Scary extinct animals

ডাইনোসরখেকো কুমির, ১০ ফুটের পাখি থেকে ৫০ কেজির কেঁচো! পাঁচ ভয়ঙ্কর প্রাণী যাদের কাছে ডাইনোসরও ‘শিশু’

কেবল ডাইনোসরেরাই নয়। ডাইনোসরের সমসাময়িক ও পরবর্তী কালে পৃথিবীর বুকে দাপিয়ে বেড়িয়েছে আরও নানা ভয় ধরানো প্রাণী। তাদের উল্লেখ সে ভাবে করা না-হলেও, নৃতাত্ত্বিক গবেষণা বা ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে দেখলে তাদের শিহরন জাগানো অস্তিত্ব সম্বন্ধে খোঁজ পাওয়া যায়।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৫ ১৩:৪১
Share:
০১ ৩০

ডাইনোসর। শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিশাল আকৃতির সব জীবেরা। তাদের আমরা কখনও চাক্ষুষ করিনি। তবে বইয়ের পাতা বা সিনেমার পর্দায় দেখে তাদের আকার-আকৃতি এবং প্রকৃতি সম্বন্ধে আমাদের সকলেরই একটা ধারণা রয়েছে।

০২ ৩০

সেই ধারণার সবটা জুড়েই রয়েছে ভয়। দৈত্যাকৃতি চারপেয়ে সব জীবেরা বড় বড় দাঁত আর ‘জল’ ঝরে পড়া জিভ বার করে তেড়ে আসছে মানুষের দিকে, সিনেমার পর্দায় ডাইনোসরদের এ ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে। যদিও, আদতে আমাদের পূর্বপুরুষেরা পৃথিবীর আলো দেখার বহু আগে সেই সকল ডাইনোসর পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। তা-ও সকলের মনেই একটা আতঙ্ক রেখে গিয়েছে।

Advertisement
০৩ ৩০

কিন্তু কেবল ডাইনোসরেরাই নয়। ডাইনোসরের সমসাময়িক ও পরবর্তী কালে পৃথিবীর বুকে দাপিয়ে বেড়িয়েছে আরও নানা ভয় ধরানো প্রাণী। তাদের উল্লেখ সে ভাবে করা না-হলেও, নৃতাত্ত্বিক গবেষণা বা ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে দেখলে তাদের শিহরন জাগানো অস্তিত্ব সম্বন্ধে খোঁজ পাওয়া যায়।

০৪ ৩০

সেই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে মেগালোডন। প্রাগৈতিহাসিক এই ভয়ঙ্কর হাঙরের অল্পবিস্তর নামডাক আজও রয়েছে। সবটাই তার ভয় ধরানো চেহারার জন্য।

০৫ ৩০

আজকের গ্রেট হোয়াইট শার্কের মতোই দেখতে ছিল সেই দৈত্যাকার হাঙরগুলিকে। মেগালোডনেরা লম্বায় প্রায় ৬০ ফুট মতো হত। সর্বকালের সবচেয়ে বড় আকৃতির শিকারি প্রাণীদের মধ্যে এটি অন্যতম।

০৬ ৩০

ভূতাত্ত্বিকদের পাওয়া জীবাশ্ম থেকে অনুমান করা যেতে পারে, প্রায় ৩৬ লক্ষ বছর আগে, মিয়োসিন যুগে ছিল মেগালোডনদের রাজত্ব। মিয়োসিন যুগের শুরু থেকে প্লায়োসিন যুগের শেষ অবধি এই দৈত্যাকার মাছগুলি জীবিত ছিল।

০৭ ৩০

মেগালোডন শব্দটির অর্থ হল ‘বড় দাঁত’। মেগালোডনের এক-একটি দাঁত প্রায় ১৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা ছিল।

০৮ ৩০

তিমি বা হাঙরের মতো অন্য বড় আকৃতির মাছেরা এই বিশাল দাঁতের দৈত্যাকৃতি প্রাণীদের খাবার ছিল বলে অনুমান করছেন বিজ্ঞানীরা। মেগালোডনেরা পুরোপুরি মাংসাশী ছিল।

০৯ ৩০

২৬ লক্ষ বছর আগে, অর্থাৎ প্লায়োসিন যুগের শেষের দিকে মেগালোডন বিলুপ্ত হয়ে যায়। মেগালোডনেরা উষ্ণ-ক্রান্তীয় অঞ্চলের মাছ ছিল। প্লায়োসিন যুগের শেষের দিকে তুষার যুগ শুরু হওয়ায় অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে তাদের বিলুপ্তি ঘটে বলে মনে করা হয়।

১০ ৩০

এর পর সেই তালিকায় নাম রয়েছে সারকোসুকাসের। বর্তমান কালের নোনা জলের কুমিরের থেকে এটি প্রায় দ্বিগুণ লম্বা ছিল। সারকোসুকাসের ওজন ছিল আনুমানিক আট টন।

১১ ৩০

প্রায় ১৩ কোটি ৫০ লক্ষ বছর থেকে ১১ কোটি ২০ লক্ষ বছর আগে ছিল এদের অস্তিত্ব। গবেষণা থেকে জানতে পারা গিয়েছে, ছোট আকৃতির ডাইনোসরদেরও সারকোসুকাসেরা অনায়াসেই জলে টেনে এনে ভক্ষণ করত।

১২ ৩০

সাধারণত স্বাদু জলই ছিল এদের বাসস্থান। সাহারা মরুভূমিতে কুমিরের এই পূর্বপুরুষদের প্রচুর জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে। সেটির উপর ভিত্তি করে গবেষকেরা জানাচ্ছেন যে, সেই সময় হয়তো সাহারা মরুভূমি একটি বিশাল আকৃতির স্বাদু জলের হ্রদ ছিল। সেখানে এই ভয়ঙ্কর সরীসৃপদের একটি বিশাল দল বসবাস করত।

১৩ ৩০

আনুমানিক ভাবে বলা যেতে পারে, এক একটি প্রাপ্তবয়স্ক সারকোসুকাস দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৯.৫ ফুট থেকে ৩১.২ ফুট মতো ছিল। এদের ওজন ছিল ৩.৫ থেকে ৪.৩ টন পর্যন্ত।

১৪ ৩০

সারকোসুকাসের নাকটি ছিল বেশ বড় আকৃতির। তাদের খুলির ৭৫ শতাংশ নাক দিয়েই ঢাকা থাকত। তাদের উপরের চোয়ালটি নীচের চোয়ালের তুলনায় বড় ছিল। সারকোসুকাসের উপরের চোয়ালের প্রতিটি পাশে ৩৫টি করে দাঁত থাকত। নীচের চোয়ালে থাকত ৩১টি দাঁত। বাকি কুমিরের মতো এদের ত্বকও ছিল পুরু ও আঁশযুক্ত।

১৫ ৩০

সারকোসুকাসের খাদ্যাভাস ছিল বৈচিত্রময়। তাদের খাদ্যতালিকায় জলজ প্রাণীর সঙ্গে সঙ্গে স্থলজ প্রাণীদেরও উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। ডাইনোসরের সমসাময়িক হওয়ায় অনুমান করা হচ্ছে যে, বহু ছোট বা মাঝারি আকৃতির ডাইনোসরও সারকোসুকাসের খাদ্য ছিল।

১৬ ৩০

ভয়ঙ্কর এই প্রাণীর বিলুপ্তির নেপথ্যের সঠিক কারণ জানতে পারা যায়নি। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সাহারা অঞ্চলের জলের স্তরেরও বিনাশ ঘটে। এর ফলেই পৃথিবী থেকে সারকোসুকাসেরা হারিয়ে যায়।

১৭ ৩০

পরবর্তী যুগের একটি পাখির নামও রয়েছে এই তালিকায়। টেরর বার্ড, যার বৈজ্ঞানিক নাম হল ফোরুসর‌্যাসিডস। কাইনোজয়িক যুগে দক্ষিণ আমেরিকার শিকারি প্রাণীগুলির মধ্যে এটি অন্যতম।

১৮ ৩০

পক্ষী শ্রেণির অন্তর্গত হলেও ফোরুসর‌্যাডিসেরা উড়তে পারত না। এরা এক থেকে তিন মিটার, অর্থাৎ প্রায় ১০ ফুট পর্যন্ত লম্বা ছিল। অর্থাৎ, উচ্চতার দিক দিয়ে এরা এক জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের থেকেও লম্বা ছিল।

১৯ ৩০

২০০৬ সালে প্যাটাগোনিয়ায় পাওয়া একটি জীবাশ্মকে পরীক্ষা করে নৃতাত্ত্বিকেরা জানিয়েছেন যে, এই পাখিগুলির খুলি অত্যন্ত বড় আকৃতির ছিল। এদের ঠোঁটটি ছিল বক্র আকৃতির এবং প্রায় ১৮ ইঞ্চি লম্বা।

২০ ৩০

এদের পায়ের নখগুলি ছিল বৃহৎ এবং তীক্ষ্ণ প্রকৃতির। অনুমান করা যেতে পারে যে, সেই নখগুলি তারা শিকারের কাজে লাগাত। এরা আজকের ঘোড়ার চেয়েও জোরে দৌড়তে পারত। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে এই পাখিদের ওজন প্রায় ১৩০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হত।

২১ ৩০

টেরর বার্ডের খাদ্যাভাস ছিল বৈচিত্রে ভরা। মাংসাশী প্রজাতির এই পাখি তাদের তুলনায় ছোট আকৃতির যে কোনও প্রাণীকেই শিকার করে ভক্ষণ করত।

২২ ৩০

পরবর্তী কালে দক্ষিণ আমেরিকায় ফোরুসর‌্যাসিডসদের সমসাময়িক আরও নানা প্রাণীর উৎপত্তি হওয়ায় তাদের মধ্যে খাদ্য নিয়ে লড়াই শুরু হয়। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন, প্রধানত পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবেই টেরর বার্ড বিলুপ্ত হয়।

২৩ ৩০

এর পরে এই তালিকায় রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ধিপদী প্রাণী অর্থোপ্লেউরা। এখনকার উত্তর আমেরিকা আর ইউরোপের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছিল তাদের আধিপত্য। কার্বোনিফেরাস যুগে এরা পৃথিবীতে এসেছিল।

২৪ ৩০

বিশাল আকৃতির এই সন্ধিপদী প্রাণীরা প্রায় ৩.২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হত। প্রায় ৩০টি দেহখণ্ড জুড়ে এরা গঠিত ছিল। প্রতি ছয়টি দেহখণ্ডে আট জোড়া করে পা থাকত। একটি পূর্ণবয়স্ক অর্থোপ্লেউরার দেহে মোট ৩২ থেকে ৬৪টি পা থাকত। এদের শরীরের ওজন ৫০ কেজি পর্যন্ত হত।

২৫ ৩০

খাদ্যাভাসের দিক দিয়ে এই দৈত্যাকার সন্ধিপদেরা তৃণভোজী প্রকৃতির ছিল। এরা মৃত উদ্ভিদ, পচা পাতা জাতীয় জিনিস খেত। আধুনিক যুগের কেঁচোর পূর্বপুরুষ বলা যায় এদের।

২৬ ৩০

পারমিয়ান যুগে অর্থোপ্লেউরাদের বিলুপ্তি ঘটে। সাধারণত জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্যই এরা পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায় বলে অনুমান করছেন বিজ্ঞানীরা। চতুষ্পদের উত্থানও এদের বিলুপ্তির কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

২৭ ৩০

পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া ভয়ানক পশুদের তালিকার সর্বশেষ নাম হল গর্গোনোপসিড প্রজাতির প্রাণী। গ্রিক পৌরাণিক চরিত্রের নামানুসারে নামাঙ্কিত এই প্রাণীটি ধরায় আবির্ভূত হয়েছিল মধ্য পার্মিয়ান যুগে।

২৮ ৩০

গর্গোনোপসিডেরা ছিল স্তন্যপায়ী। এদের দাঁতগুলি ছিল লম্বা ও তীক্ষ্ণ। সেগুলির সাহায্যে তারা শিকার ধরে খেত। এরাও মাংসাশী ছিল।

২৯ ৩০

এই প্রজাতির প্রাণীরা মাঝারি থেকে বড় আকৃতির হত। এদের মধ্যে কেউ কেউ ১০ থেকে ১১ ফুট পর্যন্ত লম্বা হত এবং ওজনের দিক থেকে ৩০০ কেজি পর্যন্ত হত।

৩০ ৩০

দু’কোটি ৫২ লক্ষ বছর আগে, পার্মিয়ান যুগের শেষে এরা বিলুপ্ত হয়। তাদের বিলুপ্তির কোনও যোগ্য কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই সকল প্রাণীদের মধ্যে কারওরই পৃথিবীতে পুনরায় ফিরে আসার কোনও সম্ভাবনা রয়েছে কি না সেই বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement