ভারতের ব্যাডমিন্টন জগতের ‘পাওয়ার কাপল’ বলা হত তাঁদের। একে অপরের প্রতিযোগী, কোচ, সমালোচক এবং অনুপ্রেরণা ছিলেন তাঁরা। সেই শাটলার দম্পতি সাইনা নেহওয়াল এবং পরুপল্লী কশ্যপের এ বার বিচ্ছেদ হতে চলেছে।
রবিবার হঠাৎই এই দুঃসংবাদ দেন খোদ সাইনা। বিবাহবিচ্ছেদের কথা জানিয়েছেন ইনস্টাগ্রামে। বিবাহবিচ্ছেদের খবর জানিয়ে সাইনা লেখেন, “মাঝে মাঝে জীবন আমাদের ভিন্ন পথে নিয়ে যায়। অনেক কিছু ভেবে পরুপল্লী কশ্যপ এবং আমি বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিজেদের জন্য এবং পরস্পরের জন্য আমরা শান্তি, বৃদ্ধি এবং নিরাময়কে বেছে নিয়েছি।’’
সাইনা আরও লেখেন, ‘‘আমাদের যে স্মৃতিগুলো রয়েছে তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আশা করি সামনের দিকে এগিয়ে যাব। এর বেশি কিছু চাই না। আমাদের বোঝার জন্য এবং গোপনীয়তাকে সম্মান জানানোর জন্য ধন্যবাদ।”
২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিয়ে হয়েছিল সাইনা এবং কশ্যপের। তারও আগে থেকে দু’জনের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের সাত বছর পর ঘর ভাঙছে শাটলার দম্পতির।
সাইনা এবং পরুপল্লী— ছোটবেলা থেকে একসঙ্গেই অনুশীলন করছেন। একই গুরু, পুলেল্লা গোপীচাঁদের কাছে। অনুশীলন সঙ্গীকেই পরবর্তীতে জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নেন তাঁরা।
১৯৯৭ সালের একটি কোচিং ক্যাম্পে প্রথম দেখা হয়েছিল সাইনা এবং কশ্যপের। ২০০২ সালে নিয়মিত দেখাসাক্ষাৎ শুরু হয় তাঁদের।
এর পর ২০০৫ সাল থেকে হায়দরাবাদে গোপীচাঁদের অ্যাকাডেমিতে একসঙ্গে অনুশীলন শুরু করেছিলেন সাইনা এবং কশ্যপ।
শোনা যায়, তখন থেকেই নাকি একে অপরকে ভাল লাগতে শুরু করে সাইনা-কশ্যপের। ব্যাডমিন্টন কোর্টে তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শীঘ্রই প্রেমে পরিণত হয়েছিল। সাইনা এক বার সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘‘প্রশিক্ষণের সময়ও প্রতিযোগিতা থাকে এবং আমি প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও কশ্যপের চেয়ে ভাল হতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম।’’
২০১২ সালে সাইনা যখন অলিম্পিকের মঞ্চে উঠেছিলেন এবং ভারতের প্রথম পুরুষ কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট হিসাবে কশ্যপ ইতিহাস তৈরি করেছিলেন, তখন তাঁদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।
পরে দু’জনের কোচ বদল হলেও কশ্যপ প্রায়শই সাইনার প্রশিক্ষণকেন্দ্রে পৌঁছে যেতেন। একে অপরের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের সময়ও উরস্থিত থাকতেন। মনে করা হয় প্রায় ১০ বছর প্রেম গোপন রেখেছিলেন সাইনা এবং কশ্যপ।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কশ্যপ এবং সাইনার বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। একে অপরের উত্থান-পতনের সাক্ষী ছিলেন তাঁরা। একে অপরের পাশে শক্ত খুঁটির মতো দাঁড়িয়েও ছিলেন বিভিন্ন টুর্নামেন্টের সময়।
২০১০ নাগাদ অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল সাইনা এবং কশ্যপকে। এশিয়ান গেমস এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সাইনা পদক অর্জন করলেও কশ্যপ চোট সংক্রান্ত সমস্যার সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। কেরিয়ারে বার বার বাধার সম্মুখীন হচ্ছিলেন তিনি।
২০১৫ সালে কশ্যপের পায়ের পেশিতেও চোট লাগে। সেই সময় কশ্যপের ছায়াসঙ্গী ছিলেন সাইনা। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়তে দেননি ভালবাসার মানুষটিকে। কশ্যপ ২০১৬ সালের রিয়ো অলিম্পিকে অংশ নিতে পারেননি। তখনও সাইনা তাঁর পাশে স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।
সাইনা এবং কশ্যপের ডেটিংয়ের ব্যাপারে নানা খবর অনেক আগে থেকেই শোনা গিয়েছিল। কিন্তু, দু’জনের কেউই তা স্বীকার করেননি। বরং, তা গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। যদিও পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা পোস্টে দু’জনের ঘনিষ্ঠতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
এর পর সারা বিশ্বের কাছে সাইনা এবং কশ্যপের প্রেমকাহিনি প্রকাশ্যে আসে। ২০১৮ সালে চার হাত এক হয় তাঁদের। শুরু করেন নতুন জীবন।
সাইনা-কশ্যপের বিয়েতে অবশ্য খুব বেশি জন আমন্ত্রিত ছিলেন না। প্রধানত দুই পরিবারের লোকজনই উপস্থিত ছিলেন বেশি। তবে রিসেপশনের আয়োজন করা হয়েছিল বড় করে। ক্রীড়া এবং চলচ্চিত্র জগতের অনেকে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বিয়ের পর থেকেই তারকা দম্পতির সমাজমাধ্যমের পাতায় নজর থাকত অনুরাগীদের। সাইনা এবং কশ্যপও নিজেদের ঘুরতে যাওয়ার এবং একসঙ্গে সময় কাটানোর ছবি প্রায়ই ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করতেন।
সাইনা এবং কশ্যপ— দু’জনেই ভারতীয় ব্যাডমিন্টনে রাজত্ব করেছেন। সাইনার অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ পদক রয়েছে। একটা সময় তিনি বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় ছিলেন। কশ্যপ কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতেছেন। কিন্তু সেই শাটলার দম্পতির সম্পর্কেই এ বার চিড় ধরল। বিচ্ছেদের কথা ঘোষণা করলেন সাইনা।