মফস্সল এড়াতে উচ্চতর ডিগ্রিতেই অনীহা ডাক্তারদের

সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ধরে রাখতে ‘বন্ড’ দেওয়ার শর্ত আরও কড়া করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। সেই বজ্র আঁটুনিরই এখন ফস্কা গেরোর হাল! স্বাস্থ্য ভবনের খবর, মেডিক্যালে এমসিএইচ, ডিএম-এর মতো ‘পোস্ট ডক্টরাল’ পড়ার জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেও বহু চিকিৎসক কাউন্সেলিংয়ে হাজির হননি।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫০
Share:

সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ধরে রাখতে ‘বন্ড’ দেওয়ার শর্ত আরও কড়া করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। সেই বজ্র আঁটুনিরই এখন ফস্কা গেরোর হাল!

Advertisement

স্বাস্থ্য ভবনের খবর, মেডিক্যালে এমসিএইচ, ডিএম-এর মতো ‘পোস্ট ডক্টরাল’ পড়ার জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেও বহু চিকিৎসক কাউন্সেলিংয়ে হাজির হননি।

কেন? স্বাস্থ্য কর্তারা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, এ বছর বন্ড দেওয়ার শর্ত আরও আঁটোসাঁটো করায় অধিকাংশই ‘পোস্ট ডক্টরাল’ কোর্সে পড়তে রাজি হচ্ছেন না।

Advertisement

ঘটনার আকস্মিকতায় রীতিমতো হতাশ স্বাস্থ্য কর্তারা। রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘সরকারি টাকায় উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরি নিয়ে চলে যাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৈরির জন্য সরকার এই বিপুল টাকা খরচ করবে কেন? এটা আটকাতেই বন্ডের নিয়ম কিছুটা শক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ ডাক্তার প্রবেশিকা পরীক্ষায় উতরে গিয়েও পড়তে আসতে চাইছেন না।’’

স্বাস্থ্য দফতরের এক মুখপাত্র জানান, এত দিন সরকারি হাসপাতাল থেকে ‘পোস্ট ডক্টরাল’ ডিগ্রি প্রাপকদের ক্ষেত্রে এক বছর জেলায় গিয়ে পরিষেবা দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। কেউ সেটা না-মানলে তাঁকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হতো। চলতি বছরে এই নিয়ম আরও কঠোর করে বলা হয়েছে, পোস্ট ডক্টরাল পাশ করার পর বাধ্যতামূলক ভাবে তিন বছর জেলার গিয়ে কাজ করতে হবে। অন্যথায় তাঁদের ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সরকারকে। অর্থাৎ জেলায় পরিষেবা দেওয়ার সময়সীমা এবং ক্ষতিপূরণের টাকার অঙ্ক — দুই-ই তিন গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এতেই ডিগ্রি নেওয়ার উৎসাহে পড়েছে ভাটার টান।

কিন্তু কেন নিয়মের এই কড়াকড়ি?

স্বাস্থ্য ভবনের ব্যাখ্যা— দেখা গিয়েছে এত দিন ডিগ্রি নেওয়ার পরে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা দিয়ে অনেকেই জেলায় যাওয়া এড়িয়েছেন। ফলে সমস্যা থেকে গিয়েছে। এখন জেলাগুলিতে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজনও বেশি। তাই বন্ডের নিয়ম আরও কঠোর করে চাহিদা মেটানোর কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে ফল হয়েছে উল্টো।

এ দিন রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পোস্ট ডক্টরাল’ পাঠ্যক্রমে ভর্তির জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের কাউন্সেলিং ছিল। দেখা যায়, অনেক পাঠ্যক্রমেই চোখে পড়ার মতো কম প্রার্থী উপস্থিত হয়েছেন। যেমন, পেডিয়াট্রিক সার্জারির আসন রয়েছে ১০টি, হাজির ছিলেন ১ জন। কার্ডিওথোরাসিকের ১৭টি আসনের মধ্যে ৪ জন, প্লাস্টিক সার্জারির ১৮টি আসনের ভিতর ৮ জন উপস্থিত ছিলেন। আবার, কার্ডিয়াক অ্যানেস্থেশিয়া বা ক্লিনিক্যাল ফারমাকোলজি-র মতো বিষয়ে পড়ার জন্য এক জনকেও পাওয়া যায়নি।

কাউন্সেলিংয়ে অনুপস্থিত এক ডাক্তার-প্রার্থীর কথায়, ‘‘এক বছর তবু জেলায় কাটিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু মাত্র ৩৩ হাজার টাকা স্টাইপেন্ডের জন্য জেলায় গিয়ে টানা তিন বছর সময় নষ্ট করা অর্থহীন।’’ আর এক জনের যুক্তি, ‘‘দেশে পোস্ট ডক্টরাল পড়ার অনেক জায়গা রয়েছে। তার জন্য রাজ্য সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকার কোনও দরকার নেই!’’

প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত ওই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলির জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কোথায় পাওয়া যাবে? সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই এখন মাথার চুল ছিঁড়ছেন স্বাস্থ্য কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন