উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল

সাত দিনে মৃত তেরো নবজাতক

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সদ্যোজাতদের বিশেষ বিভাগে (এসএনসিইউ) গত সাত দিনে মারা গেল ১৩টি শিশু। তাদের পাঁচজনের মৃত্যুর কারণ রক্তে সংক্রমণ (সেপ্টিসিমিয়া)। এসএনসিইউ-র ঘরে সংক্রমণের জন্য ওই শিশুদের মৃত্যু হয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সাত দিনে ১৩টি শিশুর মৃত্যু হাসপাতালের গড় মৃত্যুহারের চাইতে বেশি, তা স্বীকার করছেন হাসপাতাল সুপার অমরেন্দ্র সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:০২
Share:

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে এসএনসিইউ-তে শিশুমৃত্যুর খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে চিকিৎসাধীন শিশুদের পরিজনদের সঙ্গে কথা বলছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সদ্যোজাতদের বিশেষ বিভাগে (এসএনসিইউ) গত সাত দিনে মারা গেল ১৩টি শিশু। তাদের পাঁচজনের মৃত্যুর কারণ রক্তে সংক্রমণ (সেপ্টিসিমিয়া)। এসএনসিইউ-র ঘরে সংক্রমণের জন্য ওই শিশুদের মৃত্যু হয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

সাত দিনে ১৩টি শিশুর মৃত্যু হাসপাতালের গড় মৃত্যুহারের চাইতে বেশি, তা স্বীকার করছেন হাসপাতাল সুপার অমরেন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, “কী কারণে মৃত্যু হচ্ছে তা তদন্ত করে দেখছি। মাসে গড়ে ২৫টি সদ্যোজাত মারা যায়। সেই তুলনায় এই ক’দিনে মৃত্যুর হার কিছুটা বেশি।” তিনি জানান, এনএনসিইউ-র ঘরগুলিতে সংক্রমণ রয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখছে মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ। শিশু বিভাগের প্রধান মৃদুলা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কলকাতায় আছি। মঙ্গলবার ফিরে বিস্তারিত খোঁজ নেব।”

রবিবার রাতে দুই শিশু মারা গেলে পরিবারের লোকজন সুপারের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়। সোমবার সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টার্চাযের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল হাসপাতালে যায়। সদ্যোজাতদের পরিবারের লোকদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা সুপারের কাছে ঘটনার তদন্ত দাবি করেন। অশোকবাবু বলেন, “কোনও সিনিয়র চিকিৎসক ২৪ ঘন্টা ওই ইউনিটে থাকেন না বলে শুনেছি।” সুপার বলেন, “চব্বিশ ঘন্টাই মেডিক্যাল অফিসার থাকার কথা। তবুও কেন অভিযোগ উঠেছে তা দেখা হবে।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেন, “অভিযোগ শুনেছি। বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।”

Advertisement

এসএনসিইউ-র দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। তিনি বলেন, “ওখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। যারা মারা গিয়েছে তাদের প্রত্যেককে অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় আনা হয়েছিল। বাঁচা মুশকিল ছিল।” সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “অল্প কিছু পরিকাঠামোগত সমস্যা ছিল। আমরা আরও মেডিক্যাল অফিসার পাঠাচ্ছি। সি-প্যাপ মেশিন, ওয়ার্মার-ও পাঠানো হয়েছে।”

হাসপাতালের সুপার জানিয়েছেন, রবিবার রাতে মৃত দুই সদ্যোজাতের ওজন ছিল ১৪০০ গ্রাম ও ১২০০ গ্রাম। বাইরে থেকে ওষুধ দেওয়া হলেও শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় সেপ্টিসিমিয়া হয়। তাদের বাঁচানো যায়নি। সেপ্টিসিমিয়াতেই বৃহস্পতিবার, শুক্রবার এবং শনিবার একটি করে সদ্যোজাত মারা গিয়েছে। বাকিদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে মস্তিষ্কে কম অক্সিজেন, কম ওজনের উল্লেখ করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রবিবার রাতে মারা যায় উমেশ শর্মা-গীতাদেবীর চার দিনের মেয়ে। উমেশবাবু বলেন, “বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন না। ঠিক চিকিৎসা হয়নি বলেই মেয়েকে হারাতে হল।” আমবাড়ির বাসিন্দা হেমন্ত রায়ের স্ত্রী অনিতা দেবী যমজ সন্তানের জন্ম দেন। রবিবার রাতে এক জনের মৃত্যু হয়। হেমন্তবাবু বলেন, “যেখানে শিশুদের রাখা হয়েছে সেখানে সংক্রমণ হচ্ছে বলে শুনছি। তা হলে কর্তৃপক্ষ তা দেখছেন না কেন?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন