খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে চলছে চিকিৎসা। নিজস্ব চিত্র।
জল দূষণ থেকে খাস রেলশহরেই এ বার ছড়াল ডায়েরিয়া। বৃহস্পতিবার সন্ধে থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত খড়্গপুরের ৭ ও ৮নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক। পেট ব্যথা, বমির উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২৩ জন। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি ৭৯ জনের মধ্যে ৬ জনকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও রেল হাসপাতাল ও দু’টি নার্সিংহোমে বেশ কয়েকজনের চিকিৎসা চলছে। সংক্রমনের কারণ খুঁজতে একযোগে চেষ্টা চালাচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভা। স্বাস্থ্য দফতরের অনুমান, এলাকায় পানীয় জল থেকেই এই সংক্রমণ। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলেন, “প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে মনে হয়েছে, এটা কলেরা। এলাকার জল কোনওভাবে দূষিত হয়েই এই রোগ ছড়িয়েছে। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছি। ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের দল পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে।”
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পুর এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বেলডাঙা, মন্দিরতলা, মাঠপাড়া এলাকা ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লালডাঙা, আদিবাসীপাড়া ও রাজগ্রাম এলাকায় বাসিন্দাদের মধ্যে ডায়েরিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়। প্রথমে কয়েক জনের বাড়িতে চিকিৎসা চলছিল। ক্রমে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার রাতেই প্রায় ৪০ জনকে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় পাঁচ জনকে।
খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে খবর, শয্যা না থাকায় আইসোলেশন বিভাগের একটি ঘরে মাটিতেই প্রাথমিক ভাবে রাখা হয়েছিল ডায়েরিয়া আক্রান্তদের। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর কল্যাণী ঘোষ বলেন, “রোগী বেশি অথচ চিকিৎসক-নার্স কম থাকায় চিকিৎসা ঠিকমতো হচ্ছিল না। তাই এলাকার মানুষের ক্ষোভ ছিল। কিন্তু রাতেই সমস্যা মিটে যায়।” হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ও মানছেন, “হাসপাতালে কর্মীর অভাব রয়েছে। ৬ জন জেনারেল ডিউটি অফিসারের সকলকে তো একসঙ্গে এক জায়গায় দেওয়া যাবে না। তবে পরে দু’জনকে দেওয়া হয়েছে। একজন বিশেষজ্ঞ ও চার জন নার্স রোগীদের দেখছেন।”
শুক্রবার হাসপাতালে আসে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল। পরীক্ষার জন্য ডায়েরিয়া আক্রান্তদের মলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এলাকাও ঘুরে দেখেন স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা। এলাকায় গিয়েছিলেন কংগ্রেসের পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কর্মীরা। এলাকা থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। দুপুরে এলাকায় যান জেলা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা জলবাহিত রোগের নোডাল অফিসার রবীন্দ্রনাথ প্রধান। পরে তিনি বলেন, “জল থেকেই কোনও ভাবে সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে প্রাথমিক পরীক্ষায় পাওয়া গিয়েছে।”
কী ভাবে জল দূষণ হয়েছে তা নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। রাজগ্রাম হাসপাতালের কাছে পাইপে ফাটল থেকেই জল দূষিত হয়েছে বলে একাংশের অনুমান। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর দীপেন্দু পালের কথায়, “আমাদের র্বোড থাকাকালীন যে ভাবে জল পরিশোধন করা হত, তা এখন হচ্ছে না। তাই এই সমস্যা বলে মনে হচ্ছে।” যদিও পুরপ্রধান রবিশঙ্করবাবুর বক্তব্য, “প্রতিনিয়ত জলে ব্লিচিং দেওয়া হয়। ডায়েরিয়া ছড়ানোর পরে ৬টি এলাকায় জল পরীক্ষা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য দফতর থেকে যে রিপোর্ট পেয়েছি তাতে নলবাহিত জলে কোনও সমস্যা নেই।” তাঁর মতে, স্থানীয় দু’টি পুকুর ও কুয়োর জল থেকে সংক্রমণ ছড়িয়েছে।