এম সি আই-এর সিদ্ধান্ত

মেডিক্যাল ও নীলরতনে ছাত্র ভর্তি বন্ধের নির্দেশ

পরিকাঠামো ঠিক করার মুচলেকা দিয়েও আবার ডাহা ফেল করল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। শুক্রবার ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’ (এমসিআই) রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্নাতক স্তরে মোট ২০০ আসনে ছাত্র ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে। বছর পাঁচেক আগে ওই দুই মেডিক্যাল কলেজেই আসন-সংখ্যা ১৫০ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ করা হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২১
Share:

পরিকাঠামো ঠিক করার মুচলেকা দিয়েও আবার ডাহা ফেল করল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। শুক্রবার ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’ (এমসিআই) রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্নাতক স্তরে মোট ২০০ আসনে ছাত্র ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে। বছর পাঁচেক আগে ওই দুই মেডিক্যাল কলেজেই আসন-সংখ্যা ১৫০ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ করা হয়েছিল। এমসিআই জানিয়েছে, অতিরিক্ত ১০০ জন করে ছাত্র ভর্তির জন্য যে পরিকাঠামো থাকা দরকার, তা মুচলেকা দেওয়ার পরেও ওই দুই মেডিক্যাল কলেজে তৈরি করতে পারেনি রাজ্য সরকার।

Advertisement

অক্টোবর মাসে ওই দুই হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে পরিকাঠামোর বেশ কিছু ত্রুটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন এমসিআই-এর সদস্যেরা। কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি হাসপাতাল-কর্তারা। পরিকাঠামোগত সব ত্রুটি দূর করে পয়লা ডিসেম্বরের মধ্যে এমসিআই-কে জানাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, সময় মতো কোনও কাজই স্বাস্থ্য দফতর শেষ করতে পারেনি। তার পরেই ছাত্র ভর্তি আটকানোর নির্দেশ দিয়ে এ দিন চিঠি পাঠায় এমসিআই।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, চিঠিতে দুই মেডিক্যাল কলেজের নাম উল্লেখ করে শুধু লেখা রয়েছে ‘দুই হাসপাতালে ১০০ করে আসন বাড়ানো হয়েছিল, কিন্তু ওই আসনগুলিতে ছাত্র ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে।’ প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি শেষ করে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এমসিআই-কে চিঠি দিয়ে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তখন তাদের কাজ খতিয়ে দেখে যদি এমসিআই সন্তুষ্ট হয়, তা হলেই ফের ছাত্র ভর্তির অনুমোদন দেওয়া হতে পারে।

Advertisement

পরিকাঠামোর কোন কোন ত্রুটির জন্য অনুমোদন বাতিল হল? এমসিআই-এর এক শীর্ষ কর্তা জানান, ওই দুই মেডিক্যাল কলেজে ফার্মাকোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ফরেন্সিক মেডিসিনের মতো বহু বিভাগে শিক্ষক-চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। অন্তত ৬৫০ জন বসতে পারে, এমন লেকচার থিয়েটার নেই। অন্তত ৩০০ জন বসতে পারে, এমন ৬টি ক্লাসরুম দরকার। কিন্তু এনআরএস এবং মেডিক্যালে তেমন ক্লাসরুম দু’-তিনটির বেশি নেই। ছাত্র হস্টেলের অবস্থাও শোচনীয়। স্নাতক স্তরে প্রচুর ছাত্রছাত্রী হস্টেল পান না। একটি ঘরে চার-পাঁচ জন করে থাকতে হয়। ছাত্রদের যথেষ্ট সংখ্যায় খেলার মাঠ নেই, জিমন্যাসিয়াম নেই। গ্রন্থাগারে যথেষ্ট সংখ্যায় কম্পিউটার নেই, নেই মেডিক্যাল জার্নাল। এমনকী, অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং দেখেও এমসিআই সন্তুষ্ট হতে পারেনি।

তবে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাই মনে করছেন, ওই ২০০ আসন আর ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, এত বিপুল পরিমাণ নির্মাণকাজ বাকি, যা আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যে শেষ হবে না। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন যে, আগামী শিক্ষাবর্ষে রাজ্যের কোনও মেডিক্যাল কলেজই বাড়তি আসনে ছাত্র ভর্তির অনুমোদন পাবে না। আপাতত এমসিআই-এর হাতে মেডিক্যালে স্নাতক স্তরে রাজ্যের ৭৯৫ আসনের চূড়ান্ত অনুমোদনের বিষয়টি আটকে রয়েছে। সুশান্তবাবুর কথায়, “শুধু এনআরএস ও মেডিক্যালই নয়, এমসিআই এ বার রাজ্যের ৭৯৫ আসনের কোনওটাতেই ছাত্র ভর্তির অনুমতি দেবে না। রাজ্য কেন, ভারতের কোনও মেডিক্যাল কলেজেও কোনও বর্ধিত আসনের অনুমতি দেবে না। নতুন করে এমসিআই তৈরি হওয়ার পরে সেখানকার কিছু সদস্য বেশি করে কাজ দেখাতে এটা করছেন।”

সুশান্তবাবু আরও বলেন, “পরিকাঠামো সংক্রান্ত অবাস্তব দাবি করছে এমসিআই। এত বছর তাদের কিছু খারাপ মনে হয়নি। হঠাৎ করে সব খারাপ মনে হচ্ছে। এটা চলতে পারে না। তা হলে গোটা ভারতে মেডিক্যালে ভর্তি আটকে যাবে। আগামী শিক্ষাবর্ষে ভর্তি শুরু হতে এখনও সাত-আট মাস বাকি। তার মধ্যে সব দৃশ্যপট বদলে যাবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement