Art Exhibition

বিশ্বসত্তার শিকড়ে নারীপ্রকৃতি

নাতাশা সম্প্রতি কলকাতাবাসী হয়েছেন, কিন্তু তাঁর জন্ম-কর্মজীবন সব‌ই অসমে। শুধু অসম বললে বোঝানো যাবে না ঠিক, তিনি আদতে বেড়ে উঠেছেন অনবদ্য চা-বাগান পরিবৃত এক স্বপ্নের উপত্যকায়।

শমিতা বসু

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:১২
Share:

বিশ্বসাথে: অ্যাকাডেমিতে নাতাশা দত্ত রায়ের একক প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।

গত অক্টোবরে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে নাতাশা দত্ত রায়ের তৃতীয় একক প্রদর্শনী হয়ে গেল। নাম দিয়েছিলেন, ‘সিলভান রেভারি’! অর্থাৎ, বনাঞ্চলে স্বপ্নবিহ্বলতা। বনভূমির প্রতি ভালবাসা দেখা গেল তাঁর ছবিতে।

নাতাশা সম্প্রতি কলকাতাবাসী হয়েছেন, কিন্তু তাঁর জন্ম-কর্মজীবন সব‌ই অসমে। শুধু অসম বললে বোঝানো যাবে না ঠিক, তিনি আদতে বেড়ে উঠেছেন অনবদ্য চা-বাগান পরিবৃত এক স্বপ্নের উপত্যকায়। সেখানকার ঘন জঙ্গলে, পাহাড়ের ঢালে, আকাশছোঁয়া গাছের গুঁড়িতে জড়ানো লতাপাতার সঙ্গ করে শিল্পীর বেড়ে ওঠা। সেখানেই নাতাশার ছবি আঁকার হাতেখড়ি। তাঁর ছবিতেও তাই শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত বনাঞ্চলের হারানো দিন ফিরে পাওয়ার আকুলতা।

বিশ্বসাথে: অ্যাকাডেমিতে নাতাশা দত্ত রায়ের একক প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।

কিন্তু যে সব ছবি দর্শক প্রদর্শনীতে দেখতে পেলেন, সেখানে আরও অন্যান্য অনুভূতির কথাও আছে। এক দিকে যেমন একটু মনকেমন করা, অন্য দিকে পাতাঝরা গাছের বিরহবেদনা, ধৈর্য, আবার শীত শেষের অপেক্ষা এবং শেষে প্রকৃতিতে বসন্তের প্রাণোচ্ছলতার গাথা।

নিজের ছবির ভিতর দিয়েই একান্ত ভাবে হারিয়ে যাওয়া দিন ফিরে পাওয়ার বাসনায় পদ্যের সন্ধান পাওয়া যায় নাতাশার ছবিতে।‌ আবার একটা যেন যাত্রাপথের নির্দেশও আছে ছবিগুলিতে।‌ আশা হারানো এবং ফিরে পাওয়ার ব্যাপারটাকে ধরতে চেয়েছেন তিনি, নিজের কাজে। তাঁর ঘরের স্মৃতি বাঙ্ময় হয়ে যেন বিরাজমান। শিল্পী বিশ্বাস করেন, জীবনের ধন কিছুই যায় না ফেলা। সময় এবং দূরত্বের ব্যবধান কাটিয়ে আবার জীবনকে নতুন করে ফিরে পান তিনি। কবির ভাষায় ‘তোমায় নতুন করে পাবো ব’লে হারাই ক্ষণে-ক্ষণ’।

বিশ্বসাথে: অ্যাকাডেমিতে নাতাশা দত্ত রায়ের একক প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।

নাতাশার একটি ছবির নাম ‘সুন্দরী’। এই গাছের কাঠ দিয়ে মানুষ সভ্যতার কাঠামো বানায়। ব্রিজ, নৌকা, বাড়ির কাঠের কাজ, যন্ত্রপাতির হ্যান্ডল ইত্যাদি।‌ সুন্দরী গাছের কাঠে অনেক ওষুধের সন্ধান পেয়েছে মানুষ, বহু বছর আগে। এটি প্রধানত সুন্দরবন অঞ্চলের এবং বাংলাদেশের জলাজমির গাছ। গাছের ছবিতে বেশ একটা একসঙ্গে বাঁচার আগ্ৰহ দেখা যায়। নিজের অজস্র শিকড় দিয়ে মাটি আঁকড়ে থাকে সুন্দরী। ঠিক যেমন মানুষ নিজের শিকড়, অতীত নিয়ে বাঁচতে চায়। আবার উপরে উঠে সুন্দরী ডালপালা মেলে এমন ভাবে নিজেকে বিলিয়ে দেয় আকাশের বুকে, যে রকম মানুষ‌ও বড় হয়ে সমাজ-সংসারে মিলে মিশে থাকে। শিল্পীর ছবিতে একটা দরাজ মেজাজ ধরা পড়েছে।

অপর একটি ছবির নাম ‘স্বপ্ন-১’। ছবিতে শিশুসুলভ একটা বিশুদ্ধতা ধরা যায়। ‘যদি এমনটি হত’, হয়তো বলতে চেয়েছেন নাতাশা। তাঁর ছোটবেলার অবলম্বন আশ্রয়স্থল। চা-বাগানের শান্ত জনমানবহীন পাহাড়িয়া সৌন্দর্য। সেখানে কি জলের দেখা পেয়েছিলেন কোনও ভাবে? কিন্তু এ তো তাঁর স্বপ্নের ছবি। এখানে আকাশ, সূর্য, চা গাছ, বয়ে যাওয়া জল সব একসূত্রে বাঁধা। জলরঙের ছবি এটি।

বিশ্বসাথে: অ্যাকাডেমিতে নাতাশা দত্ত রায়ের একক প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।

এর সঙ্গে দর্শক আর একটি ছবি দেখলেন, যার নাম ‘এনশিয়েন্ট ভেনস’।‌ পুরনো শিরা-উপশিরা। বেশ প্রাচীন গাছপালার, বিশেষত বট-অশ্বত্থ গাছের মোটা গুঁড়ি উপরে দৃশ্যমান হলেও, মাটির নীচে সেগুলির অস্তিত্ব প্রায়শই অদেখা, অবাস্তব একটি জিনিস। কিন্তু এখানে নাতাশা দেখালেন, সেই গাছের গুঁড়ি হাজার হাজার শিকড় হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষণা করছে। নীচে ওরা শাসনমুক্ত হয়ে যে দিকে মন চায় সে দিকেই শাখা মেলে, মিলিত হয় একে অপরের সঙ্গে, সন্তান প্রসব করে। তাদের এক অদ্ভুত সংসার মাটির নীচে। গাছের প্রতি অফুরন্ত ভালবাসার প্রতীক এই ছবি। ছবিটা কাগজে অ্যাক্রিলিকে করা।

আর একটি ছবির নাম ‘ভ্যালি অব মেমোরিজ়’। এখানে উঁচু-নিচু পার্বত্যভূমি এবং তার পিছনের আকাশে সূর্যোদয়ের ইঙ্গিত। রঙের বাহার আছে এই ছবিতে। নতুন দিনের আহ্বানে পাখিরা যেন দূরাকাশে কোলাহলমুখর। ছবিতে জলরঙের ব্যবহার দেখা যায়।

এ ছাড়াও ‘ট্রি অব হোপ’ ছবিতে গাছকে আশাবাদী হিসেবে দেখিয়েছেন নাতাশা। এখানেও একটা এগজ়িস্টেনশিয়াল ভাব দেখা যায়। যতই ওদের মাটিতে বদ্ধ রাখে মানুষ বা স্বয়ং প্রকৃতি, ওরা মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডালপালা মেলে আপন শর্তে নিজের মতো করে বাঁচতে সক্ষম। এটি কাগজে জলরঙের কাজ।

আরও কিছু ছবি যেমন ‘সানডাউন’, ‘দ্য হোম’, ‘মস অন মেমোরিজ়’, ‘মিডনাইট রেভারি’ ইত্যাদিতে বেশ একটা ত্রিমাত্রিক প্রভাব আনতে পেরেছেন নাতাশা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন