সুগন্ধী বললেই মনের মধ্যে কী ভেসে ওঠে? স্নিগ্ধ ফুলের গন্ধ, টাটকা ফলের এসেন্স, টুকরোটাকরা মশলা কিংবা মন মাতানো চন্দন সুবাস তো? সুগন্ধী আসলে তা-ই। কিন্তু বাজার চলতি সুগন্ধী মানেই তাতে এগুলো ছাড়়াও থাকবে গাদা গাদা রাসায়নিক! সিন্থেটিক পারফিউম ব্যবহার করে ত্বকে র্যাশ বেরোনোর ঘটনাও বিরল নয়। তাই হাতেনাতে যদি শিখে যান, কেমন করে বা়ড়িতেই কোনও রাসায়নিক ছাড়া সুগন্ধী বানানো যায়, কেমন হয়? বাহারি বোতলে ভরে ডিওয়াইআই (ডু ইট ইয়োরসেলফ) পারফিউম উপহার দিতে পারেন বা সিগনেচার সেন্ট হিসেবে নিজেই ব্যবহার করতে পারেন। রইল পারফিউম বানানোর কয়েকটা সহজ উপায়।
শুরুর কথা
ডিওয়াইআই পারফিউমে সব প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করাই ভাল। সিন্থেটিক রাসায়নিকের বদলে এই অর্গ্যানিক সুগন্ধীতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের এসেনশিয়াল অয়েল। এগুলো জনপ্রিয় অনলাইন সাইটে পাবেনই। তা ছাড়াও নিউ মার্কেট চত্বর বা নাখোদা মসজিদের লাগোয়া এলাকায় পাবেন মনমাতানো সব নির্যাস তেল। সাধারণত হাতে বানানো সুগন্ধী বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয় না। সে ক্ষেত্রে মাথায় রাখুন, নেহাত নির্যাস না কিনে তার অ্যাবসলিউট ফর্মটা কেনার কথা (যেমন জেসমিন অ্যাবসলিউট, ভ্যানিলা অ্যাবসলিউট ইত্যাদি)। অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে আপনার পছন্দের সুবাসটি অ্যাবসলিউট ফর্মে মেশালেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিকে যাবে সুগন্ধ!
কী কী লাগবে?
এসেনশিয়াল অয়েলের কালেকশন বানানো প্রয়োজন। পারফিউম সাধারণত তিন-চারটে নির্যাস তেলের ব্লেন্ডিংয়ে তৈরি হয়। পারফিউমারির ভাষায় যাকে বলা হয় টপ নোটস, মি়ডল/হার্ট নোটস, বটম/বেস নোটসের ব্লেন্ডিং। এক একটা নির্যাস তেলের এক এক রকম দাম। গোলাপেরই দশ রকমফের পাবেন। সে রকমই রকমফের রয়েছে চন্দনেরও। দামও বিভিন্ন রেঞ্জের। শখটা একটু খরচসাপেক্ষ। তবে কমদামি জিনিস কিনে ঠকে যাওয়ার চেয়ে একটু দেখেশুনে কিনুন। এসেনশিয়াল অয়েলের সঙ্গে লাগবে ক্যারিয়ার তেল (যেমন হোহোবা, তিল, নারকেল বা সুইট আমন্ড অয়েল। এগুলো ব্যবহার হয় পারফিউম অয়েল বানানোর জন্য) বা নিউট্রাল অ্যালকোহল (স্প্রে ফর্মের জন্য)। পারফিউমার্স অ্যালকোহল অনলাইনে পাওয়া যায়। ভাল মানের ভদকাও ব্যবহার করতে পারেন, কারণ ভদকার নিজস্ব চ়ড়া গন্ধ হয় না। লাগবে একটা ড্রপার এবং পারফিউম স্টোর করার জন্য কতকগুলো কাচের পাত্র। মিক্সিংয়ের জন্য টেস্টটিউব, ব্লেন্ডিংয়ের জন্য মেসন জার (সব উপকরণই অনলাইনে পাবেন)।
মনে রাখবেন
জোরালো নির্যাস তেলে হোমমেড পারফিউমের গন্ধ স্থায়ী হবে ঠিকই, কিন্তু খুব চড়া হবে না। এতে যেহেতু সিন্থেটিক কিছু ব্যবহার হয় না, তাই এই পারফিউম লাগালে যে মাইলের পর মাইল গন্ধ ছড়িয়ে পড়বে, এমনটা হবে না কিন্তু। পারফিউম বানানোও ধৈর্যসাপেক্ষ। বানানো হয়ে গেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার করতে পারবেন না। কম করে দু’সপ্তাহ ঠান্ডা-অন্ধকার জায়গায় রাখতে হবে। যত সময় রাখবেন, ততই জোরালো হবে সুগন্ধী।
রেসিপি ১
(ধরন: ফ্লোরাল-মাস্ক, ১৫ মিলি)
উপকরণ: বটম/বেস নোটস: স্যান্ডালউড অয়েল ১০ ফোঁটা, হোয়াইট মাস্ক ১৫ ফোঁটা।
মিডল নোটস: রোজ় অ্যাবসলিউট ৭-৮ ফোঁটা, টিউবরোজ় অয়েল ৭-৮ ফোঁটা, গার্ডেনিয়া অয়েল ৫-৬ ফোঁটা, জেসমিন অয়েল ১-২ ফোঁটা।
টপ নোটস: বার্গামট অয়েল ৩-৪ ফোঁটা, নেরোলি অয়েল ৪ ফোঁটা।
প্রণালী: প্রথমে বটম নোটস টেস্ট টিউবে দিন। ব্লেন্ড করে গন্ধটা নিন। পছন্দ অনুযায়ী স্যান্ডাল বা মাস্ক বাড়িয়ে-কমিয়ে নিন। তার পরে একে একে মিডল নোটস দিন। বুঝে দেখুন, কোন ফুলের গন্ধটা বেশি চাই আপনার। তার পর টপ নোটস দিয়ে আবার ব্লেন্ড করুন। ব্লেন্ড করার জন্য স্টারার ব্যবহার করতে পারেন, তবে সেটাও কাচের হতে হবে। তার পর ক্যারিয়ার তেল বা পারফিউমার্স অ্যালকোহল অথবা ভদকা। ১৫ মিলির মাপ মতো দেবেন। বেশি-কম হলে পরে অ্যাডজাস্ট করে নেবেন। তার পরে গোটা মিশ্রণটা কাচের জারে ভরে তিরিশ সেকেন্ড ভাল করে ঝাঁকান। এতে তেলের অণুগুলো ভেঙে গন্ধটা খুলবে ভাল। তার পরে ওই জারেই ৪৮ ঘণ্টা রেখে দিন। মাঝেমধ্যে বার করে নেড়ে নিন। সময়টা পেরোলে পরিষ্কার মসলিন কাপড়ে ছেঁকে নিন ব্লেন্ড। অ্যালকোহল বেসের হলে এতে এসেনশিয়াল অয়েলের না মেশা অংশগুলো ছাঁকা হয়ে যাবে। পারফিউম অয়েল হলেও ছেঁকে নিন। কম পক্ষে দু’সপ্তাহ রেখে দিন।
রেসিপি ২
(ধরন: ভ্যানিলা গোরমান্ড,১৫ মিলি)
উপকরণ: টপ/বেস নোটস: ভ্যানিলা অ্যাবসলিউট ১৫-২০ ফোঁটা, ফ্রিসিয়া-পিওনি অয়েল ৬-৭ ফোঁটা।
মিডল নোটস: হানিসাক্ল অয়েল ৪-৫ ফোঁটা, গ্রিন অ্যাপল অ্যাবসলিউট ২ ফোঁটা।
টপ নোটস: বেনজ়য়েন অয়েল ৩ ফোঁটা, সিডারউড অয়েল ৩ ফোঁটা।
প্রণালী: এতেও বটম, মিডল এবং টপ নোটস পরপর দিয়ে পছন্দ মতো মাত্রা বাড়িয়ে-কমিয়ে ব্লেন্ড করুন। তার পরে অ্যালকোহল বা তেল মেশান। একই পদ্ধতিতে ৪৮ ঘণ্টা রেখে ছেঁকে নিন মসলিনে। পারফিউম বোতলে ভরে রেখে দিন দু’সপ্তাহ বা তারও বেশি সময়। এর চেয়ে লোভনীয় সুগন্ধ সচরাচর পাবেন না, গ্যারান্টি!
মডেল: মঞ্জরী; ছবি: অমিত দাস
মেকআপ: উজ্জ্বল দত্ত; পোশাক: গ্লোবাস, লেক মল
ফুড পার্টনার: টিন্নি দ্য ধাবা, গোলপার্ক