বাজে করুণ সুরে...

কাল তাঁর প্রয়াণের পনেরো বছর। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। শান্তিনিকেতনে, ‘আনন্দধারা’ আবাসে মোহর-হারা একাকী জীবনে অন্তরের কথায় ভাসলেন চল্লিশ বছরের ছায়াসঙ্গী গোরা সর্বাধিকারী। শুনলেন আবীর মুখোপাধ্যায়মোহরকে মদ খাওয়ার জন্য জোর করছেন এক গায়ক! মোহর কিছুতেই বরফডোবা কাটগ্লাসে ঠোঁট ছোয়াবেন না! কলকাতার গায়কও নাছোড়! ‘‘মিসেস ব্যানার্জি, আপনার উচিত!’’ ‘‘শুনুন, ওসব চলে না আমার!’’ ‘‘সবাই যখন খাবে, আপনার অন্তত ঠোঁটে লাগানো উচিত...’’ ‘‘আপনি আমাকে কোনটা উচিত, কোনটা অনুচিত শেখাবেন!’’

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০৫
Share:

মোহরকে মদ খাওয়ার জন্য জোর করছেন এক গায়ক!

Advertisement

মোহর কিছুতেই বরফডোবা কাটগ্লাসে ঠোঁট ছোয়াবেন না!

কলকাতার গায়কও নাছোড়!

Advertisement

‘‘মিসেস ব্যানার্জি, আপনার উচিত!’’

‘‘শুনুন, ওসব চলে না আমার!’’

‘‘সবাই যখন খাবে, আপনার অন্তত ঠোঁটে লাগানো উচিত...’’

‘‘আপনি আমাকে কোনটা উচিত, কোনটা অনুচিত শেখাবেন!’’

‘‘না, না, খেতে তো বলছি না ঠোঁট ছোঁয়ালেই হল। স্রেফ সঙ্গ দেওয়া।’’

‘‘কী‌ বলছেন!’’

‘‘অন্তত এক শিপ...’’

‘‘চুপ করুন! আমি রবিঠাকুরের কাছে গান শিখেছি। কত বার তাঁর নিজের হাতে তুলে দেওয়া বায়োকেমিক ওষুধ খেয়েছি। তাঁর গান গাইতে গাইতে বড় হলাম। আর এখানে বসে মদ খাব? এক্ষুনি আমি চলে যাচ্ছি এখান থেকে! কখনও আর এ সবের মাঝে ডাকবেন না!’’

সে দিন এইচএমভি-র পার্টি ছেড়ে চলে এসেছিলেন মোহর। পরে, রেকর্ড কোম্পানির এক কর্তা ক্ষমা চেয়ে, মোহরকে বহু অনুরোধে ফিরিয়ে আনেন। কিংবদন্তি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন সেই গায়কও। অনেক পরে দু’জনের অনেক রেকর্ডও বেরিয়েছে। বহু অনুষ্ঠানে এক সঙ্গে গেয়েওছেন।

এ ঘটনা যে সময়ের, তখন নলিন সরকার স্ট্রিটে গ্রামোফোন কোম্পানির রিহার্সাল হত। এইচএমভির কর্তা ছিলেন পি কে সেন। সন্তোষ সেনগুপ্তের নির্দেশনায় সেবারই রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য ‘শ্যামা’ রিলিজ করেছিল। আর সেই উপলক্ষে বাংলা গানের নক্ষত্র সমাবেশ ঘটেছিল সে দিনের রাত-পার্টিতে।

“কে ছিল না সে পার্টিতে! বাংলা গানের নক্ষত্র সমাবেশ! কী জানেন, সে দিন মোহরদি মদ খাওয়ার কথা শুনে খুবই মর্মাহত হয়েছিলেন। ভিড়ের মধ্যে থেকে হঠাৎ এক গায়ক এসে তাঁকে জোর করছেন দু’পাত্তর খাওয়ার জন্য, এমনটা বুঝি ভাবতেও পারেননি! আসলে কখনও মানুষটাকে নেশা করতে দেখিনি,” বলছিলেন গোরা।

গোরা সর্বাধিকারী। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ে সঙ্গে কোনও রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও, চল্লিশ বছর ধরে এই মানুষটিই ছিলেন মোহর ও তাঁর পরিবারের বিশ্বস্ত সঙ্গী। মোহরের সঙ্গে ছিল তাঁর নিবিড় বন্ধুতা। এখনও ‘মোহরদি’-র স্মৃতিকে সন্তর্পণে সখ্য করে শান্তিনিকেতনে শিল্পীর ‘আনন্দধারা’ বাড়িতেই নিভৃত প্রহর কাটে গোরার।

“কী বলেনি লোকে আমাদের দু’জনকে নিয়ে! ঘরে-বাইরে এক সময় বলত। কোনও দিন মোহরদি কাউকে সে নিয়ে কিছু বলেনি। বলিনি আমিও! রুচিতে বাধত। কখনও সখনও হয়তো রাগ হত খুব। এখন বুঝি, সবই ছিল ওদের ঈর্ষা! ওরা বুঝে ছিল, মোহরদিকে জড়িয়ে গোরার নামে বললে, বাজার গরম হবে। শান্তিনিকেতনী গসিপ হবে!”

দেশিকোত্তম নেওয়ার দিনে মোহর-লতা।

গসিপ?

“গসিপই তো! একে আর কী বলবেন? এমনও শুনতে হয়েছে, আমি এসে পড়ার জন্য মোহরদি-বীরেনদার দাম্পত্যে চিড় ধরে! বীরেনদা আসলে লেখা-পড়ার জগতের মানুষ ছিলেন। রাত জেগে লিখতেন। উনি এই যে লিখছেন, সারাক্ষণ বইয়ের মধ্যে ডুবে রয়েছেন, এতে মোহরদি বলতেন, ‘ও ওর কাজ করছে করুক’! বীরেনদা মোহরদির গানের খুব ভক্ত ছিলেন। ওঁদের নিজেদের মধ্যে দারুণ একটা কেমিস্ট্রি ছিল। অথচ, বীরেনদার সঙ্গে মোহরদির দাম্পত্য নিয়ে একসময় খবরের কাগজেও চর্চা হয়েছে। তখনকার কলকাতা-শান্তিনিকেতনের শিল্পীরাও রটনা করেছে ঢের। সে সব গসিপ এমন লোকেরা করতেন, যে আজ তাঁদের নাম বললে চমকে উঠবেন! প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক থেকে বিশিষ্ট লেখকরা রয়েছেন সেই তালিকায়। সুচিত্রাদিকে‌ এ নিয়ে দুঃখ করতে শুনেছি।”

কিন্তু কেন এমন গসিপ ছড়াল?

“চল্লিশ বছর মোহরদির সঙ্গে কাটানো, সেটাই ছিল লোকের কাছে বড় আপত্তির। একটা বাইরের লোক মোহরদির এত আপন হয়ে গেল! এত কাছের হয়ে গেল? এখন তো ওঁর পরিবারের লোকেরাও বয়কট করেছে আমাকে! জানেন, একা পড়ে থাকি। এত বড় বাড়িটায় একা!”

মেঘের খপ্পরে পড়েছে শান্তিনিকেতন। আকাশ কালো করা অন্ধকারের ভিতর মেঘ-মন্তাজে ঢেকে যাচ্ছে আশ্রমের পথ-ঘাট। ভুবনডাঙার বাঁধ, শালবন, কোপাই নদীর ওপারে গ্রাম। আর হাওয়া দিচ্ছে জোর। বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ। একটু পরেই সিংহ সদনের কা‎‎র্নিশ ছুঁয়ে শুরু হল বৃষ্টি।

বৃষ্টির বন্দিশ শুনতে শুনতে গুরুপল্লি থেকে আম্রকুঞ্জের দিকে আম কুড়তে দৌড়চ্ছে দুই আশ্রম বালিকা। দৌড়, দৌড়!

যেন বৃষ্টির মর্মর ছিঁড়ে, বাদলের বাতাসে উড়ে যেতে চায় দুই সখি। সে দিনই প্রথম রবিঠাকুরের সঙ্গে দেখা মোহরের!

‘‘শান্তিনিকেতনে থাকলেও তার আগে কখনও রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মোহরদির কথা হয়নি। তখন কত বয়েস মোহরদির? ন-দশ বছর। সেই ঝড়ের বিকেলে, বৃষ্টিতে ভিজে একসা হয়ে বন্ধুর সঙ্গে গিয়ে উঠলেন কবির শ্যামলী বাড়িতে। সে দিন, সেখানে বসেই লিখছিলেন রবীন্দ্রনাথ। উনি মোহরদি আর তাঁর বন্ধুকে ডেকে তাঁদের নাম জিজ্ঞেস করে জানতে চান, তাঁরা গান জানেন কিনা। কার মেয়ে। তখনও মোহরদি ‘কণিকা’ হননি, অণিমা। মোহরদি কবিরই একটি বর্ষার গান শুনিয়েছিলেন কবিকে। সেই বিকেলেই অণিমা নাম বদলে কণিকা রাখলেন রবীন্দ্রনাথ। মোহরদির কাছেই শুনেছি। খুব বলতেন, বৃষ্টি থেমে-যাওয়া আলোর বিকেলে অন্য এক মোহরের জন্ম-কথা। আর গাইতেন বেহাগে ওই গানটা, ‘শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে/ তোমারি সুরটি আমার মুখের ’পরে, বুকের ’পরে।’’

কবেকার স্মৃতির মেহগনি দেরাজ খুলে ডাউন মেমোরি লেনে হাঁটছিলেন গোরা। যেন বা জলপাই কাঠের ঘাতক এস্রাজ বেজে চলেছে নিভৃতে।

একলা ‘আনন্দধারা’ বাড়ি জুড়ে শুধু এলোমেলো স্মৃতি। বাকসো উপচে পড়া সাদাকালো ফটোগ্রাফ, উলঢাল সেলফ, দেশ-বিদেশের মানপত্র, হারমোনিয়ম, ভাঙা রেকর্ড— সবখানে স্মৃতির নিয়ত ওড়াউড়ি!

স্মৃতির বাঁধন খুলে দেওয়া হাওয়ায় হাওয়ায় পাক খেয়ে উড়ছে গীতবিতান-এর ছেঁড়া মলাট।

রবিঠাকুরের গান শিখতে জার্মানি যাওয়ার মোহ ছেড়ে একদিন শান্তিনিকেতন চলে এসেছিলেন গোরা। রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যাডমিশন টেস্ট হচ্ছে শুনে ইন্টারভিউ দিয়ে দেন।

জর্জ বিশ্বাস, সুচিত্রা মিত্র, সুমিত্রা সেনের পাশে।

কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অবশ্য তখনও তাঁর আলাপ হয়নি। ইন্টারভিউ বোর্ডে তাই তাঁকে প্রথমে চিনে উঠতে পারেননি। তাঁকে দেখে মনে হয়েছিল, পুজোর সময় গানের বইতে ছাপা একজনের মতো অবিকল তাঁর মুখ! মনের গহনে, গানের খেয়া শুরু সেই তখনই!

“মনে হয়, এই তো সে দিন! অথচ, দেখতে দেখতে পেরিয়ে গিয়েছে কয়েক দশক। ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢুকে, ভিতরে দেখি বসে আছেন একজন ওস্তাদজি। প্রায় ধমক দিয়ে বসতে বললেন। পাশে একজন তানপুরা বাজাচ্ছেন। তাঁরও পাশে বসে আরও কয়েকজন সুন্দরী মহিলা। একজনকে দেখে চেনা মনে হল। কোথায় যেন ছবি দেখেছি... কোথায় যেন... ভাবছি! মনে পড়ল, এইচএমভির পুজোর রেকর্ডের সঙ্গে গানের বইতে ছবি দেখেছি ওই সুন্দর মুখের মহিলার। উনিই মোহর! কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভয় করতে লাগল। মোহরের সামনে রবীন্দ্রনাথের গান গাইব! তখন একটাই রবিঠাকুর জানতাম। ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি’। গাইলাম।”

শুরু হল গোরার গানের দীক্ষা। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সখ্য বাড়ল তাঁর। সঙ্গীতভবনে সে সময় গান-বাজনা শেখাচ্ছেন শান্তিদেব ঘোষ, বীরেন পালিত, সুশীল ভঞ্জচৌধুরী, ভি ভি ওয়াজেলওয়ার, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেনরা।

তখনকার শান্তিনিকেতনে এত বাড়ি-ঘর হয়নি। এত গাড়িও চলাচল করত না আশ্রম এলাকায়। স্বামী বীরেনবাবুর সঙ্গে মোহর থাকতেন বিশ্বভারতীর কোয়ার্টারে।

সবুজ মাঠ পেরিয়ে মোহর হাঁটতে হাঁটতে আসতেন সঙ্গীতভবন, গানের ক্লাসে। কোনও দিন তাঁর হাতে থাকত গানের খাতা, কোনও দিন গীতবিতান।

শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রথিতযশা শিল্পীদের মধ্যে ‘মোহরদি’-কেই স্বতন্ত্র মনে হয়েছিল গোরার। গানের ক্লাসে তাঁর গান শুনে কেবলই তাঁর মনে হত, “মোহরদির গলার গান যেন বিরামহীন আত্মদীক্ষার গান। কম হলেও অন্য গানও শুনেছি তাঁর গলায়। কিন্তু রবিঠাকুরের গানে ওঁর গলায় অদ্ভুত এক মনকেমনের মীড় লেগে থাকত।”

রবীন্দ্রনাথের গান ছাড়া অন্য কারও গান মোহরকে গাইতে না শোনা গেলেও, ১৯৩৭ সালে জীবনের প্রথম রেক‎র্ডটি করেছিলেন আধুনিক গানের। সে কালের বিখ্যাত সুরকার হরিপদ চট্টোপাধ্যায়ের সুরে দুটি গানের কথা লিখে দিয়েছিলেন কবি নীহারবিন্দু সেন।

রেকর্ডের প্রথম গানটি ছিল, ‘ওরে ওই বন্ধ হল দ্বার’, দ্বিতীয় গানটি ‘গান নিয়ে মোর খেলা’।

হিন্দুস্থান রেকর্ড কোম্পানির ট্রেনার যামিনী মতিলালের তত্ত্বাবধানে ’৩৮ সালে সে রেকর্ড বাজারে প্রকাশিত হতেই গান শুনে কষ্ট পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ!

‘যাত্রাপথের আনন্দগান’ বইতে শৈলজারঞ্জন মজুমদার লিখছেন, “গরমের ছুটির পর শান্তিনিকেতন ফিরে এসেছি, গুরুদেবকে প্রণাম করছি, উনি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, জানো, তোমার ছাত্রী মোহর গান রেকর্ড করেছে? এটা আমার নয়, বাইরের! কথাটি বললেন বেশ অভিমানের সুরে!’’

সে বছরই হিন্দুস্থান থেকেই প্রকাশিত হল মোহরের প্রথম রবীন্দ্রনাথের গানের রেকর্ড।

এক পিঠে ছিল, কবির ছিয়াত্তর বছর বয়সে লেখা প্রেমের গান ‘মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে’, অন্য পিঠে বিভাস-কীর্তনে গাঁথা ‘না না না ডাকব না’। গান দু’টি শুনে ভালো লেগেছিল কবিরও। তিনি মোহরের গলায় আরও চারটি গানের রেকর্ড শুনে যেতে পেরেছিলেন। ‘ওগো তুমি পঞ্চদশী’, ‘ওই মালতীলতা দোলে’, ‘ঘরেতে ভ্রমর এল গুনগুনিয়ে’ এবং সেতারী সুশীলকুমার ভঞ্জচৌধুরীর গৎ-ভাঙা সুরে কবির লেখা বর্ষার গান ‘এসো শ্যামলসুন্দর’।

“মোহরদি অন্যদের গান শুনতেন। হয়তো কখনও সখনও ঘরোয়া আসরে গাইলেও, রেকর্ড করার ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন,” বলছিলেন গোরা, “একবার সলিল চৌধুরী কথা ও সুরে দুটি গণসঙ্গীত রেকর্ড করেছিলেন। রেকর্ড হয়ে যাওয়ার পরও চিঠি লিখে সরে এলেন। এমনই ছিল রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর গানের প্রতি বিশ্বাস। কখনও সেই বিশ্বাস থেকে সরতে দেখিনি। অনেকেই তাঁকে প্রশ্ন করেছেন, আপনি কেন কলকাতায় গিয়ে সেভাবে গান-বাজনা করছেন না? আলাদা কোনও প্রতিষ্ঠান করছেন না? মোহরদি বলতেন, আমার একটাই প্রতিষ্ঠান, সেটা রবিঠাকুরের সঙ্গীতভবন। দ্বিতীয় কোনও গানের প্রতিষ্ঠান, আমি আর করব না।’’

মোহরের গাওয়া সলিল চৌধুরীর সেই গণসঙ্গীত দুটি এইচএমভি থেকে প্রকাশিত হয়নি। গান দুটি ছিল, ‘প্রান্তরের গান’ ও ‘আমার কিছু মনের আশা’। বাজারে এসেছিল অন্য এক শিল্পীর কণ্ঠে। সলিল তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, অন্য কোনও গান গাওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বভারতীর আপত্তির কথা জানিয়ে মোহর তাঁকে চিঠি দিয়েছিলেন।

কী লিখেছিলেন মোহর?

সলিলবাবুকে লেখা চিঠিতে মোহর লিখেছিলেন, “কর্তৃপক্ষ বলেছেন, তোমার গান গাইলে আমাকে শান্তিনিকেতন ছাড়তে হবে!”

অনেক পরে এই সলিল চৌধুরীর করা মিউজিকেই প্রথম রবীন্দ্রনাথের গান রেকর্ড করেন গোরা।

মোহরের রেকর্ডিং থাকলে তখন গোরাকেই যেতে হত সঙ্গে। একদিন গ্রামোফোন কোম্পানিতে গিয়েছেন। কোম্পানির কর্ণধার পি কে সেন স্টুডিওতেই ছিলেন। মোহরকে ডেকে বললেন, ‘‘এই ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরিস কেন রে মোহর?’’

মোহর বললেন, ‘‘ও ভাল গান করে। ওর গান রেকর্ড করুন।’’

রেকর্ড হল গোরার গান। সেই প্রথম রবীন্দ্রনাথের গানে মিউজিক করলেন সলিল চৌধুরীও! প্রথম গানটি ছিল মিশ্র কাফি রাগে ‘হাসি কেন নাই ও নয়নে।’

“মোহরদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ল গানের ক্লাস থেকে নানা অনুষ্ঠান ও এমন সব রেকর্ডিং-এ গিয়ে। তাঁর বাড়ি, পরিবারের সঙ্গেও একটু একটু করে জড়িয়ে পড়লাম।

সে সময় দিল্লির এক পঞ্জাবি মেয়ে গান শিখত সঙ্গীতভবনে। মোহরদির কাছে যাওয়া নিয়ে তাঁর সঙ্গে খুব রাগারাগি হত। দিদির খুব প্রিয় ছিল সে’ও। তবে, মোহরদি সারাক্ষণ ‘গোরা গোরা’ করত বলে, ও খুব রেগে যেত! পাশ করে বিশ্বভারতীতেই গান শেখাতে শুরু করলাম। কিন্তু কোথায় থাকব? বাবা আপত্তি করেছিল, তবুও থাকতে শুরু করলাম বীরেনদা-মোহরদির সঙ্গেই। ঠিকানা বদল হতে হতে একদিন আমরা তিনজনে এসে উঠলাম এই আনন্দধারা বাড়িতে।”

শৈলজারঞ্জন মজুমদার

সবচেয়ে নিকটের ছাত্রী, ও আমার কাছে কোনও দিনও কণিকা নয়, ও আমার মোহর, আমার মেয়ে। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন মোহর আমার কাছে গান শিখুক। ওর কণ্ঠ তো দেবদত্ত। রবীন্দ্রসঙ্গীতকে যারা আনন্দের ও প্রাণের সঙ্গী হিসাবে জানে মোহর তাদেরই একজন।

বুদ্ধদেব বসু

গ্রীষ্মে সেই রতন-কুঠিরই মাঠে ব’সে একটি হালকা ছিপছিপে মেয়ে তার হালকা গলায় সন্ধ্যার বাতাসে ভাসিয়ে দিয়েছিল এক আশ্চর্য প্রশ্ন— ‘‘আমার প্রাণের মাঝে সুধা আছে চাও কি?’ মোহর অথবা কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতে সেই গান এখনও আমার মনে পড়ে।

আবু সয়ীদ আয়ুব

এই দুর্ভাগা দেশকে আপনার কণ্ঠমাধুরী ও কলাসিদ্ধির দ্বারা আনন্দিত করুন, সুস্থ করুন। বিশেষত যখন রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি শ্যামার কথা ভাবি তখন আমি অভিভূত হয়ে যাই। এই সূক্ষ্ম জটিল নানা বিপরীত অনুভূতির টানাপোড়েন ক্ষতবিক্ষত নারীকে আপনি ছাড়া আর কে এমন সার্থক রূপ দিতে পারত? এই পাপিষ্ঠাকে রবীন্দ্রনাথ আশ্চর্য ট্র্যাজিক মহিমা দান করেছেন। কিন্তু আমাদের এবং কবির মাঝখানে একজন interpreter আবশ্যক ছিল। সেই সুযোগ্য interpreter কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপনার কাছ থেকে আমরা অনেক পেয়েছি।

জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ

যখন আমার কাছে আসতেন, তখন আমারও যাতায়াত ছিল শান্তিনিকেতনে। তাঁর মধ্যে সঙ্গীতের সমস্ত গুণ দেখেছি। শেখার আগ্রহ ছিল প্রবল। পাঁচের দশকের শেষ দিকে কণিকা ভজন, গীত ও বিভিন্ন গানের নেশায় মাঝে মাঝে আমার কাছে পরামর্শ নেবার জন্য আসতেন। দুই-এক বছর তাঁকে আমি অন্য তালিমও দিয়েছি। গানের গায়কি অন্য সব রাবীন্দ্রিক শিল্পীদের চেয়ে আলাদা। রবীন্দ্রনাথের গানকে দেশ ও বিদেশের মাটিতে জনপ্রিয় করার মূলে যে ক’জন শিল্পীর কথা মনে পড়ে তাঁদের মধ্যে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় উল্লেখযোগ্য নাম।

এন্ড্রুজ পল্লির এ বাড়িজুড়ে যেন মৌ-মাখানো স্মৃতির গন্ধ!

নতুন বাড়িতে উঠে আসার পর শিল্পী-সাহিত্যিকরা অনেকে এলেও, কোনও কোনও শিল্পীর সঙ্গে মোহরের পরিচয় ছিল বিয়ের আগে থেকেই। বিশ্বভারতীর কোয়ার্টারে থাকার সময়েও তাঁরা শান্তিনিকেতন এসেছেন। তাঁদের একজন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। মোহর তাঁর আত্মজীবনী ‘আনন্দধারা’-য় লিখছেন, ‘‘হেমন্ত মুখোপাধ্যায় একবার বালিগঞ্জ প্লেসের বাড়িতে আমাকে বলেছিলেন, তাঁদের বন্ধু বীরেন বন্দ্যোপাধ্যায় গেছেন শান্তিনিকেতন। চাকরি নিয়ে। আমি যেন তাঁর সঙ্গে আলাপ করি। সেই আলাপের পরিণতি হল বিয়ে!’’

হেমন্ত নিজের বিয়ের আগে, শান্তিনিকেতন যেতেন বেলা ও অন্য বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে। লংপ্লেয়িং রেকর্ডে ‘শ্যামা’-য় হেমন্ত বজ্রসেন ও মোহর শ্যামা করেছিলেন। তারপর থেকেই দু’জনের জুটি হিট!

কোথাও ‘শ্যামা’ হলে, অনিবার্য ভাবে এসে পড়ত দু’জনের নাম। সুচিত্রা মিত্রকে সঙ্গে নিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীতে এই সফল জুটিই রেকর্ড করেছিলেন ‘পথ ও পথিক’।

শান্তিনিকেতন এলে, সুচিত্রা মিত্রও চলে আসতেন মোহরের সঙ্গে দেখা করতে। গেট থেকে ঢুকে চিৎকার করে ডাকতেন, ‘‘মোহর, মোহর!’’

বিশ্বভারতী কোয়ার্টার থেকে আনন্দধারা বাড়িতে উঠে আসার পর এই বাড়িতে আমৃত্যু কেটেছে মোহরের। এই বাড়িতেই রবিশঙ্কর থেকে জর্জ বিশ্বাস, হেমন্ত, উত্তমকুমার, সত্যজিৎ, লতার মতো নানা শিল্পী এসেছেন। লতা যেবার বিশ্বভারতীর দেশিকোত্তম সম্মান পেলেন, সেবার মোহরও দেশিকোত্তম পান। লতা আগে থেকেই মোহরকে বলেছিলেন, অনুষ্ঠানের পর, তাঁর আনন্দধারা যাবেন। গিয়েছিলেন। বেশ কয়েক ঘণ্টা দু’জনে কাটিয়েছিলেন।

সুনীল-শক্তির মতো বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্টরা আসতেন মোহরের কাছে। মোহরের খুব অল্প বয়স থেকে দেখা মানুষ, রামকিঙ্করকে নিয়ে সমরেশ বসু যখন ‘দেখি নাই ফিরে’ লিখছেন, তখনও বার বার এসেছেন মোহরের কাছে। দোলের সময় আনন্দধারা হয়ে উঠত চাঁদের হাট।

গোরা এখনও মনে করতে পারেন সেই স্মৃতি।— “কত দিন দেখেছি, সুচিত্রাদি এসেছে। দু’জনে ছাদের সিড়িতে বসে নিভৃতে কাঁদছেন ঝরঝর করে। পুরনো শান্তিনিকেতনের কথা বলতে বলতে কত সময় যে বয়ে যেত! কেন কাঁদতেন ওঁরা দু’জনে!”

কথার মাঝে উঠে গিয়ে কয়েকটা ফটোগ্রাফ নিয়ে এলেন গোরা। ব্রোমাইড প্রিন্ট সে সব সাদাকালো ছবিতে কোনওটায় গোরার দু’পাশে সুচিত্রা-মোহর, কোনওটায় জর্জ বিশ্বাসের সঙ্গে দুই শিল্পী, আবার কোনওটায় শুধুই দুই সখি।

দোল পূর্ণিমায় এসে হয়তো সুচিত্রা ধরেছেন খাম্বাজ-পিলু-বাহারে গাঁথা, কবির প্রেমের গান, ‘ওগো কিশোর, আজি তোমার দ্বারে’। যেই না অন্তরা ধরলেন মোহর, শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে নাচতে উঠলেন সুচিত্রা। সে সব ঘরোয়া অনুষ্ঠানের নানা স্মৃতি এখনও ভিড় করে আসে গোরার মনে, ‘‘সারাজীবন ধরে বহু বহু প্রবাদপ্রতিম শিল্পীর সঙ্গে গান-বাজনা এত করেছি। রবীন্দ্র-নৃত্যনাট্য, সিনেমায় অভিনয় করেছি। গোটা রাত পেরিয়েছে, তাঁদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখের কথায়। কিন্তু সুচিত্রা মিত্র আর মোহরদির মতো সখ্য আর অন্য কোনও মানুষের মধ্যে দেখিনি! এ বাড়িতে ওঁদের দু’জনের সে সব দিনের কথা ভাবলে, এত বড় বাড়িটা যেন গিলে খেতে আসে!”

সুচিত্রা কি একা হয়ে পড়ছিলেন?

নিরুত্তর থাকেন গোরা!

একটু পরে বলেন, “জানি না! তবে সুচিত্রাদির কথায় কেমন যেন একটা নিঃসঙ্গতা ধরা পড়ত শেষের দিকে। মোহরদি বেঁচে থাকতে শেষ যে বার এলেন, নীচের ঘরে বসে দী‎র্ঘক্ষণ গল্প করলেন দু’জনে। মোহরদি তখন অসুস্থ, খুব মনে আছে, পুরনো শান্তিনিকেতনের কথা বলতে বলতে দু’জনের চোখ ভিজে একসা! সুচিত্রাদি বললেন, ‘কত পুরনো কথা মনে পড়ছে। তোরও বয়স হল, আমারও দিন ফুরালো। একা হয়ে যাচ্ছি রে মোহর!’ উত্তরে মোহরদি খুব আস্তে আস্তে বললেন, ‘তুইও একা, আমিও একা!’ কথা যেন ফুরাতে চাইত না দু’জনের। সুচিত্রাদি বলেছিলেন, ‘জানিস মোহর, এই বয়সে এসে একা কথাটার মানে বুঝতে পারছি! তোর গোরা আছে। মনে রাখিস, তোর গোরা আছে!’ উনি এমনই বলতেন। একবার আনন্দধারায় এসেই বললেন, ‘মোহর তুই গোরাকে পেয়েছিস! আমার হিংসে হয়! ও তোর কত খেয়াল রাখে!’ আর একবার, কবির উদয়ন বাড়িতে। সে বার ৭ পৌষের অনুষ্ঠান। সুচিত্রাদি গাইবেন। আমাকে বললেন, ‘গোরা তুমি আজ বাজাও’। তারপর বললেন, ‘কী জানো, রবীন্দ্রনাথের বাড়িতে বসে গান গাইতে একটু নার্ভাস লাগছে! রবীন্দ্রনাথের বাড়িতে গান গাইতে এলেই হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়! হাতটা ধরে দ্যাখো!’ ধরলাম হাত! উনি বললেন, ‘তুই কখনও মোহরকে ছেড়ে যাস না!’”

এখন আর একলা ঘরে মোহরের গান শুনতে পারেন না গোরা। বিমান ঘোষের তত্ত্বাবধানে মোহরের সঙ্গে রেকর্ড করেছিলেন ‘খোলো খোলো দ্বার’, ‘চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে’, ‘বাজাও তুমি কবি’, ‘নূপুর বেজে যায়’-এর মতো গান! সব স্মৃতি!

দেশ-বিদেশে মোহরের সঙ্গে গানের অনুষ্ঠান করতে গিয়ে বর্ণময় সব অভিজ্ঞতার সাক্ষী থেকেছেন গোরা। খুব মনে পড়ে বাংলাদেশের অনুষ্ঠানের কথা। অনুষ্ঠানে গিয়ে তিন মাস ছিলেন সেবার ওদেশে।

মুজিবরের সামনে।

‘‘মুজিবর রহমান স্বাগত জানিয়েছিলেন মোহরদিকে। বীরেনদা নিজের হাতে তোলা গুরুদেবের ছবি আর মোহরদির রেকর্ড নিয়ে গিয়েছিলেন ওঁর জন্য। গিফট হাতে পেতেই মুজিবর বললেন, ‘আপনার কত রেকর্ড ছিল, শয়তানরা সব চুরমার করে দিয়ে গেল! নিজে এসেছেন, এইটেই বড় প্রাপ্তি আমাদের দেশের!’ আর একবার, আশ্রমিক সংঘের অনুষ্ঠানে বম্বে গিয়ে দিলীপকুমারের শ্যুটিং দেখতে হাজির হয়েছিলাম সকলে। পর পর রবীন্দ্র-নৃত্যনাট্যে গান করার ফাঁকে আমরা শান্তিনিকেতনের গানের দল জানতে পারলাম, কাছেই স্টুডিওতে শ্যুটিং চলছে। স্টার দিলীপকুমার-সায়রাবানু রয়েছেন সে ছবিতে! হইহই করে মোহরদিকে নিয়ে সকলে স্টুডিওতে হাজির। সেখানে তখন ছিলেন সলিল চৌধুরীও। সকলের সঙ্গে তিনি আলাপ করিয়ে দিলেন দিলীপকুমারের। শান্তিনিকেতন থেকে গিয়েছি শুনে, দিলীপকুমার খুবই আগ্রহ দেখালেন। মোহরদির সঙ্গে কথা বললেন। সকলে মিলে ছবিও তোলা হল।”

এই সব গানের অনুষ্ঠানে কখনও কখনও তাঁর মোহরদির সঙ্গে হারমোনিয়ম বাজানো খুব মুশকিল হত। কয়েকবার বাজাতে গিয়ে বিপত্তিও ঘটেছে। চল্লিশ বছর হারমোনিয়াম বাজানোর অভিজ্ঞতায় গোরা বলেন, ‘‘মোহরদির গলা এত সুরে, যে একটু ভুল ফিঙ্গারিং হয়ে গেল, আর সামলানো যেত না। ভুল হলে খুব বিরক্ত হতেন উনি। অনেকে চেষ্টা করেছিল ওঁর সঙ্গে বাজাতে। কিন্তু ভুল করে একসা! একবার বসুশ্রী সিনেমা হলে মোহরদি গাইবেন। আমার ফেবারিট শিল্পী সাগর সেন বললেন, ‘আমি বাজাব।’ মোহরদি বললেন, ‘গোরা তো বাজায়। সাবধানে বাজাবেন কিন্তু।’ গানের অন্তরায় বার বার ভুল হচ্ছে। মোহরদি কেবলই তাকাচ্ছেন। তারপর... ‘কী হচ্ছে কী!’ বলে চিৎকার করে উঠলেন। সাগর সেন ক্ষমা চাইলেন। গানটা ছিল, ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’।’’

জর্জ বিশ্বাসের সঙ্গেও মোহরের খুব কম বয়স থেকে আলাপ। জর্জের গান নিয়ে বিশ্বভারতী-র সঙ্গে বিরোধ হলেও, মোহর নিজে খুব ফ্যান ছিলেন দেবব্রত বিশ্বাসের। তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘‘প্রিয় জর্জদাকে নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি।... সেই স্মৃতি কোনওদিন ম্লান হবার নয়। জর্জদা আজও আমার হৃদয়ে।’’

একদিন রেকর্ডিং-এ গিয়েছেন মোহর-গোরা। এইচএমভির রিহার্সাল রুমে সে দিন রয়েছেন বিমান ঘোষ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, জর্জ বিশ্বাসরাও। কথায় কথায় উঠল, বিশ্বভারতীর সঙ্গীত সমিতি থেকে জর্জের গান আটকে দেওয়ার প্রসঙ্গ। মোহর তখনও মিউজিক বোর্ডেই রয়েছেন। জর্জকে হেমন্ত বললেন,‘কাকা তুমি মিউজিকটা একটু বদলে নাও না। শুধু এটুকু করো। তাহলেই তোমার গান ফের শুনতে পাব আমরা। আমারও তো উচ্চারণে ভুল হয়েছে। আর তোমার গান তো কেউ আটকাচ্ছে না! কেন এত অভিমান করছ তুমি!’

হেমন্তের কথার জবাবে জর্জ সে দিন বলেছিলেন, ‘না, করুম না!’

গোরা নিজে সতেরো-আঠারো বছর বিশ্বভারতীর মিউজিক বোর্ডে ছিলেন। সে দিনের রিহার্সাল রুমের ঘটনার কথা তুলতেই বললেন, ‘‘জর্জদার গান আটকানোয় মোহরদির হাত ছিল না। উনি নিজে কখনও সমিতির বৈঠকে যেতেনও না। বলতেন, ‘যত দিন গান গাইব, কারও গান নিয়ে নেগেটিভ বলতে পারব না। নিজে আগে শুদ্ধ গাই!’ জর্জদার গান আটকানোয় কিছুটা হাত ছিল কলকাতারই দুই প্রখ্যাত পুরুষ ও এক মহিলা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীর!”

রোদ পড়ে আসছে। ছায়ারা দীর্ঘ হল। এন্ড্রুজ পল্লির নিরিবিলি রাস্তায় দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে। একটু পরেই কাছের সোনাঝুরি বন থেকে পাতা নিয়ে সার সার রমনীরা ফিরবে সাঁওতাল গ্রামে। গোরা গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে দিতে গুনগুন করে ভাঁজছিলেন রাগ-মুখ।

‘‘বেহাগ?’’

স্মিত হেসে বললেন, “বহুকাল আগে রেকর্ড করেছিলাম বেহাগেই ‘তারানা অঙ্গ’-এর একটা গান।’’

‘‘কী গান?’’

‘‘চরাচর সকলই মিছে!’’

কিছু ছবি: পারিবারিক সংগ্রহ থেকে (কৃতজ্ঞতা: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement