ফোড়ন।
রান্নার সূচনাই হয় ফোড়ন দিয়ে। যে কোনও কাজের সূচনা যদি ভাল হয়, তা হলে বাকি কাজও সুন্দর ভাবে শেষ হয়। তেমনই রান্নায় ফোড়ন। একই ডালের স্বাদ-গন্ধ বদলে যায় বিভিন্ন ফোড়নে। যেমন ধরুন, মসুর ডালে কালোজিরে-পেঁয়াজ দিতে পারেন আবার পাঁচফোড়ন দিয়েও মসুর ডাল হয়। তবে ফোড়ন দেওয়ারও কিছু নিয়ম আছে।
ফোড়ন তৈরি হতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। তাই ফোড়ন দেওয়ার আগে বাকি উপকরণ তৈরি রাখবেন।
সব ফোড়ন বেশি ভাজতে নেই। ধরুন কালোজিরে, শুকনো লঙ্কা বা সরষে ফোড়়ন দিলে একটু বেশি সময় ধরে ভাজতে পারেন। কিন্তু জিরে, ধনে বা মৌরি কড়া ভাজা হয়ে গেলে সেই মশলার গন্ধই নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষত মৌরি। মৌরি ফোড়ন দেওয়ার সময়ে অল্প ভেজেই আনাজে বা ডালে দিয়ে দেবেন।
রান্নার সময়ে কোন মশলার পরে কোনটা দেবেন, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন তেলে পেঁয়াজ-রসুন একসঙ্গে কখনও ফোড়ন দেবেন না। কারণ পেঁয়াজ ভাজতে তেল যতটা গরম হওয়া দরকার, তাতে রসুন পুড়ে যায়। তাই আগে পেঁয়াজ ভেজে পরে রসুন দিতে হয়।
রান্নায় ফোড়ন দেওয়ার সময়ে টক দই দেওয়ার আগে সেটা অবশ্যই ফেটিয়ে নেবেন। আর যখন মশলায় টক দই মেশাবেন, তখন আভেন বন্ধ করে নেবেন। না হলে দই ফেটে যাবে।
গোটা গরম মশলা তেলে ফোড়ন দেবেন না। অর্ধেক গন্ধ সেখানেই উবে যাবে। তার চেয়ে রান্না খানিকটা হয়ে গেলে গোটা গরম মশলা উপর দিয়ে ছড়িয়ে দিন। গরম মশলা ফোড়ন দিতে হলে ঘিয়ে অল্প আঁচে ফোড়ন দিন।
যদি ফোড়ন একটু বেশি ভাজা হয়ে যাচ্ছে মনে হয়, সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে কোনও আনাজ দিয়ে দিতে পারেন। এতে তাপমাত্রা ভাগ হয়ে গিয়ে ফোড়ন পুড়তে দেবে না।
ফোড়ন দিয়েই তার মধ্যে নুন হলুদ দেবেন না। রান্না খানিকটা হয়ে গেলে তবেই নুন দিন।
সরষের তেল বা কোনও ভেজিটেবল অয়েলে ফোড়ন দেওয়াই ভাল। অলিভ অয়েলে ফোড়ন দিতে গেলে তা ফেটে যায়। তাই স্যালাড বা বেকিংয়ের জন্যই অলিভ অয়েল ব্যবহার করা ভাল, ফো়ড়নে নয়।
তেলে কারি পাতা ফোড়ন দেওয়ার সময়ে খেয়াল রাখবেন, যেন তা পুড়ে না যায়।
ডাল, রসম জাতীয় পদে রান্নার শেষে এবং সবজি বা মাছ-মাংসের পদে রান্নার প্রথমে ফোড়ন দেওয়াই সবচেয়ে ভাল।
ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি ফ্রেশ হার্ব কখনও ফোড়ন হিসেবে ব্যবহার করবেন না। এতে হার্বের গুণ ও গন্ধ দুই-ই অনেকাংশে নষ্ট হয়ে যায়। বরং রান্নার শেষে পদের উপরে ছড়িয়ে দিতে পারেন ফ্রেশ হার্ব।
মনে রাখা জরুরি, ফোড়ন রান্নার খুব ছোট অংশ হলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।