Fighter Jets

তেজস, রাফাল, এফ-১৬, সুখোই... কোনটি চালানো কঠিন, কোনটি তুলনামূলক সহজ? কোনটি পাইলটদের ‘স্বপ্নযান’?

আধুনিক সামরিক শক্তিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হল যুদ্ধবিমান। যুদ্ধবিমান ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে শত্রু সংহারে পটু। বিশ্বের সামরিক শক্তির ধারা যত এগিয়েছে তত উন্নত হয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অস্ত্র।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৫ ১৪:২৭
Share:
০১ ২৩

‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরুর সময় থেকেই ভারতীয় বিমানবাহিনীর জয়জয়কার শুরু হয়েছে। আর তার পর থেকেই বিভিন্ন দেশের বায়ুসেনা এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা যুদ্ধবিমানগুলি নিয়ে কৌতূহল বে়ড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

০২ ২৩

আধুনিক সামরিক শক্তিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হল যুদ্ধবিমান। যুদ্ধবিমান ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে শত্রু সংহারে পটু। বিশ্বের সামরিক শক্তির ধারা যত এগিয়েছে তত উন্নত হয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অস্ত্র।

Advertisement
০৩ ২৩

ভারতের হাতে যে যুদ্ধবিমান বহর রয়েছে, তার মধ্যে তেজস, রাফাল এবং সুখোই অন্যতম। মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে, সুখোই-৩০এমকেআই যখন আকাশে গর্জন করে বা রাফাল যখন নির্ভুল ভাবে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়, তখন সেগুলি কী ভাবে চালনা করেন বায়ুবীরেরা? কোন যুদ্ধবিমান চালানো কঠিন এবং কোন যুদ্ধবিমান তুলনামূলক ভাবে সহজে চালনা করা যায়?

০৪ ২৩

সেই উত্তর অবশ্য সহজ নয়। এখনকার যুদ্ধবিমানগুলি এতটাই অত্যাধুনিক যে, সেগুলি চালানো নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার উপর যেমন নির্ভর করে, তেমনই নির্ভর করে চালকের দক্ষতার উপর। কিছু যুদ্ধবিমান চালানো যেমন কম ঝক্কির, তেমনই অনেক যুদ্ধবিমান চালাতে প্রয়োজন বিশেষ অনুশীলনের।

০৫ ২৩

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন যুদ্ধবিমানের মধ্যে কোনটা চালানো কঠিন এবং কোনটা নিয়ন্ত্রণ করা তুলনামূলক ভাবে সহজ।

০৬ ২৩

তালিকার প্রথমেই উল্লেখ করা যায় আমেরিকার তৈরি ‘এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন’ যুদ্ধবিমানটির নাম। চালকবান্ধব যুদ্ধবিমান হিসাবেই পরিচিত এফ-১৬। আমেরিকায় নির্মিত যুদ্ধবিমানটি বিগত কয়েক দশক ধরেই নেটো এবং বন্ধু দেশগুলির কাছে প্রিয়।

০৭ ২৩

পাকিস্তানের হাতেও এফ-১৬ যুদ্ধবিমান রয়েছে। অত্যাধুনিক ‘ফ্লাই-বাই-ওয়্যার’ প্রযুক্তি বিমানটিকে সহজাত ভাবে স্থিতিশীল রাখে এবং নতুন চালকেরাও সহজেই যুদ্ধবিমানটি চালানোর কৌশল রপ্ত করতে পারেন। এফ-১৬য়ের একক-ইঞ্জিন যুদ্ধবিমানটির রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা আরও সহজ করে তোলে।

০৮ ২৩

এর পরেই রয়েছে সুইডেনের তৈরি যুদ্ধবিমান ‘জেএএস-৩৯ গ্রিপেন’। সুইডিশ মহাকাশ এবং প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘সাব এবি’র তৈরি যুদ্ধবিমানটি চালানো তুলনামূলক ভাবে সহজ বলেই মনে করেন ওয়াকিবহল মহলের একাংশ।

০৯ ২৩

একক-ইঞ্জিনের যুদ্ধবিমানটি তুলনামূলক হালকা হওয়ার পাশাপাশি বহুমুখী ‘প্রতিভা’র অধিকারী। জেএএস-৩৯য়ের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ পাইলটের চাপ কমিয়ে দেয়। বিমানটিকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তাঁরা। আর এই কারণেই বেশ কয়েকটি দেশ তাদের বিমানবহরে জেএএস-৩৯কে যুক্ত করেছে।

১০ ২৩

তালিকায় এর পরে রয়েছে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ভারতের যুদ্ধবিমান ‘তেজস এমকে১’। চতুর্থ প্রজন্মের ‘লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফ্‌ট’ গোত্রের তেজস-এর ৬৫ শতাংশেরও বেশি যন্ত্রাংশ এবং সরঞ্জাম ভারতীয় সংস্থাগুলিতে তৈরি। হালকা যুদ্ধবিমান উৎকর্ষের মাপকাঠিতে তেজসের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলনায় আসে চিনা জেএফ-১৭।

১১ ২৩

তবে চিনের জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানের তুলনায় তেজসের নয়া সংস্করণ প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে এগিয়ে বলে একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিষয়ক রিপোর্টে জানানো হয়েছে। ‘অ্যাক্টিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যান্‌ড অ্যারে রেডার’ (এএসইএ), মাঝ-আকাশে জ্বালানি ভরার সুবিধা এবং ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত তেজসে ‘কোয়াড্রাপ্লেক্স ডিজিটাল এফবিডব্লিউ সিস্টেম’ রয়েছে, যা বিমানকে স্থিতিশীল রাখে।

১২ ২৩

যদিও সব যুদ্ধবিমান সমান ভাবে তৈরি হয় না। কিছু যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন। বহু অভিজ্ঞ পাইলটেরও মাঝেমধ্যে সেগুলি চালনা করতে বেগ পেতে হয়। এই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে রাশিয়ার তৈরি ‘মিগ-২১ বাইসন’। ভারতের হাতেও রয়েছে ওই যুদ্ধবিমান।

১৩ ২৩

পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন জমানার বিমান নির্মাতা সংস্থা মিকোয়ান-গুরেভিচ (সংক্ষেপে মিগ) অ্যারোস্পেস কর্পোরেশনের নকশায় ১৯৫৫ সালে তৈরি হয়েছিল মিগ-২১ যুদ্ধবিমান।

১৪ ২৩

১৯৬২ সালে চিন যুদ্ধে বিপর্যয়ের পর ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আধুনিক যুদ্ধবিমানের খোঁজ শুরু করে। তখনই নজর পড়ে সোভিয়েতের মিগ-২১-এর উপর। কয়েক দফা পরীক্ষার পর ১৯৬৩-র শেষ পর্বে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে আসে সোভিয়েতে তৈরি যুদ্ধবিমানটির প্রথম পর্যায়ের সংস্করণ মিগ-২১ এফএল।

১৫ ২৩

‘বুড়ো’ সেই যুদ্ধবিমান এখনও ভারতীয় বিমানবাহিনীতে রয়েছে। তবে বেশ কয়েকটি কারণে দুর্নাম রয়েছে মিগ-২১য়ের। ‘ফ্লাই-বাই-ওয়্যার সিস্টেম’ না থাকা বিমানটি স্বয়ংক্রিয় নয়। পাইলটকে নিজে থেকেই চালনা করতে হয় বিমানটিকে। উচ্চ অবতরণ গতি এবং সঙ্কীর্ণ ককপিট বিপদের ঝুঁকি বাড়ায়।

১৬ ২৩

তালিকায় এর পর রয়েছে আমেরিকার এফ-১৪ টমক্যাট যুদ্ধবিমানটি। ভারী এবং দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট এফ-১৪ টমক্যাট এক সময় আমেরিকার বায়ুসেনার অন্যতম নির্ভরযোগ্য ‘সদস্য’ ছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে সেটির ব্যবহার বন্ধ হয়।

১৭ ২৩

এটি চালানোর জন্য প্রয়োজন হত অভিজ্ঞ চালকদের। বিশেষ করে রণতরীতে অবতরণের সময় এবং ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকত এফ-১৪কে নিয়ে।

১৮ ২৩

নিয়ন্ত্রণ করা তুলনামূলক ভাবে কঠিন এমন যুদ্ধবিমানের তালিকায় রয়েছে রাশিয়ার সুখোই-৩০ এমকেআই-ও। সুখোই গোত্রের সব যুদ্ধবিমানই রাশিয়ায় তৈরি। তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী শ্রেণিগুলির অন্যতম হল সুখোই-৩০। ভারতীয় বিমানবাহিনী সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমানই ব্যবহার করে। এই ফাইটার জেটে রয়েছে ক্যানার্ড নামে অতিরিক্ত দু’টি ডানা।

১৯ ২৩

সুখোই-৩০ অত্যন্ত শক্তিশালী হলেও সেটি চালানো খুব সহজ নয়। দীর্ঘমেয়াদি অভিযানে স্থিতিশীল রাখতে যুদ্ধবিমানটিকে ক্রমাগত নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় বিমানচালকদের।

২০ ২৩

ইউরোপের ‘ইউরোফাইটার টাইফুন’ নিয়ন্ত্রণ করাও চালকদের জন্য মাঝেমধ্যে কঠিন হয়ে পড়ে। ‘ফ্লাই-বাই-ওয়্যার সিস্টেম’ না থাকার কারণে যুদ্ধবিমানটি নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ নয়। বিমানটি চালানোর জন্য কঠোর প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় চালকদের।

২১ ২৩

কিন্তু এই দুই তালিকার মধ্যে কোথায় ঠাঁই পাবে ভারতের হাতে থাকা রাফাল যুদ্ধবিমান? ফরাসি প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘দাসোঁ অ্যাভিয়েশন’-এর তৈরি রাফাল চালাতে যথেষ্ট অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। তবে উচ্চ গতির জন্য পরিচিত রাফাল অভিজ্ঞ বিমানচালকদের জন্য একপ্রকার ‘স্বপ্নযান’।

২২ ২৩

এর ‘স্পেকট্রা ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম’ শত্রু চিহ্নিত করে দ্রুত নিকেশ করতে পারদর্শী। এক লহমায় মাটি থেকে আকাশের অনেক উঁচুতে উ়ড়ে যেতে পারে রাফাল। যুদ্ধবিমানটির নিয়ন্ত্রণ আয়ত্ত করতে বেশ সময় লাগে চালকদের।

২৩ ২৩

জটিলতা সত্ত্বেও রাফালের ‘ফ্লাই-বাই-ওয়্যার সিস্টেম’ যুদ্ধবিমানের উ়ড়ানকে তুলনামূলক ভাবে মসৃণ করে তোলে। তবে আকাশে আধিপত্য বিস্তার, পর্যবেক্ষণ এবং লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানার দিক থেকে রাফালের জুড়ি মেলা ভার।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement