কথায় আছে, বইয়ের চেয়ে বড় বন্ধু আর হয় না। কিন্তু যে আমাদের মননের সঙ্গী সেই বন্ধুর কি ঠিকমতো যত্ন আমরা নিই? বই পড়া হয়ে গেল মানে সেটা যথাস্থানে রেখে দেওয়াই কিন্তু বইয়ের যত্নের সংজ্ঞা নয়।
বহু দিন পরে সেলফ বা আলমারি থেকে বই বের করার পর দেখা যায় তার পাতাগুলো কালো হয়ে গিয়েছে, উলটোতে গেলে ছিঁড়ে যাচ্ছে বা হলুদ হয়ে নরম হয়ে আছে। পোকায় নষ্ট করে দিয়েছে পাতা। কখনও তো পুরনো বইয়ের পাতা উলটোতে গেলেই ভেঙে পড়ে যায়। কমবেশি এই অভিজ্ঞতা সব পড়ুয়ারই আছে। বাসস্থনের আয়তন যত কমছে বই রাখার সমস্যা ততই বাড়ছে। কিন্তু সব সময় তো বাড়ির আয়তন মাথায় রেখে বই কেনায় রাশ টানা যায় না, তাই গাদাগাদি করে এখানে-ওখানে বই রাখতে গিয়েই হয় বিপত্তি। দামি দুষ্প্রাপ্য বই অযত্নে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু কিছু নিয়ম মেনে চললে বইকে চিরসবুজ রাখা যায় বহু দিন।
• প্রতিমাসে দু’বার আলমারি বা বইয়ের তাক থেকে বই নামিয়ে নরম কাপড় দিয়ে ধুলো মুছে রোদে দিন। তবে চড়া রোদে নয়। যখন রোদের তেজ কম থাকবে তখনই। চড়া রোদ বইয়ের শত্রু। ঘরে বইগুলি যেখানে থাকে, খেয়াল রাখবেন সেখানে যেন সারাক্ষণ রোদ না আসে। রোদে দেওয়ার সময় খোলা মেঝেতে নয়, কাপড়, মাদুর অথবা শতরঞ্চি পেতে তার উপর বইগুলো রাখবেন।
• ড্যাম্প ধরা দেওয়ালে বইয়ের তাক তৈরি করবেন না। এই রকম দেওয়ালের স্পর্শে বই থাকলে বইয়ের পাতা নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া দেওয়ালে উই পোকা বাসা বাঁধলে তারাও বইকে ছাড় দেবে না। তাই সরাসরি দেওয়ালের সংস্পর্শে বই না রাখাই ভাল। আলমারি বা বইয়ের র্যাক কাঠের হলে কাঠ সিজন করিয়ে নিন। কোনও বইয়ে যদি উই ধরে যায় তবে সেই বইটি অন্য বইয়ের সঙ্গে রাখবেন না। তা হলে বাকি বইগুলিতেও উই ধরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
• বহু পুরনো বই বা দুষ্প্রাপ্য বই ব্যবহার করার আগে কটন গ্লাভস পরে নিন।
• বইয়ের পাতা ওলটোনোর সময়ের অনেকে আঙুলে থুথু লাগিয়ে পাতা উলটোয়। এটা যেমন নিন্দনীয় বদভ্যাস, তেমনই মারাত্মক ক্ষতিকর বইয়ের আয়ুর ক্ষেত্রে। পাতা ওলটোনোর জন্য প্রয়োজন হলে ভেজা স্পঞ্জ ব্যবহার করুন।
• কতটা পড়া হয়েছে সেটা মনে রাখার জন্য পাতার কোনা মুড়ে পড়ার অভ্যেসটা বদলে ফেলুন। এর বদলে বুক মার্ক ব্যবহার করুন। কিন্তু মোটা, বড় ও ভারী এই তিন রকমের বুক মার্ক একদম নয়। তার বদলে রেশমের ফিতে, কাগজের টুকরোর মতো হালকা কিছু বুক মার্ক হিসেবে ব্যবহার করুন।
• পাতা ওলটোনোর সময় যত্ন নিয়ে ধীরে–ধীরে পাতা উলটে পড়ুন। হাতের মধ্যে রেখে বই পড়ুন। বই পড়ার সময় কাগজের মলাট দিয়ে নিন। ভারী বই হলে তা শুয়ে নয়, টেব্লে রেখে পড়ুন। র্যাক থেকে বই নামিয়ে পড়ার সময় বইয়ের স্পাইন ধরে টান দেবেন না। পাশের দুটি বই পিছনে সরিয়ে আঙুল দিয়ে নির্দিষ্ট বইটি টেনে নিন।
• আলমারি বা সেলফে বই রাখার সময় খেয়াল রাখুন দুটো বইয়ের মধ্যে যেন একটু ফাঁক থাকে, বাতাস চলাচলের জন্য। লম্বা করে বই সাজিয়ে রাখুন। কম ভারী বই সেলফের উপরের দিকে রাখবেন। আলমারির ভিতর একটি বাটিতে কিছু ন্যাপথালিন রেখে দিলে পোকামাকড়ের উৎপাত কম হয়। বইয়ের পাতার ভিতর নিমপাতা শুকিয়ে রেখে দিলেও এই সমস্যা হয় না।
বই খোঁজার উপায়
এ তো গেল বইয়ের রক্ষণাবেক্ষণের কথা। কিন্তু যাঁদের বাড়িভর্তি বই, তাঁরা প্রায়শই কোথায় কোন বই আছে তা খুঁজে পেতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। বই খুঁজে পাওয়ারও সহজ উপায় আছে। বইয়ের নামের বা লেখকের পদবি বা নামের বা বইয়ের বিষয়ের আদ্যক্ষর কাগজে লিখে স্টিকােরর মতো বইয়ের উপর সেঁটে দিন। হরফ অনুযায়ী বই পরপর রাখুন। এতে চট করে বই খুঁজে পেতে সুবিধা হয়। কাউকে বই পড়ার জন্য ধার দিলে প্রাপকের নাম খাতায় লিখে রাখুন।
এ ভাবে কিছু নিয়ম মানলেই বই থাকবে যত্নে, ব্যবহার হবে সঠিক।