আপনার হেঁশেল ছোট হোক বা বড়, তাতে থাকে থাকে সাজানো থাকবেই মশলার কৌটোপাতি। আর বাঙালির রান্নাঘরে মশলা কোনও দিনই কম পড়ে না। তবু যদি সেই থাকেই সংযোজন হয় আরও কিছু মশলা! হয়তো রোজকার রান্নাতেই অন্য ধরনের আধ চামচ মশলায় ফিরে এল মনমাতানো অচেনা স্বাদ। কিংবা নিত্যদিনের রাতের পাতের আলুর তরকারিতেই হয়তো উঠে এল রেস্তোরাঁর গন্ধ! তাই রইল কিছু আধচেনা মশলার হদিশ।
অল স্পাইস: এটা খানিকটা লবঙ্গজাতীয় মশলা। যা আসলে শুকনো বেরি। গোটা ফোড়ন দিয়ে কিংবা রোস্ট করে গুঁড়িয়ে ব্যবহার করুন অল স্পাইস। বাড়িতে বানানো টম্যাটো সস, বেকড চিকেন কিংবা নোনতা মাফিনে স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করুন এটি।
ক্যারাওয়ে বীজ: খানিকটা জিরের মতো দেখতে ক্যারাওয়ে বীজ ব্যবহার করতে পারেন কোলস্ল, স্ট্যু অথবা স্যুপে। বাড়িতে বানানো ব্রেডের উপর কিংবা চিজ দেওয়া ডিপে ছড়িয়ে দিতে পারেন বীজের গুঁড়ো। ক্যারাওয়ে তেল হাতের কাছে পেলে, স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারেন তা-ও।
ক্যায়ান পেপার: নামটা পড়েই হয়তো বুঝতে পারছেন, এটি এক ধরনের লঙ্কা। শীতকালে কোনও হালকা সি-ফুড স্যুপে নুনের সঙ্গে এক চিমটি ক্যায়ান পেপার দিয়ে দেখুন। অথবা প্রাতরাশের অমলেট সিজনিং করুন এই গুঁড়ো দিয়ে। কিংবা মাছ, মুরগির নানা পদে ম্যারিনেট করার সময় ব্যবহার করুন ক্যায়ান পেপার। স্বাদবদল হবে ম্যাজিকের মতো।
শিয়া: দেখতে ছোট্ট হলে হবে কী! ওমেগা থ্রি, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামে ভরপুর শিয়া থাকুক আপনার রোজকার খাবারে। মাফিন তৈরির ব্যাটারে, বাচ্চার স্ন্যাক্সে, পুডিংয়ের মিশ্রণে অথবা পাঁউরুটিতে স্প্রেডের মাধ্যমে খান শিয়া। বীজ, গুঁড়ো অথবা স্প্রেড— যে কোনও ভাবেই এই শিয়া ব্যবহার করতে পারেন।
কাফির লাইম লিফ: বাঙালির গন্ধরাজ তো আছেই। কিন্তু যদি পেয়ে যান কাফির লেবুর পাতা, সময় নষ্ট করবেন না। সাধারণত তাইল্যান্ডের পদে এই লেবুপাতা ব্যবহার করা হয়। কম মশলার স্টার ফ্রাই, স্যুপ, ফ্রায়েড রাইসে কাফির লাইমের পাতার গন্ধ অতুলনীয়!
অরিগ্যানো: বিশ্বায়নের দৌলতে হেঁশেলে অরিগ্যানোর নাম প্রায় সকলেই জানেন। কিন্তু শুধু পিৎজা বা পাস্তায় নয়, বাড়িতে তৈরি যে কোনও মশলাদার পাঁউরুটি, কুলচা বা নানে দিন অরিগ্যানো।
প্যাপরিকা: অবশ্যই এটিও আর এক ধরনের লঙ্কার গুঁড়ো। কিন্তু স্বাদে এটি ভারতীয় শুকনো লঙ্কার গুঁড়োর চেয়ে আলাদা। সুইট, স্পাইসি, স্মোকি— সাধারণত এই তিন স্বাদে প্যাপরিকা পাওয়া যায়। ডেভিল্ড এগ, পপকর্ন, মাংসের পদ অথবা হুমুস জাতীয় খাবারে স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারেন প্যাপরিকা।
রোজমেরি: এটি এক ধরনের হার্ব। ফ্রেশ ও ড্রায়েড— দু’ভাবেই ব্যবহার করা যায়। মাংস, স্প্রেড, পোচ্ড পিচ, লেমন বাটার সসে, ফুলকপি বা আলুর পদে ব্যবহার করতে পারেন রোজমেরি। এর সুগন্ধ পদে অনন্য মাত্রা যোগ করে। ব্রেড বানানোর সময়ে উপর থেকে ছড়িয়ে দিতে পারেন রোজমেরি।
সেজ: এটি আদতে এক ধরনের শাক। মুরগির মাংসের যে কোনও পদে অথবা ডিমের সঙ্গে সেজের জু়ড়ি মেলা ভার। তবে এটি টাটকা পাওয়া না গেলে অনেক ক্ষেত্রে শুকনোও ব্যবহার করা যেতে পারে।
সুম্যাক: ভূমধ্যসাগরীয়, মধ্য প্রাচ্যের রান্নায় মূলত সুম্যাকের ব্যবহার হয়। স্যালাডের ড্রেসিং, মাংসের ম্যারিনেশনে অথবা কুড়মুড়ে স্ন্যাক্সের উপর সুম্যাক ছড়িয়ে দিতে পারেন।
স্টার অ্যানিস: আট পাপড়ির এই স্টার অ্যানিস বা চক্র ফুলের বিপুল ব্যবহার চাইনিজ, জাপানিজ খাবারে পাওয়া যায়। স্যুপ থেকে শুরু করে চা, এমনকী ইদানীং কালে বিরিয়ানিতেও অনেকে নির্দ্বিধায় দেন স্টার অ্যানিস।
থাইম: এটি এক ধরনের হার্ব। পাস্তা, নোনতা টার্ট, স্যুপ, মাছ-মাংসে থাইম কুচি বা ড্রায়েড থাইম ব্যবহার করতে পারেন স্বচ্ছন্দে।
বেসিল: আর এক ধরনের অত্যন্ত জনপ্রিয় উপকরণ হল বেসিল। পিৎজা, পাস্তা, স্যুপ, স্যালাড, গ্রিলড ফিশ অথবা স্টার ফ্রায়েড পদে বেসিলের স্বাদ ও গন্ধের জুড়ি মেলা ভার।
এ তো গেল সামান্য কয়েকটি মশলা ও হার্বের কথা। চার পাশে খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে হরেক রকমের উপকরণ। দরকার শুধু নিজের চেনা গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে সাহস করে নতুন মশলার সন্ধানে বেরিয়ে পড়ার। তা হলে আপনার হেঁশেলেও উঠবে রেস্তোরাঁর সুবাস!