লিচু-কাণ্ড

মালদহে আরও একটি শিশুর মৃত্যু, তদন্ত শুরু

কীটনাশক ছড়ানো লিচু খেয়ে মালদহের কালিয়াচকের ৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে কারও দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। শনিবার রাতে এই এলাকার আরও একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মালদহে ৪৮ ঘণ্টায় ১০ শিশুর মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে রবিবার তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষজ্ঞ দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৪ ০২:৫২
Share:

কীটনাশক ছড়ানো লিচু খেয়ে মালদহের কালিয়াচকের ৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে কারও দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। শনিবার রাতে এই এলাকার আরও একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

মালদহে ৪৮ ঘণ্টায় ১০ শিশুর মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে রবিবার তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষজ্ঞ দল। শনিবার রাতেই স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ভাইরোলজিস্ট ভাস্বতী বন্দোপাধ্যায়, মেহেবুবা রহমানের নেতৃত্বে চার জনের একটি প্রতিনিধি দল মালদহে পৌঁছন। তার আগে রাজ্যে স্বাস্থ্য দফতরের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা দীপঙ্কর মাঝির নেতৃত্বে একটি দলও মালদহে আসেন। বিস্তারিত পরীক্ষানিরীক্ষার আগে শিশু মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিশেষজ্ঞদল কিছু জানাতে চাননি। তবে লিচুর কীটনাশককে যে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে, তা এ দিন জানানো হয়েছে। যদিও শিশু মৃত্যুর জন্য লিচুর কীটনাশককে দায়ী করায় ক্ষুব্ধ কৃষক এবং লিচু ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বক্তব্য, লিচুর কীটনাশক থেকে যদি সংক্রমণ ছড়াত, তবে মৃত্যুর হার আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। প্রতিদিনই বাগান থেকে প্রচুর পরিমাণে লিচু পাড়া হচ্ছে। শিশু, বয়স্ক নির্বিশেষে সকলেই সেই লিচু খেয়ে সুস্থ রয়েছেন বলে তাঁদের দাবি। লিচুর কীটনাশকের নমুনা এখনও সংগ্রহ করা হয়নি। তার আগেই কী ভাবে কীটনাশককে দায়ী করা হল, সে প্রশ্ন তুলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।

বিশেষজ্ঞ ভাস্বতী বন্দোপাধ্যায় জানান, ৫ বছরের নীচের বেশ কয়েকটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত শিশুদের রক্ত, মল, সিরাম, মুখের সোয়াব ও শিরদাঁড়ার রসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সঠিক কারণ এখনই বলা সম্ভব নয়। নমুনা পরীক্ষার পরে তা বলা সম্ভব হবে। তবে লিচু সন্দেহের মধ্যে রয়েছে।” অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা দীপঙ্করবাবুও বলেন, “পরিবেশ থেকে এই বিষক্রিয়া হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত বছর বিহারের মুজফ্ফরপুর ও রায়গঞ্জে ঠিক এক ধরণের লক্ষণ নিয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। কেন শিশু মৃত্যু হয়েছে তা এখনও অজানা।”

Advertisement

কিন্তু শিশুগুলির দেহের ময়নাতদন্ত কেন করা হয়নি? মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার মহম্মদ আব্দুর রশিদের বক্তব্য, “ওই শিশুদের মৃত্যু নিয়ে এ দিন স্বাস্থ্য দফতর, ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়। তবে সেখানে ওই শিশুদের দেহের ময়নাতদন্ত করানোর কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই আমরাও দেহগুলি আত্মীয়স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি।” ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ভাস্বতীদেবী অবশ্য জানান, প্রয়োজন হলে ময়নাতদন্ত করা হবে। রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী মালদহেরই বিধায়ক। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানও তিনি। তাঁর বক্তব্য, “ময়নাতদন্ত করতে গেলে শিশুগুলির আত্মীয়স্বজনদের অনুমতি নিতে হবে। এ ব্যাপারে কী করা যায়, তা আমরা ভেবে দেখছি।”

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ দিন কালিয়াচকের জালালপুর এলাকায় মৃত ও আক্রান্ত শিশুদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। ওই গ্রামে পৌঁছে এ দিনও গাছের নীচে পড়ে থাকা লিচু না ধুয়েই শিশুদের খেতে দেখে তাঁরা চমকে ওঠেন। তবে বাগানে উপস্থিত ব্যবসায়ী জিয়াউল শেখ বলেন, “কয়েকদিন ধরেই তো আমরা লিচু পাড়ছি। যাঁরা লিচু পাড়ছেন তাঁরা অন্তত ৫০-৬০টি করে লিচু খাচ্ছেন। এলাকার শিশুরাও বাগানে এসে লিচু খাচ্ছে। তাদের তো কিছু হয়নি।” ব্যবসায়ী সরিদুল হাসান বলেন, “খামোখা গুজব ছড়ানোয় ব্যবসা মার খাচ্ছে।” তা ছাড়া, ঘটনার পরে দু’দিন কেটে গেলেও লিচুতে যে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দফতরের উপ অধিকর্তা প্রিয়রঞ্জন সানিগ্রাহি অবশ্য বলেন, “কী ধরনের রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়েছে তা জানতে সোমবার থেকে স্বাস্থ্য দফতরের চিহ্নিত করা বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করা হবে।”

আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার সব খরচ সরকার বহন করবে বলে মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু ঘোষণা করলেও, তা বাস্তবে মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ দিন মন্ত্রী ও বিশেষজ্ঞদের শিশু বিভাগে পরিদর্শনের সময়ই কালিয়াচকের উধুয়া গ্রামের আসমিনা বিবি অভিযোগ করেন, ৮৮০ টাকা দিয়ে বাইরের নার্সিংহোম থেকে তিন বছরের শিশুর রক্ত পরীক্ষা করিয়েছেন তিনি। যদিও, মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার আব্দুর রশিদ বলেন, “অনেক পরীক্ষা হাসপাতালে হয় না। যে রোগীর পরিবার বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষা করিয়েছে, তাদের পুরো টাকা দিয়ে দেওয়া হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement