মা হওয়ার পর মধ্যপ্রদেশ নিয়ে সমস্যা?

আর চিন্তা নয়। কী ভাবে মেদ ঝরিয়ে হয়ে উঠবেন ছিপছিপে, জেনে নিন তার উপায়আর চিন্তা নয়। কী ভাবে মেদ ঝরিয়ে হয়ে উঠবেন ছিপছিপে, জেনে নিন তার উপায়

Advertisement

পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৭:৪০
Share:

মেট্রোয় ওঠামাত্র ঋতজাকে দেখে অন্য মহিলারা যখন মিষ্টি হেসে সিট ছেড়ে দিচ্ছিলেন, সন্দেহটা তখনই হয়েছিল। তা পাকাপোক্ত হল, যখন একজন কানের কাছে প্রশ্নটা করেই ফেললেন, ক’মাস? কান্না পেয়ে গিয়েছিল ঋতজার। আসলে, হৃদি জন্মানোর এক বছর পরও ওর পোস্ট প্রেগন্যান্সি ফ্যাট একটুও কমেনি। অতিরিক্ত চর্বির সঙ্গে বাড়তি পাওনা একটি নাদুসনুদুস ভুঁড়ি। শাড়ি, সালোয়ার, ওয়েস্টার্ন আউটফিট— সব কিছুই আটকে যাচ্ছে পেটে এসে। অথচ এক সময় ঋতজার কাছ থেকেই মেদ ঝরানোর পরামর্শ নিত বন্ধুরা!

Advertisement

সমস্যাটা চেনা। বিয়ের আগে দিব্যি ছিপছিপে তারিফ কুড়োনো চেহারা। অথচ বাচ্চা হওয়ার পরই অতিরিক্ত চর্বি, বাচ্চা হওয়ার ধকল, রাত জাগার ক্লান্তি শরীরে থাবা বসাতে থাকে। ফলে এত দিনের চেনা চেহারাটা হঠাৎ যেন বদলে যায়। আর ছোট্ট সদস্যটির যত্নআত্তিতে ব্যস্ত মায়ের হাতে নিজেকে দেখভালের মতো যথেষ্ট সময়ও থাকে না। ফলে বাচ্চা হওয়ার পর হইহই আনন্দটা যখন একটু থিতু হয়, আয়নার সামনে দাঁড়ালেই প্রবল এক অবসাদ গ্রাস করে মেয়েদের।

কেন এই পরিবর্তন? ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায় জানালেন, আসলে পরিবর্তনটা বাচ্চা হওয়ার পর নয়, বাচ্চা হওয়ার আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। গর্ভবতী মায়েদের এই সময় প্রচুর ক্যালশিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার, প্রোটিন, ফোলিক অ্যাসিড খেতে দেওয়া হয়। তার উপর অনেক মা-ই প্রেগন্যান্সি আসার পর হাঁটাচলা নিয়ন্ত্রিত করে দেন বাড়তি সতর্কতা হিসেবে। ফলে তখন থেকেই পেটে চর্বি জমতে থাকে। তা ধরা পড়ে সার্জারির পর। তা ছাড়া, বাচ্চা হওয়ার পরও মায়েদের খাওয়ার পরিমাণ অনেকটাই বেশি থাকে, বিশেষ করে বাচ্চা যদি বুকের দুধ খায়। এই সব কিছুর পরিণামই ভুঁড়ি।

Advertisement

তা হলে মুক্তি কোন পথে? বাচ্চা হওয়ার পরই কি লাগাম টানতে হবে খাবারে? ফ্যাট বা প্রোটিনজাতীয় খাবার কি বাদ? চিন্ময়বাবু জানালেন, প্রোটিন বাদ একেবারেই নয়, বরং তার পরিমাণটা বাড়ানোই ভাল। কারণ, শুয়ে-বসে থাকার ফলে পেশির ক্ষয় হয়। তার জন্য প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারই উপযুক্ত। কিন্তু অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল। চিজ, তেল, মিষ্টি বা ডেয়ারি প্রোডাক্টে একটু রাশ টানা দরকার। দুধ খেলেও তা ডাবল টোন্‌ড মিল্ক। ভাল হয় যদি সরাসরি দুধের বদলে ছানা খাওয়া যায়। ড্রাই ফ্রুটস খুব ভাল। তবে কাজুবাদামের পরিমাণটা কম রাখতে হবে। দু’-চারটেতে ক্ষতি নেই। কিন্তু দশ-বারোটা কাজুবাদাম শরীরে চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে। তার চেয়ে আখরোট বা আমন্ড খাওয়া ভাল।

সঙ্গে অবশ্যই চলবে শারীরচর্চা, বাচ্চাকে দেখাশোনার ফাঁকেই। আমাদের দেশে নতুন মায়েদের মধ্যে বেশির ভাগেরই এক্সারসাইজ করা নিয়ে একটা ভীতি কাজ করে। তাঁরা ভাবেন, বাচ্চা হওয়ার পর ৩-৪ মাস কোনও ভারী কাজ করলে, হার্নিয়া হতে পারে। ধারণাটা ঠিক নয়। খুব ভারী ওজন তুললে হার্নিয়ার সম্ভবনা থাকে ঠিকই, কিন্তু আমেরিকান কলেজ অব স্পোর্টস মেডিসিন-এ বলা হয়েছে যে, বাচ্চার জন্মের ৬-৭ সপ্তাহ পরই হালকা এক্সারসাইজ করা যায়।

পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করা যেতে পারে বিছানায় শুয়েই। আমাদের তলপেটে মেরুদণ্ডের কাছাকাছি যে পেশি থাকে, তাকেই বলা হয় পেলভিক ফ্লোর। এই পেশিই বাচ্চা হওয়ার পর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে। তাকে দৃঢ় করার জন্য কেগেল এক্সারসাইজ খুব কাজে আসে। এতে বিছানায় শুয়ে অ্যাবডোমেনকে টেনে ধরতে হবে। অনেকটা ইউরিনের বেগকে আটকানোর সময় যেমনটা করা হয়। এই ভাবে ১০ গুনতে হবে। প্রথম দিকে বার কুড়ি এটা করলেই অনেকটা কাজ হয়।

এ ছাড়া ভুঁড়ি কমানোর সবচেয়ে নিরাপদ ওষুধ হল হাঁটা শুরু করা, ছ’ সপ্তাহ কাটলেই। সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা এই সময়ের জন্য নয়। কারণ তাতে সেলাইয়ের জায়গায় চাপ পড়তে পারে। কিন্তু সমতল জায়গায় মিনিট পনেরো-কুড়ি হাঁটতে পারলেই যথেষ্ট। এ ছাড়া কোর এক্সারসাইজ, যেমন প্ল্যাংক, সাইড প্ল্যাংক, ব্রিজ করলে পেটের পেশি দৃঢ় তো হবেই, তার সঙ্গে বাচ্চাকে অনেকক্ষণ কোলে নিলে পিঠে-কোমরে যে অসহ্য যন্ত্রণা হয়, তার থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামার মতোই স্টেপারও কিন্তু গোড়ার দিকে করা উচিত নয়। এতে পেটে চাপ পড়ে। মাস দুয়েক পর থেকে আস্তে আস্তে এগুলো শুরু করা যায়।

আসলে সুন্দর চেহারা ফিরে পেতে হলে আলসেমির কোনও জায়গা নেই। প্রথম থেকে এক্সারসাইজ করা হয়নি, তাই কোনও দিন আর চেহারা আগের মতো ছিপছিপে হবে না— ভেবে অবসাদে ডুবে যাওয়াটা কাজের কথা নয়। এক সময় ঐশ্বর্যা রাইকেও সমালোচিত হতে হয়েছিল পোস্ট প্রেগন্যান্সি ফ্যাটের জন্য। শিল্পা শেট্টি, করিনা কপূরেরও ওজন অনেক বেড়ে গিয়েছিল মা হওয়ার পর। কিন্তু তাঁরা সমালোচনায় কান না দিয়ে, ধীরে ধীরে আগের চেহারায় ফিরে এসেছেন স্বমহিমায়। ডায়েট আর এক্সারসাইজের গুণে।

তাই সময় এখনও আছে। রুটিন মেনে শারীরচর্চা আর খাবারের দিকে নজর দিলে এখনও কিন্তু বিয়ের আগের আউটফিটগুলোর দিকে হাত বাড়ানো যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন