মহাকুম্ভ মেলা চলছে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে। মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মহাকুম্ভ উপলক্ষে নতুন করে সাজানো হয়েছে উত্তরপ্রদেশের এই শহরকে। এ বছরের মহাকুম্ভে সব মিলিয়ে ৫০ কোটিরও বেশি ভক্তের সমাগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গঙ্গা, যমুনা এবং অন্তঃসলিলা সরস্বতী নদীর পবিত্র সঙ্গমস্থলে ভক্তেরা জড়ো হচ্ছেন শাহি স্নান করতে। কোটি কোটি মানুষ পুণ্যস্নান করে ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছেন।
মেলার শুরু থেকেই পুণ্যতিথিতে স্নান করতে সাধু-সন্ন্যাসিনীদের ভিড় ছিল দেখার মতো। এঁদের মধ্যে আইআইটি বাবা, রাজদূত বাবা থেকে মাসকুলার বাবা— অনেকেই নজর কেড়েছেন বিবিধ কারণে।
অনন্যদর্শন সেই সাধুদের মধ্যে নতুন সংযোজন ‘বিজ়নেসম্যান বাবা’। সমাজমাধ্যমে সেই ব্যবসায়ী বাবার একাধিক ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। তাঁর দাবি, তিনি এক সময় সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। ছিলেন ১০০০ কোটির মালিক।
কিন্তু সে সব ‘মোহ-মায়া’ ত্যাগ করে তিনি এখন পুরোদস্তুর সাধু। গেরুয়া পোশাক পরিহিত এবং রুদ্রাক্ষে সজ্জিত সেই সাধুর দাবি, বিলাসবহুল জীবন থাকা সত্ত্বেও তিনি শান্তিতে ছিলেন না। বুঝতে পেরেছিলেন যে, কেবল সম্পদ প্রকৃত শান্তি আনতে পারে না।
‘ডেইলি ওভারডোজ়’ নামে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রথম ব্যবসায়ী বাবার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। ওই অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে লেখা হয়েছিল, ‘‘কুম্ভমেলায় দেখা পাওয়া গেল ব্যবসায়ী থেকে ব্যবসায়ী বাবায় পরিণত হওয়া সাধুর।’’ অথবা, ‘‘কুম্ভমেলায় দেখা গেল ব্যবসায়ী থেকে ব্যবসায়ী বাবায় পরিণত হওয়া সাধুকে।’’
সেই ভিডিয়োয় ওই সাধুকে মহাকুম্ভপ্রাঙ্গণে হাঁটতে, ভক্তদের সঙ্গে কথা বলতে, এক জন দরিদ্র মানুষকে শাল উপহার দিতে এবং সাধুদের কম্বল বিতরণ করতে দেখা গিয়েছে। যদিও সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
ভিডিয়োটি শীঘ্রই সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেক নেটাগরিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ব্যবসায়ী বাবার অভিজ্ঞতার কথা শুনে অনুপ্রাণিত হন। কেউ কেউ আবার বাবার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন।
অনেক সংবাদমাধ্যমের শিরোনামেই উঠে আসে বিজ়নেসম্যান বাবার নাম। কিন্তু সংবাদমাধ্যম ‘আজ তক’-এর প্রতিবেদনে উঠে আসে এক অন্য গল্প। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘পরম গুরু’ নামে আধ্যাত্মিক উপদেশ দেওয়া ওই সাধু অতীতে এমন এক ব্যবসায়ী ছিলেন, যাঁর নাম কোটি কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়েছিল।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘বিজ়নেসম্যান বাবা’র আসল নাম রাধেশ্যাম। এক সময় ‘ফিউচার মেকার লাইফ কেয়ার গ্লোবাল মার্কেটিং’ সংস্থার চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল।
রাধেশ্যাম নাকি একসময় বিলাসবহুল গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়াতেন এবং কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে ১২০০ কোটি টাকার জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। তিনি গ্রেফতারও হন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাঁচ বছর জেল খাটতে হয় রাধেশ্যামকে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে জেল থেকে মুক্তি পান তিনি। জেল থেকে বেরিয়ে সব কিছু ছেড়ে আধ্যাত্মিক জীবনের দিকে ঝোঁকেন। ‘পরমধাম’ নামে একটি সংগঠনও তৈরি করেন।
যদিও রাধেশ্যামের দাবি, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তরুণদের কর্মসংস্থান দিচ্ছিলাম। সংস্থার নাম হচ্ছিল। যখন আমাকে অপবাদ দিয়ে জেলে পাঠানো হয়, তখন আমি ৫০০ বার গীতা পাঠ করেছি। আমি শূন্যতা বুঝতে পেরেছিলাম। তার পর আমি লিখতে শুরু করি। ৭০০ পাতার সেই বইয়ের নাম আমি দিয়েছি ‘পরম রহস্যম’। এটা লিখতে পাঁচ বছর লেগেছে।’’
রাধেশ্যাম দাবি করেছেন, তিনি নাকি এক সময় আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন। কিন্তু গীতা তাঁকে বাঁচিয়েছে। আট বছর আগেই তিনি ব্যবসায়ীসত্তা ছেড়েছেন বলেও দাবি তাঁর। রাধেশ্যামের এ-ও অভিযোগ, শত্রুরা তাঁকে আধ্যাত্মিকতার পথে যেতে দিচ্ছে না। তাঁকে গীতা প্রচার করতে দেওয়া হচ্ছে না।
তাঁর বিরুদ্ধে অতীতে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে রাধেশ্যামের মন্তব্য, ‘‘ঈশ্বর নিশ্চই কোনও কারণে এই সব কিছু ঘটিয়েছেন।’’
কিন্তু কী ভাবে হাজার কোটির সাম্রাজ্য গড়েছিলেন রাধেশ্যাম? অভিযোগ, ‘নেটওয়ার্ক মার্কেটিং’-এর নামে হাজার হাজার মানুষকে সংস্থায় জুড়েছিলেন তিনি। গ্রাহকদের তিনি বুঝিয়েছিলেন, তাঁরা যদি ৭,২০০ টাকা জমা দেন তা হলে তাঁরা বছর দুয়েক পরে ৬০ হাজার টাকা পাবেন।
সেই আকর্ষণীয় ‘স্কিমের’ কারণে এক বছরে প্রায় ১ কোটি মানুষ তাঁর সংস্থায় যোগ দেন। প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে চলে সেই সংস্থা। এর পরেই রাধেশ্যামের কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। তেলঙ্গানা পুলিশ এবং হরিয়ানা এসটিএফ যৌথ ভাবে রাধেশ্যামের সংস্থার ২০০ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করে। গ্রেফতার হন তিনি।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর অনেকেই ‘বিজ়নেসম্যান বাবা’র সমালোচনা করেছেন। নেটাগরিকদের একাংশের দাবি, ‘‘আর্থিক কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হওয়ার পর এ বার ধর্ম নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন রাধেশ্যাম।’’