হৃৎপিণ্ড বা যকৃৎ, অনেক ক্ষেত্রেই বিপত্তি ঘটায় মাত্রাছাড়া লিপিড বা চর্বি। আর রক্তে সেই লিপিডের পরিমাণ কমিয়ে হৃদরোগ ঠেকাতে এক ধরনের জিন বিশেষ ভূমিকা নেয় বলে দাবি করলেন মিশিগান ইউনিভার্সিটি এবং নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির এক দল গবেষক। এই বিষয়ে তাঁদের গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি নেচার জেনেটিকস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণার শুরু বছর ছয়েক আগে। নরওয়ের বেশ কিছু বাসিন্দার রক্তের লিপিড-মাত্রা খতিয়ে দেখেন ওই গবেষকেরা। তাঁরা জানতে পারেন, শরীরের মধ্যে নির্দিষ্ট একটি জিনের প্রভাবে ওই মানুষদের লিপিড-মাত্রা সব সময়েই স্থিতিশীল থাকে। তাতে তাঁদের হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু গবেষকেরা এত দিন ওই জিনটিকে চিহ্নিত করতে পারছিলেন না।
গবেষকদলের দুই সদস্য জোনাথন কোহেন ও হেলেন হবসের দাবি, এত দিনে তাঁরা ওই জিনটিকে চিহ্নিত করে ফেলেছেন। জিনটির নাম দেওয়া হয়েছে টিএম৬এসএফ২। ওই জিনটিই যে রক্তে লিপিড-মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, তা প্রমাণ করার জন্য ইঁদুরের শরীরে সেটি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গবেষকদের দাবি, ওই বিশেষ জিনটি ঢোকানোর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইঁদুরের রক্তে লিপিডের মাত্রা অনেকটা কমে যায়। পরবর্তী সময়ে মানবদেহে জিনটির প্রভাব পরীক্ষা করে দেখবেন ওই গবেষকেরা।
শুধু হৃৎপিণ্ড নয়, লিভার বা যকৃতের উপরেও ওই জিনের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করেন কোহেন ও হবস। তাঁদের দাবি, ওই জিন যকৃতের লিপিডের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে। অতিরিক্ত লিপিড জমে যাওয়ার ফলে যকৃতে যে-সব রোগ হয়, ওই জিন সেগুলি নিরাময়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে গবেষকদের ধারণা। তাঁরা মনে করছেন, পরবর্তী কালে জিনটিকে বিশ্লেষণ করে লিপিড-মাত্রা কমানোর প্রতিষেধক তৈরি করা যেতে পারে।
এ দেশের হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞেরা ওই গবেষণা নিয়ে এখনই কিছু বলতে চাইছেন না। তাঁরা বলছেন, মানুষের মধ্যে জিনটির প্রয়োগের ফল কী হয়, তা না-দেখা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না।