Taos hum

পাহাড়ি শহরে ভেসে বেড়ায় অদ্ভুত গুঞ্জন! বহু গবেষণার পরেও কিনারা হয়নি ‘তাওস হাম’ রহস্যের

অবিরত চলে এই গুঞ্জন, কখনও থামে না। ঘুমের মধ্যেও তাঁরা শুনতে পান এই শব্দ, রাতে যেন তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। অনেকটা রেডিয়ো তরঙ্গের মতো দুর্বল কম্পাঙ্কের এ শব্দ মাথা ধরিয়ে দেয়।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫ ১০:৪১
Share:
০১ ১৭

বিজ্ঞানের বদান্যতায় সৃষ্টিজগতের অনেক রহস্য উন্মোচিত হলেও পৃথিবীতে ছড়িয়ে রয়েছে এমন কিছু রহস্য, যেগুলির রহস্যভেদ করা সম্ভব হয়নি আজও। কিছু ধাঁধা রয়ে গিয়েছে, বিজ্ঞানের সমীকরণে ফেলে যেগুলির সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ সব বিষয় এখনও অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে আবৃত। তাদের জটিলতা এবং রহস্যময়তা আমাদের রীতিমতো বিস্মিত করে।

০২ ১৭

ঠিক এমনই একটি রহস্যময় শব্দ অন্ধকারের বুক চিরে মাঝেমাঝে বেরিয়ে আসে মেক্সিকোর একটি শহরে। সেই শব্দের রহস্য আজও অমীমাংসিত। পাহাড়ি শহরে রাত নামলে নেমে আসে অদ্ভুত নৈঃশব্দ্য। রাতের সেই শান্ত পরিবেশ চিরে ভেসে আসে গুনগুন শব্দ। হঠাৎ কানে তালা লাগলে যেমন শব্দ হয়, তেমনই একটানা গুঞ্জন।

Advertisement
০৩ ১৭

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য নিউ মেক্সিকোর ছোট্ট শহর তাওস। ছিমছাম ছবির মতো সাজানো ছোট্ট এই শহরটি আমেরিকার অন্য আর পাঁচটা শহরের থেকে আলাদা নয়। ৯০-এর দশকে এখানকার অধিবাসীরা দাবি করতে শুরু করেন তাঁদের অনেকেই একটানা গুনগুন শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। তবে সবাই নয়।

০৪ ১৭

মৃদু, অনবরত চলতে থাকা এই গুঞ্জনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘তাওস হাম’। প্রায় তিন দশক ধরে তাওসের মানুষকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে এমনই রহস্যময় শব্দ। তবে এর উৎপত্তি নিয়ে বিস্তর মতভেদ রয়েছে। আজও সে শব্দের উৎসের সঠিক সুলুকসন্ধান করা সম্ভব হয়নি।

০৫ ১৭

সেই মৃদু অথচ অস্বস্তিকর শব্দ ঠিক কেমন? যাঁরা এই শব্দ শুনেছিলেন তাঁরা বলেন, গাড়ির ইঞ্জিন চালিয়ে রাখলে যেমন শব্দ হয়, তার সঙ্গে মিল রয়েছে তাওস হামের। হাম কথার অর্থই হল গুঞ্জন করা, গুনগুন করা। পরবর্তী কালে গবেষণা করে দেখা গিয়েছে তাওস হাম একটি দুর্বল কম্পাঙ্কের শব্দ।

০৬ ১৭

এই শব্দের অস্তিত্ব অবশ্য গোটা শহরের মানুষের কানে ধরা পড়েনি। স্থানীয়দের মধ্যে সবাই কিন্তু এই হাম শুনতে পান না। এই শব্দ যাঁদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে, তাঁদের কাছে ব্যাপারটি খুবই যন্ত্রণাদায়ক হয়ে দাঁড়ায়।

০৭ ১৭

অবিরত চলে এই গুঞ্জন, কখনও থামে না। ঘুমের মধ্যেও অনেকে শুনতে পান এই শব্দ। রাতে যেন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে গুঞ্জন। অনেকটা রেডিয়ো তরঙ্গের মতো দুর্বল কম্পাঙ্কের এই শব্দ মাথা ধরিয়ে দেয় তাওসের বেশ কিছু বাসিন্দার। এই শব্দ কোনও নির্দিষ্ট দিক থেকে আসে না এবং কান ঢেকে রাখলেও এর থেকে পরিত্রাণ মেলে না। যাঁরা শব্দের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীল, তাঁদের জন্য এই শব্দ অনিবার্য ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

০৮ ১৭

১৯৯০ সালের গোড়ার দিকে প্রথম বারের মতো হাম বা গুঞ্জনের ব্যাপারটি প্রশাসনের কানে পৌঁছোয়। ধীরে ধীরে শব্দের উৎপাত এমন বাড়তে থাকে যে, স্থানীয় কংগ্রেসেও ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা হয়। কর্তৃপক্ষের তরফে সমীক্ষা চালানো হয়। শব্দটা যাঁরা শুনতে পান বলে দাবি করেন, তাঁদের সঙ্গে বার বার কথা বলে জানার চেষ্টা করা হয় এর গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে।

০৯ ১৭

এমন অভূতপূর্ব সমস্যার সমাধান কী ভাবে করা যায় তা নিয়ে বিপাকে পড়ে যান প্রশাসনিক কর্তারা। সমস্যা সমাধানে প্রথমে কয়েকটি পরীক্ষা চালানো হয়। স্থানীয়দের মধ্যে যাঁরা শব্দটি ক্রমাগত শুনতে পেতেন, তাঁদের কয়েক জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। শহর জুড়ে কম্পাঙ্কের উৎসস্থল খুঁজে বার করার জন্য বেশ কিছু যন্ত্রপাতি বসানো হয়।

১০ ১৭

দেখা যায়, দুই শতাংশ শ্রোতা অনবরত শুনতে পান এই শব্দ। বাকিদের মধ্যে কেউ কেউ একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর শুনতে পান তাওস হাম। সমীক্ষায় উঠে আসে, এই শব্দটি শুনতে পাওয়ার প্রবণতা নারীদের মধ্যেই বেশি।

১১ ১৭

তাওস হাম শুনেছেন, এমন দাবি করা নাগরিকদের সকলেরই বয়স ৩০ থেকে ৬০-এর ভিতর। কেউ বলেছেন, এই শব্দ ধীরে ধীরে তীক্ষ্ণ হয়ে মাথা চিনচিন করে দেওয়ার মতো অনুভূতি জাগায়। আবার বাকিদের দাবি অনুযায়ী, এই শব্দ অত্যন্ত বিরক্তিকর ভোঁ ভোঁ শব্দের মতো।

১২ ১৭

তাওস হামের উৎপত্তির আসল কারণ সন্ধানে ইউনিভার্সিটি অফ নিউ মেক্সিকোর অধ্যাপক জো মুলিনস গবেষণা চালিয়েছেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ৪০০ জন বাসিন্দার উপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে মাত্র ২ শতাংশ মানুষ অদ্ভুত এই শব্দ শুনতে পান। ফলে চিকিৎসকেরা অনেকেই একে ‘গণমনস্তাত্ত্বিক রোগ’ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন।

১৩ ১৭

একে অনেকে জনগণের চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করার সরকারি কৌশল অথবা মাটির নীচে থাকা ‘ভিন্‌গ্রহী’দের যানের ইঞ্জিনের শব্দ বলে দাবি করেন। এ ছাড়া আরও কত যুক্তি যে এর নেপথ্যে খাড়া করা হয়েছিল তার ইয়ত্তা নেই।

১৪ ১৭

মনস্তাত্ত্বিক থেকে শুরু করে অতিপ্রাকৃত ব্যাখ্যা, সবই উঠে এসেছে তাওস হামের উৎসের সন্ধান করতে গিয়ে। গবেষকেরা অবশ্য বার বার ‘অডিটরি হ্যালুসিনেশন’ তত্ত্বকেই প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। তবে সেই তত্ত্বও পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি তাঁরা।

১৫ ১৭

অদ্ভুত, রহস্যময় গুনগুন শব্দের ক্ষেত্রে বিশ্ব জুড়ে একই রকম বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে, যার অনেকগুলিরই ব্যাখ্যা আজও অস্পষ্ট। ১৯৭০ সালের শেষ দিকে, ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলের বাসিন্দারা অনেকেই দূর থেকে একটানা গুঞ্জনের শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন বলে দাবি করেন।

১৬ ১৭

১৯৮০ সালে ব্রিস্টলের স্বাস্থ্যকর্তারা শব্দ পর্যবেক্ষণ সরঞ্জাম ব্যবহার করে উৎস খুঁজে বার করার চেষ্টা করেছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত এর জন্য রাস্তার ট্র্যাফিক এবং স্থানীয় কারখানাগুলিকে দায়ী করা হয়েছিল।

১৭ ১৭

বছরের পর বছর ধরে জল্পনা, গবেষণা এবং বিতর্কের পরও তাওস হাম একটি অমীমাংসিত রহস্য হিসাবেই রয়ে গিয়েছে। এটি এমন একটি ঘটনা যা বাতাসে ভেসে বেড়ায়, অনেকটা গুঞ্জনের মতো।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement