গোয়ার ছেলে হওয়া সত্ত্বেও কী ভাবে আমি এত ভাল বাংলা বলি, তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই আমাকে প্রশ্ন করে অনেক বন্ধু-বান্ধবই। তাদের প্রায় সক্কলেরই ধারণা, আমার প্রাক্তন বাঙালি গার্লফ্রেন্ডই আমাকে এটা শিখিয়েছে। একেবারেই ঠিক নয়। মানে, তার কাছ থেকেও শিখেছি নিশ্চয়, কিন্তু শুধু সে-ই আমার শিক্ষক নয়। আমি বাংলা শিখেছি সকলেরই শুনে শুনে। মানে, ক্লাবের কর্তারা কথা বলতেন, ড্রেসিংরুমে বা মাঠে সতীর্থরা কথা বলত, সেটা মন দিয়ে শুনে শুনেই বাংলাটা শিখে গেলাম। আসলে কোনও জিনিসের প্রতি প্যাশন বা ভালবাসাটা চলে এলে, হয়তো সেটা শিখে ফেলা খুব সহজ হয়ে যায়। ফুটবলকে এতটা ভালবাসি বলেই যেমন ফুটবলের নতুন কোনও কায়দা চট করে আয়ত্ত করতে পারি। অবশ্য এটাও বলে রাখা দরকার, আমি পুরোপুরি ব্যাকরণ মেনে বাংলা বলতে পারি না, অনেক সময়েই তুমি-টা তুই হয়ে যায়। তাই এই বাংলা জানার কথা শুনে আবার ভাববেন না, এই রে, এ তো কালকেই বাংলা উপন্যাস লিখে ফেলবে!
বছর তেরো আগে যখন বাংলায় খেলতে এলাম, বেশ হোমসিক ছিলাম। কিছুতেই মন টিকত না। মনে হত, ধুর, ফিরে যাই। কিন্তু তার পর? আমিই সম্ভবত গোয়ার প্রথম ফুটবলার যে এত দিন কলকাতায় থেকে গিয়েছে। কেন থেকে গেলাম? শুধু বাংলা ভাষাটা শুনতে ভারী সুন্দর বলে? না কি, বাঙালি মেয়েরা এমন অপূর্ব সুন্দর দেখতে বলে? হয়তো দুটো মিলিয়েই।
বাঙালি মেয়েদের অদ্ভুত একটা আকর্ষণ আছে। অনেক জায়গা ঘুরেছি, কোথাও এমন দেখিনি। ঠিক কোন জিনিসটা এই জাতের মেয়েদের রূপকে এমন অতুলনীয় করে তুলেছে, বলতে পারব না, কখনও মনে হয় আশ্চর্য চোখ, কখনও মনে হয় মসৃণ ত্বক, কখনও মনে হয় ঢলঢলে লাবণ্য, কিন্তু আসল ব্যাপার হল, সেটা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও, একটা সাংঘাতিক এক্স-ফ্যাক্টর আছেই। ঈশ্বর চাননি বলেই শেষ পর্যন্ত আমি বাংলার কোনও মেয়েকে হয়তো বিয়ে করিনি। বলা ভাল, হতে হতেও হয়নি। তা বলে আমার এই মুগ্ধতা কখনও যাবার নয়।
(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত)