স্বাস্থ্যকর্তাকে মার, পরিষেবা বন্ধই

পুলিশ পিকেট বসানোর পরেও স্বাভাবিক হল না আহিরণ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা পরিষেবা। বৃহস্পতিবার, ঘটনার দিন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, “নিরাপত্তা নেই দেখিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা বন্ধ করা যাবে না।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আহিরণ শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৪ ০২:৪২
Share:

আহিরণে প্রতিবাদ মিছিল স্বাস্থ্যকর্মীদের। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

পুলিশ পিকেট বসানোর পরেও স্বাভাবিক হল না আহিরণ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা পরিষেবা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার, ঘটনার দিন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, “নিরাপত্তা নেই দেখিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা বন্ধ করা যাবে না।” অথচ শুক্রবার জরুরি পরিষেবা ছাড়া তালা বন্ধ হয়েই পড়ে রইল সুতি ১ ব্লকের আহিরণ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বৃহস্পতিবার সকালে বছর ছয়েকের ছেলেকে নিয়ে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন এক যুবক। কলবুক পেয়েও চিকিৎসক আসতে দেরি করেছেন, এই অভিযোগে মাটিতে ফেলে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত মালাকারকে বেধড়ক মারধর করেন ওই শিশুর বাবা। এরপর থেকেই ওই স্বাস্থকেন্দ্রে কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

গোটা বিষয়টি সরজমিনে দেখতে শুক্রবার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছিলেন জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও কর্মীদের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। ঘটনার আটচল্লিশ ঘণ্টা পরেও পুলিশ অভিযুক্তকে ধরার কোনও চেষ্টাই করেনি বলে তাপসবাবুর কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চিকিৎসকেরা। আলোচনার পর ঠিক হয় হাসপাতালে এই ধরণের হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করার জন্য রাজ্য সরকার যে নির্দেশিকা জারি করেছে তা সুতির ওসির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “ইতিমধ্যেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। সেই মতো পুলিশ পিকেটও বসানো হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তকে গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশ সক্রিয় নয় বলে ক্ষোভ রয়েছে আহিরণের স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে।”

Advertisement

জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এসেছেন খবর পেয়ে এদিন সুতি ১ ব্লকের বিডিও দীপঙ্কর রায়ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছিলেন। বিডিও বলেন, ‘‘যা ঘটেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তাই বলে অনির্দিষ্টকালের জন্য এভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবাকে তো অচল করে রাখা যায় না। এতে সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ।” তিনি বলেন, “শনিবার বেলা ১১টায় ব্লক অফিসেই একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়েছে। সকলের সাহায্য নিয়ে যাতে সুষ্ঠুভাবে ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালানো যায় এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা দেওয়া যায় তা নিয়েই আলোচনা হবে ওই বৈঠকে। আশা করছি শনিবার বিকেল থেকেই আহিরণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক হবে।”

এদিকে আহিরণ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারাও। কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি রজত দাস বলেন, ‘‘শুধু বৈঠক ডাকলেই তো হবে না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামোর উন্নতি দরকার। প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি, এক্সরে-র মতো বিষয়েও নজর দেওয়া দরকার। আহিরণের অধীনে বহুতালি ও হিলোড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র দু’টি সপ্তাহে দু’-তিন দিনের বেশি খোলে না। নুরপুর, সাদিকপুর পঞ্চায়েতে কোনও মেডিক্যাল ক্যাম্প হয় না। এগুলিও যাতে ঠিক মতো হয় তা দেখা দরকার।”

তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুভাষ লালা বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা যে খুব একটা খারাপ তা কিন্তু নয়। কিন্তু চারিদিকে প্রাচীর না থাকায় হাসপাতাল চত্বরে মদের আড্ডা বসছে নিয়মিত। স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জন্য সেখানে স্থায়ী একটা পুলিশ ক্যাম্প বসালে এই সব অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়ানো যাবে।”

সিপিএমের আহিরণ লোকাল কমিটির সম্পাদক অরুণ ঘোষ বলেন, ‘‘এভাবে চিকিৎসককে মারধর কোনওভাবেই সমর্থন করা যায় না। সব দিক খতিয়ে দেখে বিষয়টি নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা দরকার।” তবে সেই সঙ্গে এই নেতারাও জানাচ্ছেন, “যেটা ঘটেছে সেটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তার প্রতিকারের জন্য যা যা করার দরকার আমরা সকলেই তার পক্ষে। কিন্তু বহির্বিভাগ-সহ অন্যান্য সমস্ত বিভাগে তালা ঝুলিয়ে এভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র অচল করে রাখা মোটেই ঠিক নয়। একজনের অন্যায়ের জন্য সকলেই কেন ভুগবেন? এটা চিকিৎসকদেরও বোঝা দরকার।”

ঘটনার প্রতিবাদে সুতির আহিরণে শুক্রবার বিকেলে পথে নেমে মৌন মিছিল করেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মীর ওই মিছিলে ছিলেন প্রহৃত ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত মালাকারও। অমিতবাবু বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শয্যা রয়েছে ৩০টি। কিন্তু দৈনিক গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ জন রোগী ভর্তি থাকেন। চিকিৎসক থাকার কথা ৬ জন। আছেন মাত্র ৩ জন। তাছাড়া নার্স, জিডিএ ও সাফাইকর্মী সবই রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তারপরেও পরিষেবা দিতে গিয়ে যদি এভাবে মার খেতে হয় তাহলে আর কী বলার থাকে বলুন?” তিনি বলেন, “৪৮ ঘণ্টা পরেও পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারল না। দু’জন সিভিক পুলিশকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠিয়ে আমাদের নিরাপত্তার নামে উপহাস করা হচ্ছে। শনিবার বিডিও’র ডাকা বৈঠকে কী হয় তা দেখার পরেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা পরিষেবা কীভাবে চালানো সম্ভব তা ভেবে দেখব।” কিন্তু এভাবে কী স্বাস্থ্যকেন্দ্র অচল রাখা যায়? কোনও সদুত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন