Black Box

নামে কালো, রঙে কমলা! কেন এত গুরুত্বপূর্ণ ‘ব্ল্যাক বক্স’? কী ভাবে কাজ করে, কী দিয়েই বা তৈরি ওই যন্ত্র?

কোনও বিমান ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়লেও ‘ব্ল্যাক বক্স’ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অক্ষত থাকে। ‘ব্ল্যাক বক্স’ তৈরি হয় টাইটানিয়াম বা স্টেনলেস স্টিলের মতো শক্তপোক্ত উপকরণ দিয়ে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২৫ ০৭:৫২
Share:
০১ ২০

বৃহস্পতিবার অহমদাবাদের সর্দার বল্লভভাই পটেল বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভেঙে পড়ে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। অসামরিক বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ডিজিসিএ) জানিয়েছে, বিমানটিতে ২৪২ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২৩০ জন যাত্রী এবং ১২ জন বিমানকর্মী। এক জন বাদে বাকি সব যাত্রীরই মৃত্যু হয়েছে ওই দুর্ঘটনায়।

০২ ২০

৬২৫ ফুট উচ্চতা থেকে ডাক্তারি পড়ুয়াদের হস্টেলে আছড়ে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার এআই-১৭১। ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। গলগল করে কালো ধোঁয়া বেরোতে থাকে।

Advertisement
০৩ ২০

অহমদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায় একমাত্র জীবিত যাত্রী ৩৮ বছরের বিশ্বাস কুমার রমেশ। ২৪২ জনের মধ্যে বাকি সকলেরই মৃত্যু হয়েছে। রমেশ বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খুব বেশি চোট তাঁর লাগেনি। রমেশের সঙ্গে দেখা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। অন্য দিকে, ডাক্তারি পড়ুয়াদেরও অনেকের হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

০৪ ২০

বিমান দুর্ঘটনার সঠিক কারণ এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। তবে শুক্রবার বিমানের ‘ব্ল্যাক বক্স’ উদ্ধার হওয়ার কারণে সেই বিষয়ে আলোকপাত করা সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু কী এই ‘ব্ল্যাক বক্স’? কেন এত গুরুত্বপূর্ণ বিমানের ওই যন্ত্র?

০৫ ২০

বিমান সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য, পাইলট ও সহকারি-চালকের মধ্যে কথোপকথন এবং তাঁদের সব সিদ্ধান্তই ব্ল্যাক বক্সে রেকর্ডিং হিসাবে সংরক্ষিত থাকে, যা মূলত বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে কাজে লাগে।

০৬ ২০

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৫৩ সালে অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানী ডেভিড ওয়ারেন ককপিট ভয়েস রেকর্ডারের ধারণাটি সামনে আনেন।

০৭ ২০

১৯৫৩ সালে বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক জেট বিমান ‘দ্য কমেট’-এর দুর্ঘটনার তদন্ত করছিলেন ওয়ারেন। তাঁর মত ছিল, বিমানের ককপিটে কণ্ঠস্বরের রেকর্ডিং রাখা সম্ভব হলে তা দুর্ঘটনার পরে তদন্তকারীদের দুর্ঘটনার কারণ বুঝতে সাহায্য করবে।

০৮ ২০

ওয়ারেন ১৯৫৬ সালে একটি প্রোটোটাইপ নকশা এবং নির্মাণ করেন। যন্ত্রটি কতটা মূল্যবান হতে পারে তা বুঝতে পেরে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাগুলি সেই যন্ত্র বিমানে ব্যবহার শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই যন্ত্র আধুনিক হয়েছে।

০৯ ২০

ব্ল্যাক বক্স দু’টি যন্ত্র দিয়ে তৈরি— ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (এফডিআর)।

১০ ২০

জাতীয় পরিবহণ সুরক্ষা বোর্ড (এনটিএসবি)-এর ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ককপিট ভয়েস রেকর্ডার বা সিভিআর রেডিয়ো তরঙ্গ, পাইলটের কণ্ঠস্বর এবং ইঞ্জিনের শব্দের মতো শব্দ সংগ্রহ করে।

১১ ২০

কী ঘটেছে তার উপর নির্ভর করে তদন্তকারীরা ইঞ্জিনের শব্দ-সহ রেকর্ডে থাকা অন্য তথ্যগুলি খতিয়ে দেখেন। ইঞ্জিনের শব্দ থেকে তদন্তকারীরা প্রায়শই ইঞ্জিনের গতি এবং যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়ে জানতে পারেন।

১২ ২০

তদন্তকারীরা বিমানচালক এবং ক্রুদের মধ্যে কথোপকথন ও বিমান ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে চালকদের যোগাযোগের তথ্যও সিভিআর থেকে জানতে পারেন। তদন্তকারীরা কণ্ঠস্বর রেকর্ডিংয়ের একটি সূক্ষ্ম প্রতিলিপি তৈরি করেন, যা তৈরি করতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

১৩ ২০

অন্য দিকে, ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার বা এফডিআর একটি বিমানের উচ্চতা, বায়ুর গতি ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করে। কয়েকটি ব্ল্যাক বক্স বিমানের হাজারটিরও বেশি বৈশিষ্ট্যের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।

১৪ ২০

ডানার অবস্থান থেকে শুরু করে ধোঁয়ার অ্যালার্ম সংক্রান্ত তথ্য পর্যন্ত রেকর্ড করা যেতে পারে ব্ল্যাক বক্সে। সংগৃহীত তথ্য থেকে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের কম্পিউটার অ্যানিমেটেড ভিডিয়োও তৈরি করা যেতে পারে।

১৫ ২০

নাম ‘ব্ল্যাক বক্স’ হলেও সেই যন্ত্রের রং কিন্তু কালো নয়। বাক্সটি সাধারণত কমলা রঙের হয়। বিমানের ধ্বংসাবশেষে সহজেই যাতে খুঁজে পাওয়া যায়, সে কারণেই যন্ত্রটির ও রকম রং করা হয়।

১৬ ২০

কিন্তু কেন কোনও বিমান ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়লেও ‘ব্ল্যাক বক্স’ অধিকাংশ ক্ষেত্রে অক্ষত থাকে? ‘ব্ল্যাক বক্স’ তৈরি হয় টাইটানিয়াম বা স্টেনলেস স্টিলের মতো শক্তপোক্ত উপকরণ দিয়ে। যন্ত্রটি এমন ভাবেই তৈরি করা হয়েছে যাতে প্রচুর আঘাত, আগুন এবং গভীর সমুদ্রের চাপেও সেটি সহজে নষ্ট না হয়।

১৭ ২০

দুর্ঘটনার পরে কোনও বিমান সমুদ্রে ভেঙে প়ড়লে এফডিআর সক্রিয় ভাবে ১৪ হাজার ফুট গভীর থেকেও সঙ্কেত পাঠাতে পারে। সিভিআর ককপিটে এবং এফডিআর বিমানের শেষের অংশে বসানো হয়।

১৮ ২০

দুর্ঘটনার কবলে পড়া বিমান থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করার জন্য চলতি বছরের শুরুতে রাজধানী দিল্লিতে ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডার ল্যাবরেটরি উদ্বোধন করা হয়েছিল। এয়ার ইন্ডিয়ার এআই-১৭১-এর ‘ব্ল্যাক বক্স’ মেরামত করে তথ্য পুনরুদ্ধারের কাজ সেখানেই হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

১৯ ২০

বিমান দুর্ঘটনার মূল কারণ খুঁজে বার করার ক্ষেত্রে ‘ব্ল্যাক বক্স’-এর উপর নির্ভর করা হলেও সেই যন্ত্রের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিমান দুর্ঘটনার এমন নজিরও রয়েছে যেখানে ‘ব্ল্যাক বক্স’ ঘেঁটে গুরুত্বপূর্ণ তেমন কোনও তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

২০ ২০

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্যাঙ্কক থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করা জেজু এয়ারের একটি বিমান ১৮১ জন আরোহী নিয়ে ভেঙে পড়ে। ১৮১ জনের মধ্যে নিহত হন ১৭৯ জন। তবে সেই বিমানের ‘ব্ল্যাক বক্স’ উদ্ধারের পর সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিলেন তদন্তকারীরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement