শিশুমৃত্যু কমাতে ব্যবস্থা হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে

সদ্যোজাতদের মৃত্যু ঠেকাতে বর্ধমান জেলার চারটি হাসপাতাল ও ১২টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তৈরি হয়েছে ‘সিক নিওনেটাল স্টেবিলাইজিং ইউনিট’। গত ৯ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমানের উপকণ্ঠে ঝিঙ্গুটিতে জনসভা থেকে এই প্রকল্পগুলির উদ্বোধন করেন। এই ইউনিটের কাজ হল, অসুস্থ বা কম ওজনের সদ্যোজাতদের কিছুটা সুস্থ করে তার পরে বড় হাসপাতালে রেফার করা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৪ ০২:৪০
Share:

বারাবনির কেলেজোড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘সিক নিওনেটাল স্টেবিলাইজিং ইউনিট’।—নিজস্ব চিত্র।

সদ্যোজাতদের মৃত্যু ঠেকাতে বর্ধমান জেলার চারটি হাসপাতাল ও ১২টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তৈরি হয়েছে ‘সিক নিওনেটাল স্টেবিলাইজিং ইউনিট’। গত ৯ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমানের উপকণ্ঠে ঝিঙ্গুটিতে জনসভা থেকে এই প্রকল্পগুলির উদ্বোধন করেন। এই ইউনিটের কাজ হল, অসুস্থ বা কম ওজনের সদ্যোজাতদের কিছুটা সুস্থ করে তার পরে বড় হাসপাতালে রেফার করা।

Advertisement

বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণবকুমার রায় বলেন, “এই ইউনিটগুলিতে থাকছে ফোটো থেরাপি, ওয়ার্মার-সহ নানা যন্ত্রপাতি। মজুদ করা হচ্ছে দরকারি ওষুধপত্র। কোনও মা যদি ওই চারটি হাসপাতাল বা ১২টি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অসুস্থ শিশু প্রসব করেন, তাহলে এত দিন সেই শিশুকে সরাসরি চিকিৎসার জন্য বড় হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হত। তাতে যেতে-যেতেই অনেকের মৃত্যু হত। এ বার থেকে ওই অসুস্থ শিশুদের কিছুটা চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলার পরেই বড় হাসপাতালে রেফার করা হবে। তাতে শিশুমৃত্যুর হার আগের তুলনায় অন্তত কমবে এই জেলায়।”

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি ইউনিট গড়ার জন্য লেগেছে পাঁচ লক্ষ টাকা। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, “হাসপাতাল বা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে কিছুটা করে জায়গা, কোথাও আগে থেকে থাকা একটি ঘরকে বেছে নিয়ে সেখানেই তৈরি হয়েছে ওই ইউনিটগুলি। এতে ওই এলাকার প্রচুর মানুষ উপকৃত হবেন। তুলনায় সুস্থ শিশুদের পেয়ে বড় হাসপাতালও তাদের একেবারে সুস্থ করে তুলতে পারবে। ব্লক বা গ্রামীণ এলাকায় থাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি অসুস্থ শিশুদের শুধু রেফারই করেএই বদনাম অন্তত ঘুচবে।”

Advertisement

বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকায় কালনা বা কাটোয়া হাসপাতালেও এখনও সিক নিউনেটাল কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ) হয়নি। ওই দুই হাসপাতালে প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা করে খরচে যে দু’টি এসএনসিইউ তৈরি হবে, গত ৯ জুলাই তারও শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ইউনিট দু’টি স্থপিত হলে কালনায় ৫৮,১৩৮ জন ও কাটোয়ায় ৭৯,৭৫৪ জন উপকৃত হবেন বলে ওই অনুষ্ঠানে জানানো হয়। তার আগে অসুস্থ সদ্যোজাতদের চিকিৎসার জন্য ওই দুই হাসপাতালেও চালু করা হল সিক নিওনেটাল স্টেবিলাইজিং ইউনিট। পাশাপাশি, ওই ইউনিট তৈরি হয়েছে মেমারি ও ভাতার গ্রামীণ হাসপাতালে। যে ১২টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই ইউনিট হয়েছে, তার চারটি জেলার শিল্পাঞ্চল ও আটটি গ্রামীণ এলাকায়।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৪-এর মার্চ পর্যন্ত জেলায় প্রায় ১ লক্ষ ৪২ হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে। তার মধ্যে ৬৮ হাজার ১৩৮টি শিশু জন্মেছে সরকারি হাসপাতালে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, জেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে বছরে গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার শিশুর জন্ম হয়ে থাকে। ফলে, স্বাস্থ্যকন্দ্রেগুলিতে জন্ম নেওয়া অসুস্থ শিশুদের চাপ সরকারি হাসপাতালে পড়ছে। তাদের কিছুটা সুস্থ করে সেখানে পাঠানো মানে শিশুমৃত্যুর হার কমানো। জেলায় প্রতি হাজার সদ্যোজাতের মধ্যে মৃত্যু হয় ২৯টির। প্রণববাবুর দাবি, রাজ্যের ক্ষেত্রে এই হার ৩১। জেলায় শিশুমৃত্যু যাতে আরও কমানো যায়, সে জন্য এই সিক নিউনেটাল স্টেবিলাইজিং ইউনিট উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে বলে তাঁদের বিশ্বাস।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সূত্রে জানানো হয়েছে, এই হাসপাতালে প্রতি দিনই ২-৩টি অসুস্থ শিশুর মৃত্যু হয়ে থাকে। এই সংখ্যা ৫ বা তার বেশি হলে সরকারকে জানানোর নিয়ম। সে ক্ষেত্রে ওই শিশুদের মৃত্যু নিয়ে মেড্যিকাল অডিট করা হয়ে থাকে। ওই অডিটে বারবারই মিলছে যে, বেশি অসুস্থ শিশুদের শেষ সময়ে এখানে আনার জেরেই তুলনায় বেশি শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষের কথায়, “রাজ্যের সমস্ত ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তত ওই সিক নিওনেটাল স্টেবিলাইজিং ইউনিট থাকলে আমাদের এখানেও শিশুমৃত্যুর সংখ্যা অনেকটা কমে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন