রিয়্যালিটি শোয়ের মধ্যে সঙ্গম করার ভঙ্গি নিয়ে আলোচনা, সেই সংক্রান্ত দৃশ্য অভিনয় করে দেখানো এবং আপত্তিকর কথাবার্তা! অশালীনতা ছড়ানোর অভিযোগ উঠল ‘ওভার দ্য টপ’ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্ম ‘উল্লু’র একটি শোয়ের বিরুদ্ধে। ওই শো নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে বিতর্ক।
অভিনেতা এজাজ় খান সঞ্চালিত ওই বিতর্কিত রিয়্যালিটি শোয়ের নাম ‘হাউস অ্যারেস্ট’। সেই রিয়্যালিটি শোয়ের একটি ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত।
ভাইরাল সেই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে শোয়ে অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের সঙ্গে কামসূত্র সংক্রান্ত আলোচনা করছেন সঞ্চালক এজাজ়। তবে বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি।
এর পর আরও এক ধাপ এগিয়ে কয়েক জন প্রতিযোগীর সঙ্গে কামসূত্রের বিভিন্ন সঙ্গম ভঙ্গি নিয়ে অস্বস্তিকর কথা বলেন তিনি। এমনকি, প্রতিযোগীদের ওই ভঙ্গিমা করেও দেখাতে বলেন এজাজ়।
এক মহিলা প্রতিযোগীকে সঙ্গমের বিভিন্ন ভঙ্গিমার অভিজ্ঞতা আছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন করতে দেখা যায় এজাজ়কে। সেই ভিডিয়োই প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও ভাইরাল সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম।
ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পাশাপাশি অনুষ্ঠানে মহিলা প্রতিযোগীদের অন্তর্বাস খুলতে বাধ্য করার জন্যও বিতর্কের মুখে পড়েছে ‘হাউস অ্যারেস্ট’।
ভাইরাল ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসতেই দেশ জুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। আপত্তি জানিয়েছেন ‘উল্লু’র ব্যবহারকারীরা। বিতর্কের মুখে পড়েছে রিয়্যালিটি শো ‘হাউস অ্যারেস্ট’ শোয়ের সঞ্চালক এবং নির্মাতারা। নিন্দার ঝড় উঠেছে দেশের বিভিন্ন মহল থেকে।
ব্যবহারকারীদের একাংশের অভিযোগ, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে এই ধরনের শো প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়াচ্ছে। এই ধরনের শোয়ের মাধ্যমে মেয়েদের প্রকাশ্যে বিপথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন কয়েক জন ব্যবহারকারী।
নেট ব্যবহারকারীদের একাংশ তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন অনেকে।
ব্যবহারকারীদের আপত্তির পাশাপাশি ‘হাউস অ্যারেস্ট’ শোটি নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন দেশের রাজনীতিবিদেরাও। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন লোকসভার সাংসদ নিশিকান্ত দুবে।
নিশিকান্ত জানিয়েছেন, একটি সংসদীয় কমিটি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবে। এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘‘এটা চলতে পারে না। আমাদের কমিটি বিষয়টি তদন্ত করবে।’’
বিহারের ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক বরুণ রাজ সিংহও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে ‘দেশের সন্তানদের বাঁচানোর’ অনুরোধ করেছেন।
অন্য দিকে, উদ্ভবসেনা সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী জানিয়েছেন, তিনি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। ‘উল্লু’ এবং ‘অল্ট বালাজি’র মতো ‘অশ্লীল’ ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলি কেন্দ্রীয় সরকার আরোপিত নিষেধাজ্ঞা থেকে কী ভাবে রক্ষা পেতে সক্ষম হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন (এনসিডব্লিউ)-ও। একটি বিবৃতিতে এনসিডব্লিউ জানিয়েছে, এই ধরনের অশ্লীল বিষয়বস্তু মহিলাদের মর্যাদা লঙ্ঘন করে এবং অনলাইন বিনোদনের নামে একটি ক্ষতিকারক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।
আগামী ৯ মে ‘উল্লু’র সিইও বিভু আগরওয়াল এবং সঞ্চালক এজাজ়কে তলবও করেছে মহিলা কমিশন। এনসিডব্লিউ উল্লেখ করেছে যে, যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয় তা হলে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আওতায় গুরুতর শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে অভিযুক্তদের।
জানা গিয়েছে, শোয়ের সঞ্চালক এজাজ়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই একটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। বিতর্কের মুখে পড়ে ‘উল্লু’ তার ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ থেকে ‘হাউস অ্যারেস্ট’-এর সমস্ত পর্ব সরিয়ে দিয়েছে বলেও খবর।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে আপত্তিকর দৃশ্য দেখানোর অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় কেন্দ্র-সহ বেশ কিছু সংস্থাকে নোটিস পাঠিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। অনলাইন মাধ্যমে ‘অশ্লীলতা’র অভিযোগ উঠে আসাকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বিষয় বলে মনে করেছিল শীর্ষ আদালত।
জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিভিন্ন ওটিটি সংস্থা, সমাজমাধ্যম এবং অনলাইন ‘সার্চ ইঞ্জিন’কে নোটিস পাঠিয়েছিল শীর্ষ আদালতের বিচারপতি বিআর গবই এবং বিচারপতি এজি মাসিহের বেঞ্চ। আইনি খবর পরিবেশনকারী ওয়েবসাইট ‘লাইভ ল’ অনুযায়ী, ওই তালিকায় ছিল নেটফ্লিক্স এবং অ্যামাজ়ন প্রাইমের মতো নামী প্ল্যাটফর্মও। সুপ্রিম কোর্টের সেই পদক্ষেপের পর অশ্লীল বিষয়বস্তু সম্প্রচারের অভিযোগ উঠল ‘উল্লু’র শোয়ের বিরুদ্ধে।