হবু শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক হোক সহজ

তবেই পূত্রবধূর সঙ্গে আগামী সম্পর্কের ভিত মজবুত হবে ভরসা আর বিশ্বাস দিয়েযে নতুন সম্পর্কটা শুরু করতে চলেছেন, সেটার জন্য সামান্য চেষ্টা ও যত্ন থাকলে কিন্তু কঠিন কাজও সহজ হয়ে যায়।

Advertisement

রূম্পা দাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৩৩
Share:

সম্পর্কের নাম এক হলেও কোনও সম্পর্ককেই বাঁধা গতে ফেলা যায় না। জন্ম থেকে আমরা যাঁদের কাছ থেকে দেখেছি, তাঁদের সঙ্গে সমস্যা হলে সামলানোও সহজ হয়ে যায়। কিন্তু জটিলতা বাড়ে যদি মানুষটি নতুন হন। তাই হবু শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্কটা ঠিক মা-বাবার মতো সহজ হয়ে ওঠে না, অন্তত শুরুর দিকে তো নয়ই। কিন্তু যে নতুন সম্পর্কটা শুরু করতে চলেছেন, সেটার জন্য সামান্য চেষ্টা ও যত্ন থাকলে কিন্তু কঠিন কাজও সহজ হয়ে যায়।

Advertisement

প্রথম দেখা

Advertisement

কথায় বলে না, প্রথম সাক্ষাৎটা গুরুত্বপূর্ণ! ব্যক্তিগত জীবনে আপনি যেমন, হবু শ্বশুরবাড়িতেও ঠিক তেমন ভাবেই যান। যদি শাড়িতে অভ্যস্ত না হয়ে থাকেন, তা হলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ অনুযায়ী পোশাক বাছুন। তবে কারও ভাল লাগবে বলে শাড়ি পরতে মন সায় দিলে, সেটাও পরতে পারেন। পোশাকটা বাহ্যিক। আসল দরকার মনের মিল।

আপনি যেমন চান, আপনার মা-বাবার সঙ্গে প্রেমিক বা হবু স্বামীর সম্পর্ক সহজ, মধুর হোক, সেটা আপনার প্রেমিকও চাইতে পারেন। তাই প্রেমিকের বাবা-মায়ের সঙ্গে আলাপচারিতা শুরু হোক সহজ ভাবেই। ‘আমি এটা পারি’ বা ‘আমার দ্বারা ওটা ঠিক হয় না’ জাতীয় কথাবার্তা রূঢ় ভাবে বলা কি আদৌ উচিত? তাঁরা কিন্তু বয়সে বড় এবং শ্রদ্ধেয়। তবে তাঁরা যদি অযৌক্তিক কথা বলে থাকেন, তা হলে সেটা মিষ্টি ভাবে যথাসম্ভব বোঝানোর চেষ্টা করুন। প্রথম থেকেই নিজেকে বেশি জাহির করলে আপনার উপরে শ্বশুর-শাশুড়ির প্রত্যাশা বাড়বে। পরবর্তী কালে সেটা অনেক সমস্যার মূল কারণ হয়ে উঠতে পারে।

বন্ধুতার হাত

বন্ধুত্ব যে কোনও সম্পর্কের আধার। শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে নির্ভেজাল বন্ধুত্ব তৈরির সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। আড্ডার ছলে তাঁদের জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকী জেনে নিয়ে সে সব দিনে আলাদা করে শুভেচ্ছাবার্তা জানান, উপহার দিন। এতে সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়বে বই কমবে না। সপ্তাহান্তে সকলে মিলে সিনেমা কিংবা ডিনারে যেতে পারেন। নতুন সংসারে প্রবেশ করার আগে আপনিও যে সেই পরিবারকে নিয়ে আগ্রহী, সেটা বোঝানোও জরুরি। এতে হবু শ্বশুর-শাশুড়িও আপনাকে সহজেই নিজেদের পরিবারের অংশ মনে করতে শুরু করবেন। হতেই পারে, প্রথম দেখায় প্রেমিকের মা কিংবা বাবাকে পছন্দ হয়নি আপনার। কিন্তু তাঁদের বোঝার চেষ্টা করুন। দেখবেন, তাঁদের মধ্যেও এমন অনেক গল্প আছে, যা আপনাকে অবাকই করছে। আবার আপনাদের সম্পর্কে এমন দিনও আসতেই পারে, যখন আপনার হবু শাশুড়ি ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার জন্য ছেলেকে ফোন না করে আপনাকেই জানাবেন। কেননা ছেলের মতোই ভরসার জায়গাটা আপনিও তৈরি করে ফেলেছেন!

সিঙ্গল পেরেন্ট

আবার এমন হতে পারে যে আপনার হবু স্বামীর শুধু মা কিংবা বাবা রয়েছেন। অর্থাৎ সিঙ্গল পেরেন্টের কাছে বড় হয়েছেন তিনি। সে ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হতে পারে। সন্তানকে আঁকড়ে বেঁচে থাকা মানুষটির জীবনে তখন আপনি তৃতীয় ব্যক্তি— এ রকম তিনি মনে করতেও পারেন। তবে মা কিংবা বাবা এবং তাঁর সন্তান— দু’জনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করলে ব্যাপারটা আপনিও বুঝবেন। তিনি এত দিন ছেলেকে আঁকড়েই বেঁচে রয়েছেন এবং ছেলেও কিন্তু তাঁর অবলম্বন। তাই ছেলের মনোযোগ অন্য আর এক জনের দিকে গেলে তিনি অসহায় বোধ করতে পারেন বইকী! তাই সেই অসহায়তা বাড়তে দেবেন না। বরং সিঙ্গল শ্বশুর বা শাশুড়িকে বোঝাতে পারেন যে, তাঁর আর একটি সন্তান বাড়ছে। চেষ্টা করুন, তাঁকেও একটু সময় দিতে। আড্ডায়-গল্পে তাঁর কাছ থেকে প্রেমিকের ছোটবেলা, বেড়ে ওঠার গল্প জানুন। প্রয়োজন পড়লে তাঁর বাড়ির বিল অনলাইনে পেমেন্ট বা রাতের খাবার অর্ডার দেওয়া... মাঝেমধ্যে এ সবও করতে পারেন। এতে সম্পর্ক সহজ হবে।

বোঝাবুঝির খেলা

সম্পর্কে রয়েছেন মানেই যে প্রেমিককে তাঁর মা-বাবার চেয়ে আপনিই বেশি ভাল বোঝেন— এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসাও জরুরি। কারণ, আপনি যে ভাবে হবু স্বামীকে চেনেন, তাঁর মা-বাবা তাঁকে চেনেন অন্য ভাবে। তাই দু’পক্ষের চেনার মধ্যে বৈপরীত্য থাকলেও তা ভিত্তিহীন নয়। দু’বাড়ির মধ্যে যাতায়াত ঘন হলেও প্রেমিকের সঙ্গে তাঁর মা-বাবার কথোপকথনে আগ বাড়িয়ে মতামত জানাবেন না। প্রত্যেক সম্পর্কেই ব্যক্তিগত পরিসর থাকে। সেটা সম্মান করাও জরুরি।

অনেক সময়ে দেখা যায়, ছোটবেলা থেকে চেনা-জানা পাড়ার কাকিমাই আপনার হবু শাশুড়ি হতে চলেছেন। অনেকেই ভাবেন, এতে আপনার কাজটা অর্ধেক সারা। তবে সে ক্ষেত্রেও জটিলতা আসতে পারে। কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে দরকার শুধু ভালবাসা ছড়ানো। তা হলেই দেখবেন, পাড়ার পুরনো কাকিমাই হবু শাশুড়ির রূপে আপনাকে চোখে হারাচ্ছেন!

শাশুড়ি-বউমার সম্পর্ক মানেই যে তা জটিল এবং দ্বন্দ্বমূলক—

এই ধারণা থেকে বেরনোই ভাল। আর সত্যিই কি আপনি নিজের পরিবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শাশুড়িকে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাববেন? বরং বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার দিয়েই হাত বাড়ান। বিশ্বাস, ভরসা তো বাড়বেই। দেখবেন, শাশুড়ি-বউমার দ্বৈরথ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তখন সংসারযুদ্ধ জয় করতে প্রস্তুত!

মডেল: অঙ্কিতা, সুস্মেলি; ছবি: অমিত দাস; মেকআপ: প্রিয়া গুপ্ত

অঙ্কিতার পোশাক: অভিষেক নাইয়া

লোকেশন: লাহা বাড়ি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন