটির পাইকপাড়া থেকে দশ মাসের অসুস্থ নাতিকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে এসেছিলেন মিরাজ শেখ। তাঁর অভিযোগ, জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকের দুর্ব্যবহারের কারণে তিনি অসুস্থ নাতিকে ভর্তি করে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁর পুত্রবধূ সালমা বিবি বলেন, “ছেলে আমার পেটের যন্ত্রণায় ছটফট করছিল। জরুরি বিভাগে দেখানোর পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক একটি চিরকুটে ওষুধ লিখে ডায়েরিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করতে বলে দেন। শ্বশুরমশাই চিকিৎসকের লেখা ওষুধ হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকে কিনে এনে চিকিৎসকের কাছে যান।” তাঁর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ওষুধ দেখে রেগেমেগে তা ছুড়ে ফেলে দেন। কারণ জিজ্ঞাসা করলে ওই চিকিৎসক মিরাজকে অপমান করে নিরাপত্তারক্ষী ডেকে হাসপাতালের বাইরে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেন। মিরাজের দাবি, “ডাক্তারবাবুকে বলি, ‘আপনার লেখা ওষুধই তো কিনে আনলাম। আপনি এ রকম ব্যবহার কেন করছেন?’ উনি কোনও কথা না শুনে বেরিয়ে যেতে বলেন। এর পরেই ডাক্তারবাবুর সঙ্গে থাকা এক জন আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরও করে দেয়।” অপমানিত ওই ব্যক্তি তখন ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানে গিয়ে সব কথা জানান। দোকানের কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি তাঁদেরও ফিরিয়ে দেন বলে অভিযোগ।
ঘটনাচক্রে আবার এ দিনই হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন আশিসবাবু। গোটা ঘটনার কথা তাঁর কানে আসে। তিনি ওই চিকিৎসকের কাছে যান। মন্ত্রী চিকিৎসকের কাছে জানতে চান, তিনি ওই রোগীর পরিজনের সঙ্গে কেন খারাপ ব্যবহার করেছেন, কেনই বা সরকারি বিধি ভেঙে জেনেরিকের বদলে ব্রান্ডেড ওষুধ প্রেসক্রাইব করেছেন। অভিযোগ, এ কথা জিজ্ঞাসা করতেই চিকিৎসক মনিরুল হকের সঙ্গে মন্ত্রীর বচসা শুরু হয়। আশিসবাবু বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, সরকারি চিকিৎসকদের ব্র্যান্ডেড ওষুধই প্রেসক্রাইব করতে হবে। ওষুধ পেতে যাতে সমস্যা না হয়, তার জন্য হাসপাতাল চত্বরেই ন্যায্য মূল্যের দোকানও খুলে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও এক জন সরকারি চিকিৎসক, এ রকম কেন করেছেন, তা-ই ওঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম।” মন্ত্রীর দাবি, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক তার জবাব না দিয়ে তাঁর সঙ্গে বচসা শুরু করেন। তিনি (চিকিৎসক) যা করেছেন, ঠিক করেছেন বলে জানান। এমনকী, ‘যেখানে যা করার করতে পারেন’ বলেও নাকি ওই চিকিৎসক তাঁকে জোর গলায় শুনিয়ে দেন বলে আশিসবাবুর অভিযোগ।
হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মীরও দাবি, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক মেডিসিন স্লিপে জেনেরিক ওষুধ না লিখে ব্র্যান্ডেড ওষুধ লিখেছিলেন। দোকানের কর্মীরা যদিও ব্র্যান্ডেড ওষুধের বদলে সরকারি মজুত থেকে আসা ওষুধই মিরাজ শেখকে দিয়েছিলেন বলে দোকান সূত্রে জানা গিয়েছে।
অসুস্থ শিশুর পরিজনদের সঙ্গে তিনি কোনও দুর্ব্যবহারই করেননি বলে দাবি করেছেন চিকিৎসক মনিরুল হক। তিনি বলেন, “আমি ওঁদের সঙ্গে কোনও খারাপ ব্যবহার করিনি। হ্যাঁ, মন্ত্রীর সঙ্গে আমার কিছুটা কথা কাটাকাটি হয়েছে। কিন্তু, তাঁর জন্য আশিসবাবুই দায়ী। এক জন চিকিৎসককে মন্ত্রী এ ভাবে অপমান করতে পারেন না। আমি কেবল তারই প্রতিবাদ করেছি।” অন্য দিকে, প্রেসক্রিপশনে ব্র্যান্ডেড ওষুধ লেখার প্রসঙ্গে ওই চিকিৎসকের বক্তব্য, “চিকিসাশাস্ত্র মেনে এক জন চিকিৎসক হিসেবে রোগীর জন্য যা করা উচিত বলে মনে করেছি, তা-ই করেছি।” এমনকী, তিনি যে কোনও রকম শো-কজের জবাব দিতেও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।