বিশেষ নজরে এইচআইভি সংক্রমণ

ভিন্‌ রাজ্যের কেউ রোগের বাহক কিনা জানতে শিবির

কর্মসূত্রে জেলার যাঁরা ভিন্‌ রাজ্যে থাকেন, পুজো এবং ঈদ উপলক্ষে তাঁদের অনেকেই বাড়ি ফিরে আসেন। কেউ কেউ বাইরে থেকে রোগ জীবাণুও বহন করে নিয়ে আসেন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন এলাকায় শিবির করতে উদ্যোগী হল স্বাস্থ্য দফতর। পশ্চিম মেদিনীপুরে আগামী ১৩ থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত ১১টি এলাকায় এই শিবির হওয়ার কথা। রোগ নির্ণয়ে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে এইচআইভি সংক্রমণকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৪৩
Share:

কর্মসূত্রে জেলার যাঁরা ভিন্‌ রাজ্যে থাকেন, পুজো এবং ঈদ উপলক্ষে তাঁদের অনেকেই বাড়ি ফিরে আসেন। কেউ কেউ বাইরে থেকে রোগ জীবাণুও বহন করে নিয়ে আসেন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন এলাকায় শিবির করতে উদ্যোগী হল স্বাস্থ্য দফতর। পশ্চিম মেদিনীপুরে আগামী ১৩ থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত ১১টি এলাকায় এই শিবির হওয়ার কথা। রোগ নির্ণয়ে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে এইচআইভি সংক্রমণকে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “জেলার অনেকেই কাজের সূত্রে ভিন্‌ রাজ্যে থাকেন। উত্‌সব উপলক্ষে এই সময় তাঁরা বাড়ি আসেন। তাই স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের জন্য এই সময়টা বেছে নেওয়া হয়। রক্ত পরীক্ষায় কারও যদি এইচআইভি সংক্রমণ মেলে, কাউন্সেলিং করে গোপনে চিকিত্‌সারও ব্যবস্থা করা হবে।” গিরীশবাবুর কথায়, “এইচআইভি নিয়ে সচেতনতা রয়েছে। তবে সব স্তরে সচেতনতা আরও বাড়ানো দরকার।”

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, যে সব এলাকা বহু মানুষ কাজের সূত্রে বাইরে থাকেন, শিবিরের জন্য তেমনই ১১টি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৩ অক্টোবর শিবির হবে দাসপুর ২ ব্লকের জ্যোতকানুরামগড়ে। ১৪ অক্টোবর দাসপুর ২-এর নিশ্চিন্তপুর এবং খড়্গপুর ২-এর মাদপুরে। ১৫ অক্টোবর চন্দ্রকোনা ১-এর মহাবালা এবং বিনপুর ২-এর শিলদায়। ১৬ অক্টোবর বিনপুর ১ ব্লকে সিজুয়া এবং কেশপুরের আনন্দপুরে। ১৭ অক্টোবর দাসপুর ১-এর বাসুদেবপুরে। ১৮ অক্টোবর ঝাড়গ্রাম সদরের ডালকাঠিতে। ২০ অক্টোবর ঘাটালের সুলতানপুরে। এবং ২১ অক্টোবর মেদিনীপুর সদরের বেনাডিহিতে। পশ্চিম মেদিনীপুরের মধ্যে ঘাটাল মহকুমাতেই এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। দাসপুর, চন্দ্রকোনা প্রভৃতি এলাকার প্রচুর মানুষের কাজের জন্য ভিন্‌ রাজ্যে যান। এঁদের অনেকে সোনার কাজই করেন। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, “ভিন্‌ রাজ্য থেকে ফেরা মানুষেরা নানা রোগের বাহক হতে পারেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষা না হলে তা ধরা পড়বে কী করে? পরবর্তী সময় রোগ ছড়িয়ে পড়বে। আশা করি, উত্‌সব উপলক্ষে যাঁরা বাড়ি ফিরেছেন, তাঁরা শিবিরে এসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাবেন।” তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি, যে সব এলাকার মানুষেরা কাজের সূত্রে ভিন্‌ রাজ্যে যান, মাস কয়েক পর বাড়ি ফিরে আসেন, সেই সব এলাকাতেই এইচআইভি সংক্রমিতের সংখ্যা বেশি। অর্থাত্‌, কাজের খোঁজে যাঁরা ঘর ছাড়েন, তাঁদেরই কয়েকজন এইচআইভির বাহক হয়ে ফিরে আসেন।” এই স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির কর্মসূচির নোডাল অফিসার তথা জেলার উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “একজন নানা কারনে এইচআইভি সংক্রমিত হতে পারেন। শিবিরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি মানুষকে নানা রোগ সম্পর্কে সচেতনও করা হবে।”

সম্প্রতি জেলার নারায়ণগড়ে কয়েকজনের দেহে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার জীবাণু মিলেছে। মাস খানেক আগে এই এলাকার কয়েকটি গ্রামের ১৮ জন শ্রমিক এক ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে ওড়িশার কেওনঝড়ে রেল লাইন সম্প্রসারণের কাজে যান। গত ২৪ সেপ্টেম্বর তাঁরা বাড়ি ফিরে আসেন। চলতি মাসের গোড়া থেকে এঁদের মাথাব্যথা ও জ্বরের নানা উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। পরে রক্ত পরীক্ষা করে জানা যায়, কয়েকজন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, “শিবিরে বিশেষজ্ঞ চিকিত্‌সকেরা থাকবেন। ফলে, যে কোনও রোগ হলেই তা ধরা পড়বে। রোগ ধরা পড়লে তার সঠিক চিকিত্‌সাও করা যাবে।” তাঁর কথায়, “যৌনপল্লিতে যাতায়াতের কারণেও এইচআইভি সংক্রমণ হতে পারে। তাই শিবিরে যৌন রোগ সম্পর্কেও মানুষকে সচেতন করা হবে।”

Advertisement

যে সব এলাকায় শিবির হবে, সেখানে গড়ে ৩০০- ৩৫০ জন ভিন্‌ রাজ্যে থাকেন। প্রতিটি শিবিরে গড়ে ২৫০ জন করে আসতে পারেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে সব দিক খতিয়ে দেখে এঁদের মধ্যে গড়ে ১০০-১৫০ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হতে পারে। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, “আমরা দেখেছি, এমন শিবিরে ১ হাজার জনের রক্ত পরীক্ষা করা হলে ৮-১০ জনের রক্তে এইচআইভি সংক্রমণ মেলে।” তিনি বলেন, “অনেকেই সমাজের থেকে দূরে সরে যাওয়ার ভয়ে রোগটা আড়াল করার চেষ্টা করেন। এঁদের চিকিত্‌সা শুরু করা জরুরি। নতুন আক্রান্তের খোঁজ মিললে চিকিত্‌সার সব ব্যবস্থাই করা হবে। স্বাস্থ্য দফতর থেকেই সেই ব্যবস্থা করা হবে। এর ফলে, রোগটাও আর ছড়াবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন