The Tamam Shud Case

সমুদ্রের ধারে উদ্ধার স্যুটবুট পরা দেহ, পকেটে মেলে দুই শব্দের চিরকুট! আজও ভয় ধরায় ‘তামাম শুদ’ রহস্য

১৯৪৮ সালের ১ ডিসেম্বর ওই মৃতদেহটি উদ্ধার হয়েছিল সোমার্টন সমুদ্রসৈকতের একটি প্রাচীরের পাশে। তাঁর পরনে ছিল পরিষ্কার একটি স্যুট। পায়ে ছিল পালিশ করা জুতো। কিন্তু তাঁর পোশাকে কোনও মানিব্যাগ বা পরিচয়পত্র ছিল না।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৫ ১০:২০
Share:
০১ ১৯

১৯৪৮ সালের ১ ডিসেম্বরের সকাল। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডের সোমার্টন সমুদ্রসৈকত থেকে উদ্ধার হয় স্যুটবুট পরা সুসজ্জিত এক মধ্যবয়সি ব্যক্তির দেহ। তাঁর সঙ্গে ছিল না কোনও পরিচয়পত্র। শরীরে আঘাতের চিহ্নও ছিল না। প্যান্টের পকেটে শুধু মেলে একটি রহস্যময় চিরকুট! কিন্তু কী লেখা ছিল তাতে?

০২ ১৯

ওই রহস্যময় চিরকুটে লেখা ছিল দু’টি মাত্র শব্দ— ‘তামাম শুদ’। পারসিক ভাষায় যার অর্থ, ‘শেষ’ বা ‘সমাপ্ত’। কিন্তু কোথা থেকে এল সেই দেহ? কে খুন করল? কে রেখে গেল সমুদ্রসৈকতে? আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম অমীমাংসিত এবং রহস্যময় মামলা হয়ে রয়ে গিয়েছে এই ঘটনা। চিরকুটের নাম অনুযায়ী সেই ঘটনার নাম দেওয়া হয় ‘দ্য তামাম শুদ কেস’।

Advertisement
০৩ ১৯

১৯৪৮ সালের ১ ডিসেম্বর ওই মৃতদেহটি উদ্ধার হয়েছিল সোমার্টন সমুদ্রসৈকতের একটি প্রাচীরের পাশে। তাঁর পরনে ছিল পরিষ্কার একটি স্যুট। পায়ে ছিল পালিশ করা জুতো। কিন্তু তাঁর পোশাকে কোনও মানিব্যাগ বা পরিচয়পত্র ছিল না।

০৪ ১৯

ময়নাতদন্তে মৃতের শরীরে কোনও বাহ্যিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তাঁর পেটে রক্তের দাগ দেখা গেলেও কোনও কাটাছেঁড়ার দাগ দেখা যায়নি। শরীরে মেলেনি বিষও। তাই মৃত্যুর স্পষ্ট কারণ না পেয়ে ধন্দে পড়়েন তদন্তকারীরা।

০৫ ১৯

ওই মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া জিনিসপত্র বিষয়টিকে আরও রহস্যময় করে তোলে। ওই ব্যক্তির দেহের কাছ থেকে অর্ধেক খাওয়া একটি সিগারেট, হেনলি বিচে যাওয়ার একটি অব্যবহৃত ট্রেনের টিকিট এবং নর্থ গ্লেনেগ যাওয়ার একটি বাসের টিকিট ছিল।

০৬ ১৯

পকেটে ছিল চিরুনি, চুইংগাম এবং দেশলাই। কিন্তু কোনও কিছুতেই নাম-ঠিকানা ছিল না। কর্মক্ষেত্র সংক্রান্ত নথিও পাওয়া যায়নি।

০৭ ১৯

উল্টে পকেট থেকে মোটা কাগজের ওই চিরকুটটি উদ্ধার হয়, যার মধ্যে লেখা ছিল ‘তামাম শুদ’। বাক্যাংশটি ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াত থেকে নেওয়া, যা ভাগ্য, স্বাধীন ইচ্ছা এবং জীবনের ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতির উপর জোর দেয়।

০৮ ১৯

পুলিশ-প্রশাসন যখন মৃতের পরিচয় জানতে মরিয়া হয়ে ওঠেন, তখন স্থানীয়েরা রহস্যময় সেই ব্যক্তির নাম দেন ‘সোমার্টন ম্যান’ বা ‘সোমার্টন মানব’। অনেক তদন্ত সত্ত্বেও মৃত্যুর কারণ এবং রহস্যময় বার্তার নেপথ্যের অর্থ খুঁজে বার করা যায়নি। বরং একাধিক জল্পনা এবং ষড়যন্ত্রের তত্ত্বকে উস্কে দেয় গোটা ঘটনা।

০৯ ১৯

চিরকুটের তাৎপর্য আরও গভীর হয়ে ওঠে যখন কয়েক মাস পর সমুদ্রসৈকতের কাছে একটি পরিত্যক্ত গাড়িতে রুবাইয়াতের একটি বিরল সংস্করণ খুঁজে পায় পুলিশ। সংস্করণটির শেষ পৃষ্ঠায় একটি অংশ ছেঁড়া ছিল। মিলিয়ে দেখা যায় সেই অংশই উদ্ধার হয়েছে মৃতের প্যান্টের পকেট থেকে।

১০ ১৯

বইয়ের ভিতরে আরও সূত্র খুঁজে পান তদন্তকারীরা। বইয়ে বেশ কিছু সাঙ্কেতিক লেখা উদ্ধার হয়। হাতে লেখা সেই সঙ্কেত পাঠোদ্ধারে নেমে পড়েন গোয়েন্দারা। কিন্তু কেউ সেই লেখার মর্মার্থ উদ্ধার করতে পারেননি।

১১ ১৯

বইয়ের ভিতরে পেনসিলে লেখা একটি ফোন নম্বরও উদ্ধার হয়। ওই ফোন নম্বরটি ছিল স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী জো টমসনের।

১২ ১৯

দেহটি সৎকার করে দিলেও সেটির একটি প্লাস্টারের আবক্ষ মূর্তি তৈরি করিয়েছিলেন গোয়েন্দারা। সেই মূর্তি জো-কে দেখানোর সময় তিনি দৃশ্যত আঁতকে উঠেছিলেন। কিন্তু নিহতকে চিনতে অস্বীকার করেন।

১৩ ১৯

রহস্য আরও ঘনীভূত হয় যখন জো-র পুত্র রবিন এবং ‘সোমার্টন মানব’-এর মধ্যে অনেক মিল খুঁজে পান তদন্তকারীরা। তদন্তকারীদের এ-ও মনে হয়েছিল যে, বেওয়ারিশ সেই দেহ আসলে জো-এর সন্তানের। কিন্তু জো কখনও সে কথা স্বীকার করেননি।

১৪ ১৯

‘সোমার্টন মানব’কে ঘিরে যে জল্পনাগুলি তৈরি হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম হল— ওই ব্যক্তি কোনও গুপ্তচর ছিলেন এবং হয় তাঁকে কেউ খুন করেছিলেন, নয়তো তিনি আত্মঘাতী হয়েছিলেন।

১৫ ১৯

অনেকে আবার মনে করেছিলেন, ব্যক্তিগত শত্রুতা বা প্রেমঘটিত কারণে খুন করা হয়েছিল ‘সোমার্টন মানব’কে এবং তাঁকে খুন করা হয়েছিল বিষপ্রয়োগ করে।

১৬ ১৯

কেউ কেউ আবার দাবি করছিলেন, জো-ই খুন করেছিলেন ‘সোমার্টন মানব’কে। কিন্তু চাতুর্যের জন্য পুলিশ কখনও তাঁকে ধরতে পারেনি।

১৭ ১৯

৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ‘তামাম শুদ’ মামলার সমাধান হয়নি। তার অন্যতম কারণ, মৃতের পরিচয় জানতে না পারা এবং রহস্যজনক সেই সব সঙ্কেত পাঠোদ্ধার করতে না পারা। তবে ২০২২ সালে ওই হত্যাকাণ্ডের আংশিক কিনারা হয়।

১৮ ১৯

আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্যে ২০২২ সালে ‘সোমার্টন মানব’-এর দাঁত এবং আঙুলের ছাপের ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা যায় তার সঙ্গে মিল রয়েছে মেলবোর্নের এক জন বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনিয়ার এবং যন্ত্রনির্মাতা কার্ল ওয়েবের।

১৯ ১৯

তবে কী ভাবে তিনি সোমার্টন সৈকতে পৌঁছেছিলেন তা রহস্যই রয়ে গিয়েছে। রহস্য রয়ে গিয়েছে সাঙ্কেতিক লেখা, চিরকুট এবং মৃত্যুর ধরন নিয়েও।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement