‘শুধু শ্রাবন্তী নয়, আমার সব নায়িকাই আমার বন্ধু, সকলকেই ভালবাসি’

বারবার সম্পর্কের প্রশ্ন তাঁর ক্লিশে লাগে। মনে করেন দর্শক ‘স্টার’ তৈরি করে। হাজারটা বাউন্সার ঠান্ডা মাথায় খেললেন জিৎ! সামনে স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার সম্পর্কের প্রশ্ন তাঁর ক্লিশে লাগে। মনে করেন দর্শক ‘স্টার’ তৈরি করে। হাজারটা বাউন্সার ঠান্ডা মাথায় খেললেন জিৎ! সামনে স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share:

লম্বা ইন্টারভিউ শেষ। তার পর ছোট্ট যে দু’-চার মিনিটে আলাপি-কথা। শেষ তা’ও।

Advertisement

এতক্ষণ ‘বস’-এর নিজস্ব রেকর্ডারটি ‘অন’ ছিল। এখন তা’ও ‘অফ’। বললেন, ‘‘ইন্টারভিউ তো শেষ! শুরুতে যে বলেছিলেন আমি নাকি মেজাজি! ডমিনেটিং! অহঙ্কারী! একটাও মিলল?

আশা করি এখন থেকেই শুরু হবে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’-র সঙ্গে আমার নতুন জার্নি।’’

Advertisement

২০১৭ –র ‘বস’ নয়। এ যেন সেই ‘সাথী’র বিজয়! স্টার ব্যাগেজ –এর ধরাচুড়ো ছেড়ে পাশের বাড়ির নায়ক!

আসুন, রি-ওয়াইন্ড করি।

পত্রিকা: আনন্দবাজারের সাক্ষাৎকার বলেই কি এত কড়াকড়ি, সংশয়?

জিৎ: কীসের সংশয়? আগে থেকে কোনও ধারণা করে নেবেন না। আর খবর নিলেই জানতে পারবেন জিৎ ইন্ডাস্ট্রিতে ভাল কাজ করতে এসেছে। সেটাই করে যাচ্ছে। কারও সঙ্গে লড়াই করার ইচ্ছে আমার আগেও ছিল না। আজও নেই। জিন্দেগি আসান নেহি হোতি হ্যায়। উসে আসান বানানা পড়তা হ্যায় কভি আন্দাজ সে কভি নজর আন্দাজ সে!

পত্রিকা: তা হলে দেব আর আপনার ঝগড়াটা কি লোক-দেখানো?

জিৎ: মানে?

পত্রিকা: মিডিয়া তো তেমনই বলে! টুইটারে আপনাদের ফ্যানেরা মারামারি করে। কিন্তু আপনারা তো দিব্যি পার্টি করেন। যেমন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন। দেবের বোনের বিয়ে।

জিৎ: যখন শুরু করেছিলাম, তখন আমাকে মিঠুন চক্রবর্তী, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তুলনা করা হত। এখন দেবের সঙ্গে। আমি জানি না, ভবিষ্যতে আরও কার কার সঙ্গে তুলনা করা হবে। কিন্তু একটা কথা বলি, সাংবাদিকদেরও এ বার একটু পরিণত প্রশ্ন করা উচিত। এই একঘেয়ে দেব নিয়ে ঝুলোঝুলি আর কত কাল, বলতে পারেন! প্রশ্ন তো অনেক রকমেরই হতে পারে... বারাবার এক প্রসঙ্গ কেন তোলেন আপনারা, বুঝে পাই না।

পত্রিকা: সাংবাদিকদের তো এটাই কাজ।

জিৎ: শুনুন। দেব একজন জনপ্রিয় অভিনেতা। আমার ওর স্ক্রিন প্রেজেন্সও ভাল লাগে। এখানে ঝগড়ার প্রসঙ্গ আসছে কেন?

পত্রিকা: তা হলে ট্যুইটারে জিৎ আর দেবের ফ্যানেরা সারাক্ষণ লড়াই...

জিৎ: আমি নিশ্চই আমার ফ্যানেদের বলব শান্তি বজায় রাখতে। আসলে কী জানেন? এটা এখানকার ট্র্যাডিশন। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান, আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল, মিঠুন-অমিতাভ, সৌরভ-সচিন। এই রকম আর কী...

পত্রিকা: এই যে আপনি ট্র্যাডিশনের কথা বলছেন, জিৎ কি বরাবর কমার্শিয়াল নাচ-গানের ছবি করে যাবেন?

জিৎ: দাঁড়ান! নাচ-গানের ছবি কথাটা না খারাপ লাগে। আপনাদের ভাষায় আরবান সিনেমা মানেই তার মধ্যে একটা সাংঘাতিক ইন্টেলেকচুয়ালিজম আছে! আর, নাচ-গানের ছবি শুধু গ্রামের দর্শক দেখে, এটা ভুল।

আরও পড়ুন:
দিদি + দিদি

পত্রিকা: তবে কি জিৎ-এর কমার্শিয়াল ছবিই একমাত্র প্রফিট করে? তা হলে কমার্শিয়াল ছবির এই হাল কেন?

জিৎ: আচ্ছা, প্রশ্নটা এ ভাবেই থাকছে তো?

পত্রিকা: অবশ্যই।

জিৎ: ইদানীং কমার্শিয়াল ছবি খুব কম তৈরি হচ্ছে। আশা করি ব্যাপারটা আগের মতো হয়ে যাবে।

পত্রিকা: কমার্শিয়াল ছবি থেকেই স্টার হয়?

জিৎ: তা হয়তো হয়, কিন্তু আমি তা মাথায় নিই না। স্টার দর্শক তৈরি করে। বাড়িতে মা, মেয়ে-বৌ, ভাই-বোন, অফিস কলিগ বা বন্ধুদের কাছেও কি আমি স্টার?

পত্রিকা: অভিনেতা হিসেবে ইন্ডাস্ট্রির জন্য কখনও ভেবেছেন?

জিৎ: আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে প্রচুর ট্যালেন্ট। টেকনিশিয়ান থেকে অভিনেতা। কোনও কমতি নেই। এদের অনেক পটেনশিয়াল আছে। কিন্তু সেই অনুপাতে ইন্ডাস্ট্রি গ্রো করেনি। আমি চেষ্টা করেছিলাম ইন্ডাস্ট্রির সকলের সঙ্গে বসে কথা বলতে। কিন্তু দেখলাম, কেউই এক সঙ্গে কাজ করার মানসিকতায় নেই। সবাই এখানে নিজের কথা ভাবে। তবে আমি বিশ্বাস করি এমন একটা দিন নিশ্চই আসবে যখন ইন্ডাস্ট্রির বড় মাথাগুলো ব্যক্তিগত স্বার্থের বাইরে এসে সিনেমার জন্য কিছু করবে।

পত্রিকা: ২০১৭ তো সে রকমই একটা সময়। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায় অন্যের ছবি করছেন, বড় প্রোডাকশন হাউজ পরিচালকের সঙ্গে রেভেনিউ শেয়ারিং–এ যাচ্ছে।

জিৎ: দেখুন, আমার কাছে নাম নিয়ে কোনও লাভ নেই। সকলে নিজের কাজ করছে। আমারও একটা প্রোডিউসার সত্তা আছে। আমি মনে করি সেটা আমার বাড়তি পাওনা। এমনিতে প্রযোজকরা অভিনেতাদের সমস্যাটা চট করে ধরতে পারেন না। আমি একজন অভিনেতা-প্রযোজক হওয়ায় অভিনেতাদের অসুবিধা বুঝতে পারি। এই তো আমার দেওয়ালেই লেখা আছে— ‘‘ উই রাইজ বাই লিফটিং আদার্স।’’ যাঁরাই এটা করছেন তাঁদের জন্য শুভেচ্ছা।

পত্রিকা: বস-টু তে কাজ করে কেমন লাগছে?

জিৎ: এ বছরের অন্যতম বড় ছবি বস-টু। ইন ফ্যাক্ট বাংলা ছবিতে এটাই প্রথম কমার্শিয়াল সিক্যুয়েল।

পত্রিকা: স্বপন সাহা থেকে বাবা যাদব— এত রকম পরিচালকের সঙ্গে আপনি কাজ করেছেন...

জিৎ: (থামিয়ে দিয়ে) কোথায়? এখনও অনেক পরিচালকের সঙ্গে কাজ করা বাকি তো!

পত্রিকা: যেমন!

জিৎ: এখন যাঁরা পরিচালনা করেছেন, তাঁদের সঙ্গে যেমন কাজ করতে চাই, তেমনই আবার নতুন পরিচালকদের সঙ্গেও। ভাল গল্প পেলেই আমি ছবি করব। আমি তো চাই এ বছর আমার প্রোডাকশন হাউজ থেকেও জিৎ, নন-জিৎ সব ধরনের ছবি হোক। আমি চাইছি আমাদের কাছেও ভাল স্ক্রিপ্ট নিয়ে লোকে আসুক।

পত্রিকা: প্রিমিয়ারে খুব একটা দেখা যায় না আপনাকে....

জিৎ: তা নয়, সময়ের অভাব হয়ে গেলেই যেতে পারি না। বস-টু’র প্রিমিয়ার হলে নিশ্চয়ই যাব।

পত্রিকা: আগে বলা হত জিৎ, রবি কিনাগি, শ্রাবন্তী থাকলে সে ছবি সুপারহিট। রবি কিনাগি চমৎকার গল্প বলতে পারেন বলেই কি এতখানি সাফল্য?

জিৎ: আপনি তো প্রশ্ন করেই খালাস! আমাকে কিন্তু অনেক কথা বলতে হবে। পরিচালকদের কথা বলতে হলে প্রথমেই হরদার (চক্রবর্তী) কথা বলতে হয়। ওঁর ‘সাথী’-র বিজয় আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে। প্রভাতদাও (রায়) খুব ভাল পরিচালক। তেমনই বীরেশ চট্টোপাধ্যায়। স্বপনদার (সাহা) যেমন মাথায় অনেক কিছু থাকে। খুব তাড়াতাড়ি একটা ছবি তৈরি করতে পারেন। তবে মাঝখানে একটা সময় আমার রবি কিনাগি, শ্রাবন্তীর কম্বিনেশটা দারুণ ক্লিক করেছিল। কিন্তু ‘বস’, ‘আওয়ারা’, ‘জোশ’ আর ‘বেশ করেছি প্রেম করেছি’... এই ছবিগুলো বাজারে খুব ভাল কেটেছে।

পত্রিকা: নায়িকাদের কথায় আসি?

জিৎ: ওহ! এ বার নায়িকা প্রসঙ্গ? কবে সাক্ষাৎকারটা বেরোবে জানাবেন। সে দিন অন্তত বাড়িতে আনন্দবাজারটা নেব না। (হাসি)

পত্রিকা: কেন? আপনার স্ত্রী তো ভীষণ আন্ডারস্ট্যান্ডিং!

জিৎ: ঠিকই। আমার স্ত্রী নন-ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেও যে এ ভাবে মানিয়ে নিয়েছেন ভাবা যায় না। পরিবারের সাহায্য ছাড়া এত দূর আসতে পারতাম না।

পত্রিকা: শ্রাবন্তীর সঙ্গে তো এত বন্ধুত্ব। উনি ফোন তোলেন না কেন বলুন তো?

জিৎ: শুধু শ্রাবন্তী নয়। আমার সব নায়িকাই আমার বন্ধু। প্রিয়ঙ্কা, কোয়েল, শুভশ্রী, নুসরত জাহান। সকলকেই আমি ভালবাসি। (খুব হাসি) তবে কোয়েল যে আবার কাজ করছে এটা খুব ভাল খবর। শুভশ্রীও এখন বস-টু তে খুব ভাল কাজ করছে। তবে শ্রাবন্তী কেন ফোন তোলে না, ওকে নিশ্চই জিজ্ঞেস করব।

পত্রিকা: শুভশ্রী-রাজের বিয়েটা কবে?

জিৎ: বিয়ের ডেট নিয়ে কথা হয়নি।

পত্রিকা: মানে আপনি এটাও বলবেন না! আচ্ছা স্বস্তিকার সঙ্গে আর ছবি করবেন?

জিৎ: অনেক তো হল! একটু ম্যাচিওর্ড প্রশ্ন করা যায় না? আমি এখানে ছবি করতে এসেছি। তো সে রকম চরিত্র পেলে কেন করব না? মিমি আর কৌশানীর সঙ্গেও কাজ করতে চাই। কোনও স্ট্রং মানুষের সহজ পাস্ট হয় না। অনেক ভুল- ত্রুটি পেরিয়ে সে উঠে আসে। আমি আমার স্বপ্নকে নিজের লক্ষ্য করিনি। লক্ষ্যকে স্বপ্ন করেছি … আর সেই স্বপ্নকে জড়িয়েই আজ ঘুম থেকে উঠি...কাজে যাই... ফিরি... এটাই আমি...

ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন