উচ্চতা মেরেকেটে ৪০০ মিটার। তবুও সেটি পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় পর্বত। সেই পর্বতে আরোহণ যেমন নিষিদ্ধ, তেমনই তা পরিচিত ‘ভিন্গ্রহীদের ঘাঁটি’ হিসাবে। কথা হচ্ছে স্পেনের টিন্ডায়া পর্বতকে নিয়ে।
স্পেনের টিন্ডায়া পর্বত তার গভীর রহস্যের জন্য পরিচিত। এটি বিশ্বের রহস্যময় স্থানগুলির মধ্যে একটি। এই অনন্য পর্বতে আরোহণ কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। এমনকি, স্থানীয়েরা এই পর্বতের ধারেকাছে পর্যন্ত যেতে ভয় পান।
অনেক ভ্রমণপিপাসু টিন্ডায়া পর্বতের রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করেছেন। তেমনই এক জন জোশুয়া ম্যাককার্টনি। স্পেন ভ্রমণের সময় পর্বতটি দেখে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন তিনি।
টিন্ডায়ার কাছাকাছি গিয়েছিলেন জোশুয়া। পর্বতের গোপন রহস্য উন্মোচন করার জন্য স্থানীয়দের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন।
এর পর তিনি পর্বত সম্পর্কে এমন আশ্চর্যজনক বিবরণ প্রকাশ করেন যা বিস্মিত করেছিল সারা বিশ্বকে।
আটলান্টিক মহাসাগরে স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের ফুয়ের্তেভেন্তুরা দ্বীপে রয়েছে টিন্ডায়া পর্বত। এর উচ্চতা মাত্র ৪০০ মিটার।
তবে পর্বতটির আকৃতি বড়ই অদ্ভুত, কাটা শঙ্কুর মতো। আগ্নেয়গিরির পাথর এবং মরুভূমির ভূখণ্ড দ্বারা বেষ্টিত পাহাড়টির আসল রহস্য পাহাড়ের ভিতর এবং উপরে লুকিয়ে।
স্পেনীয় ভাষায় টিন্ডায়া পাহাড়ের নাম ‘মন্টানা দে টিন্ডায়া’। ১৯৯০ সালে টিন্ডায়া পর্বতের চূড়ায় একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হয়েছিল। পাথরে খোদাই করা ৩৭৯টি পায়ের ছাপ মিলেছিল সেখানে।
আশ্চর্যের বিষয় হল এর প্রতিটিই ছিল বাঁ পায়ের ছাপ এবং আকার ছিল প্রায় একই, ২৫-৩০ সেমি লম্বা। সব ক’টি পায়ের ছাপের মুখই ছিল পর্বতের পশ্চিম দিকে।
এর পর সেই পায়ের ছাপগুলির কার্বন ডেটিং করে দেখা যায়, সেগুলি ২০০০ বছরের পুরোনো।
একই সঙ্গে এ-ও আবিষ্কৃত হয় যে, পর্বতটির চৌম্বকক্ষেত্র স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ গুণ শক্তিশালী। কোনও কম্পাসই কাজ করে না এখানে, যা পর্বতটিকে আরও রহস্যময় করে তোলে।
স্থানীয়েরা টিন্ডায়াকে একটি ‘পবিত্র পর্বত’ হিসাবে শ্রদ্ধা করে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, বিশেষ জাদুকরি শক্তিতে পরিপূর্ণ এই পর্বত।
স্থানীয়দের একাংশের দাবি, রাতে অদ্ভুত আলো দেখা যায় পাহাড়ের চূড়া থেকে। ফলে অনেকেরই অনুমান, টিন্ডায়া পাহাড় ‘ভিন্গ্রহীদের ঘাঁটি’ এবং ওই ভিন্গ্রহীদের একটি করেই পা রয়েছে।
১৯৯৫ সালে, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় জায়গা পায় টিন্ডায়া। পায়ের ছাপগুলি রক্ষা করার জন্য, স্পেনের সরকার ওই পর্বতে আরোহণ সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ করে দেয়। শুধুমাত্র বিজ্ঞানীদের পর্বত পরিদর্শনের অনুমতি রয়েছে।
পর্বতটিতে ভাস্কর এডুয়ার্ডো চিলিদার পরিকল্পনা করা একটি শিল্পকর্ম তৈরির কথা ছিল, যার মধ্যে একটি বৃহৎ কৃত্রিম গুহা খননেরও কথা ছিল। কিন্তু স্থানীয় পরিবেশবিদেরা এই প্রকল্পের বিরোধিতা করেছিলেন। এই নির্মাণকাজ এখনও শুরু হয়নি।