প্রতিবাদের পরিণাম

দুলাল লাহিড়ীর ‘আবিষ্কার’ নাটকে। লিখছেন পিয়ালী দাসদূর থেকে অনেক কিছুই সুন্দর মনে হয়। মনে পড়ে যায় সেই প্রবাদ-বাক্যের কথা। ‘নদীর এ পার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ওপারে সর্ব সুখ আমার বিশ্বাস’। কংক্রিটের জঙ্গলে মোড়া শহুরে মানুষকে তেমনই সাময়িক স্বস্তি দেয় গ্রামের স্নিগ্ধ পরিবেশ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৬ ০০:০০
Share:

দূর থেকে অনেক কিছুই সুন্দর মনে হয়। মনে পড়ে যায় সেই প্রবাদ-বাক্যের কথা। ‘নদীর এ পার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ওপারে সর্ব সুখ আমার বিশ্বাস’। কংক্রিটের জঙ্গলে মোড়া শহুরে মানুষকে তেমনই সাময়িক স্বস্তি দেয় গ্রামের স্নিগ্ধ পরিবেশ। তবে তার গভীরে প্রবেশ না করলে বোঝা সম্ভব নয় সেখানকার রাজনীতির প্রকৃত চেহারা, দুর্নীতি কিংবা গণতন্ত্রহীনতার আসল রূপ।

Advertisement

হাঁপিয়ে ওঠা এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কর্মজীবন থেকে ক্ষণিকের বিরতিতে। শান্তির খোঁজে গ্রামের পরিবেশে আশ্রয় নিয়েছেন। পরিচিত হচ্ছেন গ্রামবাংলার মূল স্রোতের সঙ্গে। দুলাল লাহিড়ীর নির্দেশনায় এমন বিষয় নিয়েই মঞ্চস্থ হল যোজক প্রযোজিত ‘আবিষ্কার’ নাটকটি। কাহিনি ও নাটক অমিত মৈত্রর-র। গল্পটা অচেনা নয়। রাজনীতিও চেনা ছকের। তবুও উপস্থাপনার কৌশলে এ নাটক ছুঁয়ে যায় দর্শক মন।

নাটকের প্রথম দৃশ্যই আলাদা ভাবে নজর কাড়ে। মঞ্চের উল্টো দিকে মুখ করে এক ভদ্রলোক চেয়ারে বসে আছেন। মাথার ওপর থেকে হালকা স্পট লাইটের আলো এসে পড়েছে তার শরীরে। এই কম্পোজিশন নতুনত্ব বয়ে আনে। এর মধ্যেই হঠাৎ আগমন সাংবাদিকদের। এই ব্যক্তিই মন্ত্রী দীনেশ ঘোষ। অতিরিক্ত পরিশ্রমে ক্লান্ত মন্ত্রী তাই কোলাহল থেকে আড়াল খুঁজছেন। কিন্তু রক্ষে পেলেন না এখানেও। সাংবাদিকদের মন্ত্রীকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা, ব্যঙ্গ করা কিংবা উত্তেজিত করে তোলার দৃশ্য বিনোদনের রসদ দেয় দর্শকদের। যেমনি ভাবেই তিন সাংবাদিকের তিন রকম বেশভূষা এবং রকম-সকম।

Advertisement

বিশ্রামের তাগিদেই এরপর ছদ্মবেশে মন্ত্রীর আগমন অজ গাঁ-এর অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক মহাশয়ের বাড়িতে। এই পর্ব থেকেই অপেক্ষা করে থাকে অনেক টান টান দৃশ্য এবং চমক। নাটকে আলো (উত্তীয় জানা), মঞ্চ (নীল-কৌশিক) এবং সঙ্গীত (চন্দন রায়চৌধুরী) যোগ্য সঙ্গত করেছে। নির্দেশক দুলাল লাহিড়ী মঞ্চের পাশাপাশি চলচ্চিত্র মাধ্যমের মানুষ হওয়ায় বেশ কিছু সিনেম্যাটিক মুহূর্ত তৈরি করেন মঞ্চের ঘেরাটোপেই। যা নাটকে বাড়তি পাওনা। এ প্রসঙ্গে বিশেষ ভাবেই উল্লেখ করতে হয় ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যের কথা। গ্রামের মনোরম পরিবেশকেও এ নাটকে প্রত্যক্ষ করা যায়। তালগাছ, লণ্ঠন, মাটির দাওয়া, উঁচু-নিচু লম্বা বাশের সাঁকো, তার মধ্যে দিয়ে গ্রামবাসীর হাঁটাচলা, সাইকেল নিয়ে পার হওয়া, পাখির ডাক— এ সব গ্রামের নিখুঁত আবহ রচনা করে। কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন নির্দেশক দুলালবাবু।

দুর্নীতি কিংবা রাজনীতির সূক্ষ্ম প্রতিযোগিতায় গ্রাম যে শহরকেও ছাপিয়ে যেতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ এ নাটক। উঠে আসে গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নৈরাজ্য। এখানকার এক মহিলা কর্মীর প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠার পরিণতি, প্রতিবাদের পরিণাম। নাটকের পরবর্তী গল্পটা না হয় তোলাই থাকল দর্শকদের জন্য। তবে প্রতিটি চরিত্র নির্মাণে নির্দেশকের যত্নের ছাপ স্পষ্ট।

মন্ত্রী দীনেশ ঘোষের চরিত্রে শ্যামল দত্তের অভিনয় মুগ্ধ করে। সহজ, সরল গ্রাম্য শিক্ষক অবনীর চরিত্রে দুলাল লাহিড়ীর অভিনয় চরিত্রটিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। যে চরিত্রে ধরা পড়েন সৎ ও আদর্শবান এক মানুষ। দুলালবাবুর নিখুঁত অভিনয় এ নাটকের বড় প্রাপ্তি। বড় ছেলে গজা চলে যাওয়ার পরে রেডিওটাকে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে থাকেন তিনি। চরিত্রটি যেন প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। মেঘলা চরিত্রে ছোট্ট তিস্তা পাইকের অভিনয় মন ছুঁয়ে যায়। মনে হয়, অভিনয় নয়। এ যেন মায়া জড়ানো ঘরের আদুরে ছোট্ট মেয়েটি। স্নেহের পরশ পাওয়ার জন্য যে সর্বদা উদগ্রীব। উল্লেখের দাবি রাখেন ঊষা পাপিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, বোঁচা সুমন নন্দী, সুধা সঙ্ঘমিত্রা মান্না, সত্যবীণা শিকদার দিয়া দাস, সিকিউরিটি অফিসার রাজকুমার গুপ্ত প্রমুখ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement