Ram Mandir

নবযুগের শুরু, বললেন মোহন ভাগবত, রুপোর ইট গেঁথে সূচনা রামমন্দিরের

আরএসএস প্রধানের বক্তৃতায় উঠে এসেছে আডবাণীর নাম। মোহন ভাগবত বলেন, ‘‘আডবাণীজি নিশ্চয়ই বাড়িতে বসে টিভিতে এই অনুষ্ঠান দেখছেন।’’

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

অযোধ্যা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২০ ১৬:০১
Share:

রামমন্দিরের ভূমিপূজার অনুষ্ঠানে মুখোমুখি নরেন্দ্র মোদী ও মোহন ভাগবত। ছবি: পিটিআই

১৯৯০ সালে অযোধ্যায় দেশব্যাপী রামমন্দির আন্দোলনের কর্মসূচিতে তিনি ছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা। ৩০ বছর পর আজ বুধবার সেই নরেন্দ্র মোদীর হাতেই অযোধ্যায় সূচনা হল রামমন্দির নির্মাণের। মহা আড়ম্বড়ে অযোধ্যায় ৪০ কেজি ওজনের রুপোর ইট গেঁথে ভূমিপূজার মাধ্যমে রামমন্দির নির্মাণের সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী। ‘নতুন ভারতে সূচনা হল নবযুগের’— বললেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। যোগী আদিত্যনাথ ঘোষণা করলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীই পারেন অসম্ভবের শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে। আর প্রধানমন্ত্রীর মুখে শুধুই রামচরিত। ঐক্য-সংহতির বার্তা।

Advertisement

১৯৯০ সালে লালকৃষ্ণ আডবাণী সোমনাথ থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত রথযাত্রা শুরু করেছিলেন। পুরনো সেই সময়ের ছবিতে লৌহপুরুষ আডবাণীর পাশে ছিলেন তখনকার বিজেপি কার্যকর্তা নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী। আজ বুধবার সেই রামমন্দিরের সূচনার দিন তিনিই প্রধান মুখ। সে দিনের নেতৃত্বে থাকা লালকৃষ্ণ আডবাণী অনুষ্ঠানের অংশীদার হয়েছেন। তবে ভিডিয়ো কনফারেন্সে। সেই উপস্থিতি ছাড়া গোটা ‘ভূমিপূজন’ অনুষ্ঠান আবর্তিত হয়েছে নরেন্দ্র মোদীকে ঘিরেই।

এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ অযোধ্যার আকাশে মোদীর হেলিকপ্টার চক্কর কাটা শুরু করতেই কার্যত পুরো অযোধ্যা উচ্ছ্বাসে-উল্লাসে ফেটে পড়ে। বেলা ১১টায় সাকেত কলেজের মাঠে তাঁর কপ্টার নামার পরে সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এ বার সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী যান রামগঢ়ীতে হনুমান মন্দিরে পুজো দিতে। মন্দিরের পক্ষ থেকে তাঁকে বস্ত্র ও রুপোর মুকুট উপহার দেওয়া হয়। এর পর রামলালার দর্শন সারেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে রাম জন্মভূমিতে। সেখান থেকে ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে শুভক্ষণ অনুযায়ী একে একে সমস্ত ধর্মীয় প্রথা-অনুষ্ঠান শেষে মূল মঞ্চে আসেন প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

রামমন্দিরের প্রতিকৃতি নিয়ে অযোধ্যায় এক ভক্ত। ছবি: পিটিআই

মূল অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে গোটা ভূমিপূজনের প্রস্তুতি থেকে গোটা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে। সুষ্ঠুভাবে সব পর্ব শেষ হওয়ার পর মূল মঞ্চে তিনি বলেন, ‘‘গোটা বিশ্ব দেখল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে কী ভাবে যে কোনও বিতর্ক শান্তিপূর্ণ ভাবে, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক রীতি মেনে সমধান করা যায়।’’ আবেগতাড়িত আদিত্যনাথ বলেন, ‘‘এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত আবেগের দিন, আনন্দের দিন, সুখের দিন। ৫০০ বছরের অপেক্ষার পর এই দিন এসেছে। বহু প্রজন্ম এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করেছে।’’ তিনি জানান, করোনাভাইরাস অতিমারির জন্য অনেকেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চেয়েও আসতে পারেননি। তবে আগামী দিনে চেষ্টা করা হবে, কোনও ভাবে যাতে তাঁদের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়।

যোগগুরু রামদেবকে স্বাগত জানাচ্ছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ছবি: পিটিআই

আরও পড়ুন: ‘রামজন্মভূমি মুক্ত হল’, ১৫ অগস্টের সঙ্গে তুলনা টানলেন মোদী

গত শতাব্দীর নয়ের দশকে দেশব্যাপী রামমন্দির আন্দোলনের অগ্রদূত আডবাণী সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেননি। আন্দোলনের শরিক ছিল বিজেপির মার্গদর্শক আরএসএস-ও। সেই আরএসএস প্রধানের বক্তৃতায় উঠে এসেছে আডবাণীর নাম। মোহন ভাগবত বলেন, ‘‘আডবাণীজি নিশ্চয়ই বাড়িতে বসে টিভিতে এই অনুষ্ঠান দেখছেন। করোনাভাইরাসের জন্য অনেককেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো সম্ভব হয়নি।’’

রামমন্দির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আরএসএস আগেই জানত, রামমন্দির তৈরিতে ২০-৩০ বছর লাগবে। শেষ পর্যন্ত তিন দশক পর সেই স্বপ্ন সত্যি হল।’’ সরসঙ্ঘচালক যোগ করেন, ‘‘আমাদের দেশ বসুধৈব কুটুম্বকম-এ বিশ্বাসী। অর্থাৎ সারা বিশ্ব আমাদের অতিথি। দেশবাসীর এই ভাবনাই যে কোনও সমস্যার সমাধান করতে পারে। আমরা সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলায় বিশ্বাসী। আজ এক নব ভারতের এক নতুন সূচনা হল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আজ সারা দেশে আনন্দের ঢেউ। বহু বছরের আশা পূর্ণ হওয়ার আনন্দ। ভারতকে আত্মনির্ভর বানানোর জন্য যে আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন ছিল, আজ তারই সূচনা হল।’’

রামমন্দিরের সূচনা অনুষ্ঠানে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। ছবি: পিটিআই

আরও পড়ুন: ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য’, অযোধ্যা নিয়ে উন্মাদনার মধ্যেই বার্তা মমতার

রামমন্দির নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। বহু বছর চলেছে আইনি লড়াই। কিন্তু সে সবে ঢুকলেন না প্রধানমন্ত্রী। গত বছরের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট রামমন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দেওয়ার আগের পর্ব কার্যত এড়িয়েই গিয়েছেন। ‘জয় সিয়ারাম’ ধ্বনিতে বক্তব্যের সূচনা করে নরেন্দ্র মোদী বললেন, ‘‘শ্রীরামের মন্দির আমাদের সংস্কৃতির আধুনিকতার, কোটি কোটি মানুষের সামগ্রিক শক্তির প্রতীক হিসেবে গড়ে উঠবে। আগামী প্রজন্মকে প্রেরণা দেবে।’’ মন্দির নির্মাণের পর গোটা অযোধ্যা এলাকার অর্থনীতি কী ভাবে পাল্টে যাবে, সে কথা জানান। বলেন, ‘‘নতুন সুযোগ আসবে, সুযোগ বাড়বে। সারা বিশ্ব থেকে মানুষ আসবেন। প্রভু রাম ও মাতা জানকীকে দর্শন করতে। কত কিছু বদলে যাবে এখানে।’’ এ ছাড়া তাঁর বক্তৃতার গোটা পর্ব জুড়ে ছিল শুধুই রামপ্রশস্তি। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শুধু নয়, গোটা বিশ্বে কী ভাবে রামচন্দ্র পূজিত হন, সেকথা জানান।

সব মিলিয়ে মহাধুমধামের মধ্যে দিয়ে শেষ হল রামমন্দিরের ভূমিপূজন পর্ব। সেই সঙ্গেই হয়তো ইতিহাসের পিছনের দিকের পাতায় চলে গেল বাবরি মসজিদ প্রসঙ্গ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন