অনেকেই হয়তো জানেন না, বাংলা আর বাঙালির সঙ্গে আমার সম্পর্কটা কতটা গভীর। পশ্চিমবঙ্গে নয় নয় করে দু’বছর কাটিয়েছি আমি। সেটা নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি, এমবিএ পড়তে আসার সুবাদে কলকাতায় থেকেছি। এই শহর আমাকে অনেক বন্ধু দিয়েছে, বাংলার অনেক মানুষ জড়িয়ে গেছেন আমার জীবনের সঙ্গে।
জড়িয়ে গেছে বাংলার কয়েকটা খাবারও। বিশেষ করে বাঙালির মিষ্টি। আর শেষ পাতে মিষ্টি দই, আহা! বাংলার এই আদি অকৃত্রিম ডিজার্টকে নিয়ে এর মধ্যেই লাখো লোকে কোটি কোটি সাধুবাদ জানিয়েছেন নিশ্চয়ই। কিন্তু আমার বলার মধ্যে খানিক তফাত আছে, কারণ আমি একেবারেই ‘ফুডি’ নই। ভোজনরসিকেরা মিষ্টি দইকে গদগদ বন্দনায় ভরিয়ে দেবেন, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমার মতো মানুষও দইপ্রেমে উচ্ছ্বসিত যখন, তখন জিনিসটা যে সত্যি কী ভাল খেতে, বলাই বাহুল্য।
মিষ্টি দই যত না মিষ্টি, তার থেকেও বেশি মিষ্টি বাংলার মানুষের স্বভাব। যাঁদের সংস্পর্শে এসেছি, সবাই খুব নরম মনের মানুষ, আবার প্রাণখোলা, দিলদরিয়া। আপনারা বলতেই পারেন, চেনা বাঙালিরা তো আমার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবেনই। কিন্তু একেবারে অচেনা-অজানা, পথঘাটের সাধারণ মানুষকেও দেখেছি— কী সুন্দর কথাবার্তা, স্বভাবচরিত্র। নম্র, সুভদ্র। নিজেদের সংস্কৃতি, শেকড়টা নিয়ে শুধু বাঁচেনই না, তাকে লালন করেন, তাকে নিয়ে গর্ব করেন। গান ভালবাসেন, কারণে-অকারণে গলা ছেড়ে গাইতেও কোনও দ্বিধা নেই। অন্তত এটুকু বুঝতে পেরেছি, বাঙালি খুব রোম্যান্টিক। আর তাই দারুণ আকর্ষণীয়ও।