লাইট-ক্যামেরা, অভিনয়, গ্ল্যামার, খ্যাতি— বলিউডের কথা বললেই মনে পড়ে যায় এই শব্দগুলো। মুম্বইয়ের এই গ্ল্যামারাস জগৎ হাজার হাজার তরুণ-তরুণীকে আকৃষ্ট করে। বলিজগতে নাম করার স্বপ্ন নিয়ে মুম্বইয়ে পা দেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ চেষ্টা, কঠোর পরিশ্রম এবং ভাগ্যের উপর ভর করে দর্শকের মনে জায়গা করে নেন। কেউ আবার সারা জীবন চেষ্টা করেও তেমন নাম করতে পারেন না।
তবে এমনও কয়েক জন রয়েছেন যাঁরা সিনেমাজগতে জায়গা করতে না পারলেও জাঁকিয়ে বসেন মুম্বইয়ের টেলিপাড়ায়। ছোটপর্দায় রাজত্ব করেন তাঁরা। খ্যাতিও পান বিস্তর।
সে রকমই এক জন অভিনেতা যোগেশ ত্রিপাঠী। জন্মস্থান উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে অভিনেতা হতে মুম্বই এসেছিলেন তিনি। এখন তিনি টেলিপাড়ার অন্যতম উল্লেখ্যযোগ্য নাম। নিজের জোরে জনপ্রিয় ধারাবাহিক টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতাও তৈরি করেছেন অভিনেতা।
যোগেশ টেলিপাড়ায় পরিচিত তাঁর অভিনীত চরিত্র ‘হাপ্পু সিংহ’ নামে। ‘ভাবীজি ঘর পর হ্যায়’ নামে একটি ধারাবাহিকে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয় ‘হাপ্পু সিংহ’ চরিত্রটি। মজার সেই পুলিশ চরিত্র পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নিয়েছে দর্শকমনে।
‘হাপ্পু সিংহ’ চরিত্র এতই জনপ্রিয় হয় যে, ‘হাপ্পু কি উল্টান পল্টন’ নামে একটি অন্য ধারাবাহিক শুরুরও সিদ্ধান্ত নেয় প্রযোজনা সংস্থা। সেই ধারাবাহিকও জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছোয় যোগেশের অভিনয়ের জোরে।
বর্তমানে অভিনয় করে মাসে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা আয় করেন যোগেশ। তবে অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মুম্বইয়ে পা দেওয়া সাধারণ এক তরুণ থেকে জনপ্রিয় ধারাবাহিকের মুখ হয়ে ওঠার যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না তাঁর।
সম্প্রতি সিদ্ধার্থ কন্ননের ইউটিউব চ্যানেলে অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয়েছিলেন ‘হাপ্পু’ যোগেশ। সেখানে অভিনেতা জানান, রেলের চাকরির পরীক্ষা দিতে তিনি প্রথম মুম্বই এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে দুই বন্ধুও ছিলেন। তখনই মুম্বইয়ের প্রেমে পড়েন তিনি।
এর পর অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০০৪ সালে পাকাপাকি ভাবে মুম্বই চলে আসেন যোগেশ। মুম্বইয়ে এসে প্রথমে থিয়েটারে যোগ দেন তিনি। অভিনয়ে হাত পাকাতে মন দিয়ে থিয়েটারই করতেন।
তবে মুম্বইয়ে কিছু দিন কাটানোর পরই যোগেশ বুঝতে পেরেছিলেন যে, সেই শহরে টিকে থাকা সহজ নয়। শুরু হয় তাঁর লড়াই। একটি চাকরিতে যোগ দেন যোগেশ। দৈনিক ৯৫ টাকা পেতেন তিনি। থিয়েটার করে পেতেন দৈনিক ৭৫ টাকা।
এর পর জীবনযাপন করতে ছোট ছোট অনেক চাকরিই করতে হয় যোগেশকে। এমনকি ১৫০ টাকার বিনিময়ে ঘুরে ঘুরে পেনও বিক্রি করতে হয়েছিল অভিনেতাকে। সিনেমায় ‘এক্সট্রা’ হিসাবেও কাজ করতে হয়েছিল।
এত কষ্ট সত্ত্বেও হাল ছাড়েননি যোগেশ। জীবনযুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে প্রথম বিজ্ঞাপনের কাজ পান অভিনেতা। জনপ্রিয় হয় বিজ্ঞাপনটি। এর পরেই মুম্বইয়ের টেলিপাড়ায় প্রবেশ হয় তাঁর।
বিজ্ঞাপনের জনপ্রিয়তার সুবাদে ‘এফআইআর’ নামে একটি ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন যোগেশ। সেখানে তিনি অভিনেতা হিসেবে দৈনিক প্রায় ২৮০০ টাকা করে পেতেন।
এর পর বিভিন্ন ধারাবাহিকে ছোটখাটো অনেক চরিত্রেই অভিনয় করেন যোগেশ। তবে তাঁর ভাগ্য ফেরে ২০১৫ সালে। ‘ভাবীজি ঘর পর হ্যায়’ ধারাবাহিকে হাপ্পু সিংহের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
ওই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম দিকে দিনপ্রতি আট হাজার টাকা করে পেতেন যোগেশ। তবে মাসে দু’-তিন দিন কাজ পড়ত তাঁর। কিন্তু চরিত্রের জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়ে যায় যে, তাঁর মুখ বেশি করে দেখাতে বাধ্য হন নির্মাতারা।
২০১৯ সাল নাগাদ জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল হাপ্পু চরিত্রটি। ফলে যোগেশের রমরমাও বৃদ্ধি পায়। শুধু হাপ্পু চরিত্রকে নিয়ে একটি আলাদা ধারাবাহিক তৈরির সিদ্ধান্ত নেন নির্মাতারা।
যোগেশ জানিয়েছেন, বর্তমানে ‘ভাবিজী ঘর পর হ্যায়’ এবং ‘হাপ্পু কি উল্টা পল্টন’— উভয় ধারাবাহিকেই কাজ করেন তিনি। পারিশ্রমিক হিসাবে প্রতি দিন ৬০ হাজার টাকা করে পান। এখন প্রতি মাসে তিনি প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা আয় করেন বলেও জানিয়েছেন যোগেশ।
অভিনেতা আরও জানিয়েছেন যে, তিনি যখন প্রথম মুম্বইয়ে আসেন তখন অর্থের অভাবে ‘ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাসে (সিএসটি)’ চার রাত কাটিয়েছিলেন। তখনই তিনি মুম্বইয়ে বাড়ি কেনার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।
নিজের কাছে করা প্রতিজ্ঞা রেখেছেন যোগেশ। জানিয়েছেন, বর্তমানে মুম্বইয়ে তাঁর চারটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। বাড়িগুলি কিনতে তিনি কখনও কারও কাছে টাকা ধার করেননি বা ঋণ নেননি বলেও জানিয়েছেন অভিনেতা।