বিকেল তিনটের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পিছিয়ে সন্ধে ছ’টায় করলেন। ‘‘দুপুরে এত খেয়েছি যে, একটু ঘুমোতেই হবে।’’ সন্ধে ছ’টায় তাঁর ঘরে পৌঁছলে নিজেই দরজা খুললেন।
পত্রিকা: ঘুম হল?
বোমান: হ্যাঁ, ঘুম হল। প্রচুর খেয়েছিলাম। আমার সঙ্গে বউও (জেনোবিয়া) এসেছে। ও তো বোধহয় এখনও ঘুমোচ্ছে। বউরা ঘুমোলে ডাকতে নেই (হাসি)।
পত্রিকা: এই ওয়ান লাইনারগুলোতে পেটেন্ট নিয়ে নিন এ বার...
বোমান: তাই না? গুড আইডিয়া। পার্সি হয়েও বিজনেস মাইন্ডেড হতে পারলাম না।
পত্রিকা: বিজনেস মাইন্ডেড পার্সিরা কী করছেন দেখছেন তো? রতন টাটা, সাইরাস মিস্ত্রি... সবাই তো প্রকাশ্যে ঝগড়া করছেন...
বোমান: (অনেকক্ষণ চুপ থেকে) যা হচ্ছে, আমার ভাল লাগছে না। এটা না করলেই পারত। পার্সিরা এমন ভাবে বিজনেস করে না। নট ডান...
পত্রিকা: কী করা উচিত ছিল?
বোমান: ভদ্রতা রাখা উচিত ছিল। গ্রেস ইজ দ্য ওয়ার্ড। আমার-আপনার সঙ্গে মতের অমিল হতেই পারে। কিন্তু সেটা পুরো পাড়াকে বলার কী মানে! একজন পার্সি হিসেবে আমার অসম্ভব খারাপ লেগেছে পুরো ব্যাপারটায়।
পত্রিকা: একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই বোমান। ফারহা খান বলেন, আপনি ‘লাস্ট জেন্টলম্যান অ্যালাইভ’। ফারহা এটাও বলছিলেন, আপনি খুব ভাল মোটিভেশনাল স্পিকার হতে পারেন...
বোমান: ইনফ্যাক্ট আজকাল আমি অনেক সময় সেটাই করছি। আমার ভাল লাগে অদ্ভুত অদ্ভুত চরিত্রদের মিট করতে।
পত্রিকা: কী রকম চরিত্র?
বোমান: ধরুন একটু পাগলাটে ধরনের একজন মানুষ, কিন্তু অফিসে দারুণ কাজ করে। কেউ হয়তো অসম্ভব দুঃখে থাকে বাড়িতে, কিন্তু বাইরে দেখলে মনে হবে পৃথিবীর সবচেয়ে খুশি মানুষ। কেউ হয়তো কোনও অফিসের সিইও, কিন্তু রাতে কমিক্স না-পড়লে ঘুম হয় না। এ সব ‘ক্যারেকটার’য়ের সঙ্গে আমার থাকতে ভাল লাগে। এদের জানতে ইচ্ছে করে, বুঝতে ইচ্ছে করে।
পত্রিকা: ২০০৪য়ে এক সাক্ষাৎকারের পর দেখেছিলাম আপনি মুম্বইয়ের সায়ন কোলিওয়াড়াতে গিয়ে সর্দারদের সঙ্গে সারা দিন থাকতেন। তখন বুঝিনি ওটা ছিল আপনার ‘লগে রহো মুন্নাভাই’য়ের প্রিপারেশন।
বোমান: (হেসে) বাব্বা কত দিন আগেকার ঘটনার কথা বললেন। ওদের সঙ্গে না থাকলে আমি ওই পঞ্জাবি বডি ল্যাঙ্গোয়েজটা তুলতে পারতাম না। তবে অভিনেতা হিসেবে আমার আসল ট্রেনিং ছিল যখন আমি আমার দোকানে বসতাম।
পত্রিকা: সেই দাদারের চিপসের দোকানে?
বোমান: ইয়েস। দোকান আমাকে রোজ নতুন নতুন জিনিস শিখিয়েছে। আমি চুপচাপ বসে বসে কাস্টমারদের দেখতাম। কত মানুষ! কত রকম তাদের হাবভাব...
পত্রিকা: প্লিজ একটা উদাহরণ দিন?
বোমান: (একটু ভেবে) দোকান আমাকে শিখিয়েছে মানি ব্যাগ দেখে মানুষ চিনতে। কত রকম মানি ব্যাগ দেখেছি! কেউ হয়তো লুকিয়ে টাকা বার করে মানি ব্যাগ থেকে। সে চায় না কেউ তার মানি ব্যাগ দেখুক, মানে সে ভীষণ সিক্রেটিভ। কারও মানি ব্যাগ হয়তো মোটা কিন্তু সাঙ্ঘাতিক অগোছালো। তার মানে সে খুব কেয়ারলেস। এ রকম নানা কিছু অবজার্ভ করতাম এক সময়।
পত্রিকা: আচ্ছা, ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’য়ের পরের ফেজটায় খুব বেশি দেখছি না আপনাকে...
বোমান: ইচ্ছে করেই। অফার নেই বলেই চুজি হয়ে গেছি, এই মিথ্যা আমি বলব না। আমার ওই এক জিনিস করতে আর ভাল লাগছিল না। একটা সময় যখন মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে সে তাঁর কমফর্ট জোন থেকে বেরোতে ভয় পায় না। কিন্তু সেটার থেকেও ডেঞ্জারাস একটা জিনিস আছে। তা হল ক্রমাগত সাফল্য পেতে পেতে মানুষ আরও বেশি একঘেয়েমিতে ঢুকে পড়ে। সেই কমফর্ট জোন থেকে আর বেরোতে চায় না। সাফল্যের কমফর্ট জোনে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম।
পত্রিকা: এই যে বললেন কাজ কমিয়ে দিলাম, সেটা কি এই জন্য যে কমার্শিয়াল ছবিতে হিরোইন-য়ের কমিক বাবা হতে ভাল লাগছিল না।
বোমান: খুব ইন্টারেস্টিং কোয়েশ্চন। না, হিরোইনের কমিক বাবার রোল করতে করতে বোর হইনি। আমি ওই ধরনের রোলগুলো অসম্ভব এনজয় করেছি তার কারণ বস, অ্যাট দ্য এন্ড অব দ্য ডে, ইউ আর অ্যান এনটারটেইনার।
পত্রিকা: সে দিন আপনার এক বন্ধু বলছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসি়ডেন্ট হওয়াতে আপনি নাকি রাগে ফুঁসছিলেন?
বোমান: ওহ, আই ওয়াজ ফিউরিয়াস। এমন মেগালোম্যানিয়াক যে মেয়েদের সম্মান করে না। লেফট-রাইট মিথ্যা কথা বলে। সে প্রেসিডেন্ট হলে পৃথিবীর ভাল হবে না। আর আমার ধারণা, ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছে সেই সব মানুষ যারা ডব্লু ডব্লু ই-র নকল রেসলিং দেখতে ভিড় জমায়। পরের বার আমেরিকাতে ল্যান্ড করলে আমার ভয় লাগবে, এটুকু বলতেই পারি।
পত্রিকা: এই যে আজকাল বাড়িতে থাকেন, কী করেন সারা দিন?
বোমান: বই পড়ি প্রচুর। রান্না করি। টেস্ট ম্যাচের দিন সকালে আমি প্রথম বল থেকে টিভির সামনে বসে যাই।
পত্রিকা: আইপিএল?
বোমান: পার্সি তো, খুব বেশি নতুন জিনিস ভাল লাগে না। ক্রিকেট মানে আজও আমার কাছে টেস্ট ম্যাচ (হাসি)।