উত্তরকন্যা অভিযান নিয়ে কংগ্রেসের বৈঠক। নিজস্ব চিত্র।
এনসেফ্যালাইটিসে মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে আগামী ২৯ অগস্ট ‘উত্তরকন্যা অভিযান’ করবে কংগ্রেস। মৃতদের পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ওই অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন। এর আগেও এনসেফ্যালাইটিসে মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তুলেছিল কংগ্রেস। এবার উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর মিনি সচিবালয় উত্তরকন্যায় ঘেরাও অভিযান করে রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়াতে চাইছে দলের প্রদেশ নেতৃত্ব। সে কারণেই দলের কেন্দ্রীয় নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সিপি যোশী থেকে শুরু করে রাজ্যের সাংসদ মৌসম বেনজির নূর সহ দলের সিংহভাগ বিধাকদের শিলিগুড়ির সমাবেশে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস।
দলের দাবি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এনসেফ্যালাইটিসে উত্তরবঙ্গে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা সকলেই নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য ছিলেন। সে কারণে সব পরিবারকেই ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে বলে শুক্রবার শিলিগুড়িতে কংগ্রেসের প্রদেশ নেতারা জানিয়েছেন। ওই সমাবেশে শিলিগুড়ি সহ অন্য জেলা থেকেও কর্মীদের আনা হবে বলে প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ দিন শুক্রবার আগামী ২৯ অগস্টের সমাবেশের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে শিলিগুড়িতে এসেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী। দলের জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। হিলকার্ট রোডে দলের কার্যালয়ে বিধান ভবনে এ দিন একটি কর্মিসভাও হয়েছে। কেন ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে, তাও ব্যাখ্যা করেছেন মনোজবাবু। তাঁর দাবি, চোলাই মদ খেয়ে মৃতদের পরিবার পিছু রাজ্য সরকার ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। রাজ্য সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে ভুগে মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ বেশি হওয়া উচিত বলেই তিনি দাবি করেছেন। মনোজবাবুর কথায়, “রাজ্য সরকারের ব্যর্থতাতেই এত মানুষ এনসেফ্যালাইটিসে মারা গিয়েছেন। সে কারণে অন্তত চোলাই মদের ঘটনার দ্বিগুণের বেশি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আমাদের দাবি এই ক্ষতিপূরণের অঙ্ক অন্তত ৫ লক্ষ হওয়া উচিত।”
উত্তরবঙ্গে রোগের প্রকোপ শুরু হওয়া নিয়ে প্রথমে কিছু জানানো হয়নি বলে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন। সে প্রসঙ্গ উল্লেখ্য করে মনোজবাবুর দাবি, “স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে যদি আধিকারিকরা রোগের প্রকোপের কথা না জানান। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ মুখ্যমন্ত্রীর ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। আমরা সেই দাবি করেছিলাম। অথচ মুখ্যমন্ত্রী রোগ রুখতে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টে স্বাস্থ্য কর্তাদের সাসপেন্ড করতে শুরু করলেন। এর প্রতিবাদও উত্তরকন্যা অভিযানে জানানো হবে।” নিজেদের মুখ রক্ষা করতে এনসেফ্যালাইটিস মৃত্যু নিয়ে রাজ্য সরকার আদালতেও বিভ্রান্তিমুলক তথ্য দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ এবং পুরসভাতেও প্রশাসক বসিয়ে ক্ষমতা ‘কুক্ষিগত’ করার অভিযোগ তুলেছেন মনোজবাবু। তাঁর কথায়, “স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে প্রশাসন সব বিষয়েই রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে উত্তরকন্যা অভিযান হবে।” পুরসভা এবং মহকুমা পরিষদে প্রশাসক বসানো সম্পর্কে জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার কটাক্ষ করে বলেন, “প্রশাসক বসিয়ে স্থানীয় মন্ত্রী নিজের হাতেই সব ক্ষমতা রাখতে চাইছেন। সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক ক্ষমতা কেড়ে এ ভাবে পেছন দরজা দিয়ে ক্ষমতায় বসার প্রতিবাদে উত্তরকন্যা অভিযানের পরেও ধারাবাহিক আন্দোলন চলবে।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এ দিন কংগ্রেসের অভিযোগ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে দাবি করেছেন, কংগ্রেস উত্তরবঙ্গে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। তাই বিভিন্ন দাবি অভিযোগ খুঁজে চলছে। গৌতমবাবু জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই এনফেল্যাইটিস নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে। রোগীদের নিখরচায় চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছে রাজ্য সরকার। গৌতমবাবু বলেন, “মৃত্যু নিয়ে যারা রাজনীতি করে, তাদের বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। রাজ্য সরকার আক্রান্তদের পরিবারের পাশে রয়েছে। তাঁদের সবরকম সহায়তা করা হবে।” পুরসভা প্রসঙ্গে গৌতমবাবুর পাল্টা কটাক্ষ, “শিলিগুড়ি পুরসভায় সুযোগ পেয়েও কংগ্রেস চালাতে পারেনি। ওরাই পেছন দরজা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। এখন মানুষদের ভুল বোঝাতে চাইছে।”