মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসকদের বৈঠক। —নিজস্ব চিত্র।
হাসপাতালে সিনিয়র ডাক্তাররা সময় মতো থাকেন না। ফলে, চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয় প্রায়ই। রোগীর পরিজনদের এমন অভিযোগ নতুন নয়। এ বার বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন খোদ মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি মৃগেন মাইতি। সোমবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ-হাসপাতালে পরিচালন সমিতির সঙ্গে বৈঠকে মৃগেনবাবুর হুঁশিয়ারি, “সিনিয়র ডাক্তারদের সময় মতো হাসপাতালে থাকতে হবে। কাজে ফাঁকি কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।” পরিস্থিতি দেখে বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে এক বৈঠকেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। সোমবারের বৈঠকে হাজির ছিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যালের এই দুই শীর্ষ কর্তা, ছিলেন পূর্ত-সহ অনান্য বিভাগের আধিকারিকেরাও।
মেদিনীপুরে সিনিয়র ডাক্তারদের সময় মতো না থাকার অভিযোগ নতুন নয়। এ নিয়ে একাংশ জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যেও অসন্তোষ রয়েছে। দিন কয়েক আগে মেদিনীপুর মেডিক্যাল পরিদর্শনে এসেছিল স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল। সেই দলে ছিলেন চিকিৎসক সুব্রত মৈত্রও। দলটির আসার খবর মেডিক্যালে জানানো সত্ত্বেও মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি এক্সপার্ট গ্রুপের সদস্যরা যখন আসেন, তখন সেখানে হাজির ছিলেন শুধুমাত্র একজন সহকারী-সুপার এবং একজন বিভাগীয় প্রধান। গরহাজির ছিলেন অধ্যক্ষ তমালকান্তি ঘোষ থেকে শুরু করে উপাধ্যক্ষ তথা হাসপাতাল সুপার যুগল কর, ডেপুটি সুপার বিশ্বনাথ দাস। মেদিনীপুর থেকে ফিরে গিয়ে স্বাস্থ্য ভবনে এ নিয়ে এক রিপোর্টও দিয়েছেন সুব্রতবাবুরা। এক্সপার্ট গ্রুপের সদস্যরা মনে করেন, শীর্ষ কর্তারা উপস্থিত থাকলে সমস্যার খুঁটিনাটি জানা যেত।
মেডিক্যাল কলেজের পরিচালন সমিতির আগের বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এর মধ্যে যেগুলি কার্যকরী হয়নি তার কারণ সোমবারের বৈঠকে জানতে চান বিধায়ক মৃগেনবাবু। উপস্থিত কর্তারা যুক্তি সাজিয়ে দেন। মেডিক্যালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ২৪টি শয্যার পরিবর্তে রয়েছে ৬টি শয্যা। ডায়ালিসিস ইউনিটে চারটির মধ্যে ২টি চালু রয়েছে আর ২টি খারাপ। বছর দেড়েক আগে মেডিক্যালে ‘মা ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র’র শিলান্যাস হয়। তবে কাজ বিশেষ এগোয়নি। মেদিনীপুর মেডিক্যালের মতো হাসপাতালে বার্ন ইউনিটও নেই। শয্যার অভাব তো রয়েছেই। কলেজে এক সূত্রে খবর, কখনও কর্তাদের সতর্ক করে মৃগেনবাবু বলেন, ‘টাকা তো পড়ে রয়েছে। তবু বলছেন টাকা নেই! এ সব গল্প আর কতদিন চলবে!’ আবার কখনও বলেন, “রোগীরা সমস্যায় পড়ছেন। আর আপনারা বলছেন হচ্ছে-হবে! কেন হাসপাতালে এসে রোগীর পরিবারের লোকেরা সমস্যায় পড়বেন বলতে পারেন!’
কলেজ সূত্রে খবর, সমস্যার সমাধানে শীঘ্রই আবার একটি বৈঠক ডাকার কথা রয়েছে। যেখানে বিভাগীয় প্রধানদের মুখোমুখি হবেন কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি মৃগেনবাবু। থাকবেন মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ তমালকান্তি ঘোষ, উপাধ্যক্ষ তথা হাসপাতাল সুপার যুগল কর প্রমুখ। মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ তমালকান্তি ঘোষ বলেন, “ডায়ালিসিস ইউনিটের খারাপ দু’টি শয্যা মেরামত করা হবে। বার্ন ইউনিট চালুরও চেষ্টা চলছে।” উপাধ্যক্ষ তথা হাসপাতাল সুপার যুগল কর বলেন, “সিসিইউতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হবে। কিছু টাকা এসেও গিয়েছে। পূর্ত দফতর কাজটি করছে।”
কেন আগের সিদ্ধান্ত এখনও কার্যকর হল না, কেন বৈঠকে শীর্ষ কর্তাদের সতর্ক করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হল? সদুত্তর এড়িয়ে মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেনবাবু বলেন, “আগের সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত কার্যকর হবে। পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা থাকবেই। তার মধ্যেই কাজ করতে হবে।” সিনিয়র ডাক্তারদের সময় মতো না থাকা নিয়ে কি বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করেছেন? মৃগেনবাবু বলেন, “আমার কাছে কিছু অভিযোগ আসে। যা বলার বৈঠকে বলেছি। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে কিছু বলবো না।”