ঘরের তাপমাত্রা নিজের হাতে

এসি এখন আর বাহুল্য নয়। তাই কেনার আগে খুঁটিনাটি জানা জরুরিএসি এখন আর বাহুল্য নয়। তাই কেনার আগে খুঁটিনাটি জানা জরুরি

Advertisement

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ০১:১০
Share:

মডেল: মোনালিসা; মেকআপ: উজ্জ্বল দত্ত; ছবি: অমিত দাস; পোশাক: গ্লোবাস, লেক মল; লোকেশন: ক্লাব ভর্দে ভিস্তা, চকগড়িয়া; ফুড পার্টনার: টিন্নি দ্য ধাবা, গোলপার্ক

যে হেতু আমরা ক্রান্তীয় অঞ্চলের বাসিন্দা, তাই শীতাতপের শরণাপন্ন আমরা প্রায় সকলেই। এয়ার কন্ডিশনার কেনার সময়ে কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন...

Advertisement

স্‌প্লিট, উইন্ডো, পোর্টেবল, ইনভার্টার— এই চার ধরনের এসি পাওয়া যায় বাজারে। এর মধ্যে কোন মেশিন কিনবেন, সেটা আগে ঠিক করতে হবে। উইন্ডো এসির দাম অনেক কম। তবে ছোট ঘরেই এটা ভাল কাজ করে। যে কোনও আয়তনের ঘরে স্‌প্লিট এসি ভাল। সে ক্ষেত্রে ঘরের আয়তন ও এসির ওজনের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা জরুরি। এর কমপ্রেসর ঘরের বাইরে থাকায়, এসি চলাকালীন আওয়াজ হয় না এবং ঘর বড় হলেও ঠান্ডা হয় তাড়াতাড়ি। তবে এই এসির দাম উইন্ডো এসির চেয়ে বেশি। অন্য দিকে রয়েছে পোর্টেব্‌ল এসি, যা এক ঘর থেকে অন্য ঘরে নিয়ে গিয়েও কাজে লাগানো যায়। আর ইনভার্টার এসি ইলেকট্রিকের সরবরাহ না থাকলেও চলতে পারে।

Advertisement

আয়তন ও ক্যাপাসিটি

ঘরের আয়তনের উপরেই নির্ভর করে, কোন মাপের এসি কিনবেন। এসি-র সাইজ় বোঝাতে ভারতীয় মাপকাঠিতে টন ব্যবহার করা হয়। ঘরের বর্গফুট ধরে হিসেব করে নিতে পারেন কত টনের এসি কিনবেন। সাধারণত ৮০ থেকে ১২০ বর্গফুটের ঘরে ১ টন, ১২০ থেকে ১৯০ বর্গফুটের ঘরে দেড় টন আর ১৯০ থেকে ৩০০ বর্গফুটের ঘরে ২ টন এসি লাগালে ভাল কাজে দেবে।

কোন কয়েল ভাল

এসি কেনার সময়ে মেশিনের কয়েল দেখে নিন। এসি মেশিনে সাধারণত অ্যালুমিনিয়াম বা কপার কয়েল ব্যবহৃত হয়। কপার কয়েলের হিট ট্রান্সফারের ক্ষমতা অনেক বেশি, তা ছাড়া এই তার অনেক শক্ত, ক্ষয় কম হয়। ফলে অনেক দিন পর্যন্ত ভাল কাজ করে। অন্য দিকে অ্যালুমিনিয়াম তারের দাম কম। কিন্তু স্থায়িত্ব বা কার্যক্ষমতা তামার তারের চেয়ে অনেক কম।

এ ছা়ড়াও মেশিনে কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। সাধারণত যে বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে নেওয়া ভাল, সেগুলো হল—

অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়া ফিল্টার: এই ফিল্টার থাকলে ব্যাকটিরিয়া, পোলেন, অ্যালার্জেন জাতীয় ক্ষতিকর বস্তু ঘরে ঢুকতে পারে না। তার সঙ্গে ঘরের আবহাওয়াও তরতাজা থাকে অনেক ক্ষণ।

মনে রাখবেন

• আপনি যে দেশের যে শহরে থাকেন, সেখানে তাপমাত্রা সাধারণত কেমন থাকে, আপনার ঘর কোন তলায়, কোন দিকে (সাধারণত পশ্চিমের ঘর বেশি গরম হয়) এই সব কিছুই কিন্তু এসি কেনার সময়ে মাথায় রাখবেন

• অনেকেরই ধারণা থাকে, ঋতু অনুযায়ী এসি কিনলে, দামের
ক্ষেত্রে ছাড়ের বাড়তি সুবিধে পাওয়া যায়। তাই অনেকেই শীতকালেএসি কিনতে চান। কিন্তু শীতে এসি কিনে ব্যবহার না করা কাজের কথা নয়। বরং এসি কিনে তক্ষুনি ব্যবহার করলে মেশিনটির কোথাও সমস্যা আছে কি না, তা ধরা পড়ে যায়

• উইন্ডো এসি লাগালে দেখে নিন, ঘরে ঠিক জায়গায় এসি লাগানোর মতো জানালা আছে কি না। স্‌প্লিট এসি লাগানোর সময়ে ঘরে জানালা ক’টা আছে, সেটা গুনে নিতে হবে। অতিরিক্ত জানালা থাকলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হতে পারে

• যে কোম্পানির এসি কিনবেন, সেই কোম্পানির কর্মীকে দিয়েই সার্ভিসিং করাবেন। সাধারণত বছরে দু’-তিন বার এসির সার্ভিসিংয়ের দরকার হয়। কিন্তু বাইরের মিস্ত্রি দিয়ে সার্ভিসিং করলে় সমস্যা বাড়বে বই কমবে না

• কিছু কোম্পানি বিনামূল্যে এসির ইনস্টলেশন করে দেয়। আবার কিছু কোম্পানি ইনস্টলেশন চার্জ নেয়। তাই আগে এসি লাগানোর জায়গা ঠিক করে নিন। স্‌প্লিট এসি হলে আউটসাইড পার্ট কোথায় লাগাবেন, সেটা ঠিক করুন। বারবার জায়গা বদল করতে গেলে বেশি খরচ হবে

• এসির ম্যানুয়াল ভাল করে পড়ে বা বুঝে নিয়ে তবেই রিমোট ব্যবহার করুন। বারবার তাপমাত্রা বা সেটিংস পাল্টালে কিন্তু যন্ত্রের উপরে চাপ পড়ে। অহেতুক রিমোটের বোতাম টিপবেন না

ডাস্ট ফিল্টার: ধুলোবালি আটকানোর জন্য এই ফিল্টার থাকে। কিন্তু মাসে এক বার এই ফিল্টারে জমা ধুলো অবশ্যই জলে ধুয়ে বা ওয়াটার স্প্রে করে পরিষ্কার করতে হবে।

রুম হিটার: এসির মধ্যেই রুম হিটার টেকনোলজি থাকলে আলাদা করে আর রুম হিটার কেনার প্রয়োজন পড়বে না। শীতকালে ঘর ঠান্ডা করার যন্ত্রই ঘর গরম রাখবে মাত্র একটা বোতাম টিপলেই।

অটো ডিটেক্ট: সাধারণত ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিজেদেরই রিমোট ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এমন অনেক এসি মেশিন আছে, যা নিজে থেকেই ঘরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে কুলিং টেম্পারেচার বাড়িয়ে অ্যাডজাস্ট করে। এমনকী ঘরের লোকসংখ্যা বেড়ে গেলেও তা নিজে থেকেই ডিটেক্ট করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

ডিহিউমিডিফায়ার: ঘরের অতিরিক্ত আর্দ্রতা শুষে নিতে সাহায্য করে। বর্ষার সময়ে ঘরে প্যাচপেচে আবহাওয়া তৈরি হয়। কিছু ক্ষণের জন্য এসি চালিয়ে নিলে, ডিহিউমিডিফায়ার থাকলে ঘরের অতিরিক্ত ময়শ্চার শুষে নিয়ে ঘরকে সতেজ করে।

স্লিপ মোড: এসিতে এই মোড থাকলে তা ইলেকট্রিক ব্যয় সাশ্রয় করতে সাহায্য করে। ঘুমোনোর সময়ে দশটা নাগাদ হয়তো এসি চালিয়ে শুয়েছেন। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা-দেড়টার দিকে বাইরের তাপমাত্রা কমে এলে এসি নিজেও তার সঙ্গে নিজের তাপমাত্রা অ্যাডজাস্ট করে নেয়। ফলে বেশি বিদ্যুতের অপচয় কম হয়।

এ বার আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজন বুঝে, সেই বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এসি নির্বাচন করুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন