বাগেশ্বর ধামের প্রধান পুরোহিত ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ শাস্ত্রী ওরফে বাগেশ্বর ধাম সরকার ওরফে বাগেশ্বর বাবা দেশের এক জন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। কারণ, তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব এখন নিজের রাজ্য মধ্যপ্রদেশের বাইরেও বিস্তৃত।
রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি বাগেশ্বর ধামে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাগেশ্বর ধামে এসে ‘বাগেশ্বর ধাম মেডিক্যাল অ্যান্ড সায়েন্স রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। এমনকি, ধীরেন্দ্রকৃষ্ণকে তাঁর ‘ছোট ভাই’ হিসাবেও সম্বোধন করেন মোদী।
মধ্যপ্রদেশের বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলের ছতরপুরে অবস্থিত বাগেশ্বর ধামে প্রতি বছর সমাগম হয় লক্ষ লক্ষ ভক্তের।
ভক্তদের দাবি, বাগেশ্বর বাবা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। ভক্তদের মন পড়ে তাঁদের সমস্যা সমাধান করেন তিনি।
ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ বাগেশ্বর ধামের প্রধান। ২৯ বছর বয়সি স্বঘোষিত গুরুর জন্ম ১৯৯৬ সালের ৪ জুলাই। জন্মের সময় তাঁর নাম ছিল ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ গর্গ। পরে তিনি ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ শাস্ত্রী নাম গ্রহণ করেন।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধীরেন্দ্রকৃষ্ণের মায়ের নাম সরোজ গর্গ, বাবা রামকৃপাল গর্গ। রামকৃপাল পেশায় পুরোহিত ছিলেন। দাদু ভগবানদাস গর্গ ছিলেন সাধু।
নির্মোহী আখড়ায় হনুমান মন্দিরের কাছে ভক্তদের নিয়ে সভা বসাতেন ভগবানদাস। ধীরেন্দ্রকৃষ্ণও সেখানে যেতেন।
পরে ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ সেখানেই ‘দৈব দরবার’ শুরু করেন, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ভক্তদের দাবি, আধ্যাত্মিক পথে মানুষের সমস্যা সমাধান করেন বাগেশ্বর ধাম সরকার। মানুষের মনের কথা ‘পড়ে’ ফেলেন অনায়াসে।
ভক্তেরা মনে করেন ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। কারও সম্পর্কে না জেনেই নাকি তিনি কাগজে গড়গড় করে তাঁদের সম্পর্কে লিখে ফেলেন। এক ব্যক্তির শরীর থেকে ‘ভূত’ তাড়িয়েও হইহই ফেলে দিয়েছিলেন বাগেশ্বর ধামের প্রধান।
বিগত কয়েক বছরে শাস্ত্রীর রাজনৈতিক অবস্থানও উল্লেখযোগ্য ভাবে বিকশিত হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে তাঁর বক্তৃতায় রাজনীতির ছাপ থাকত না। হনুমানজি এবং ধর্ম নিয়েই কথা বলতেন তিনি।
তবে গত দু’বছরে হিন্দুত্ববাদী অবস্থান গ্রহণ করেছেন তিনি। নিজেকে ‘হিন্দুরাষ্ট্র যোদ্ধা’ হিসাবেও চিহ্নিত করেছেন।
ভারতকে হিন্দু জাতি হিসাবে ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ। হিন্দুদের ধর্মান্তরের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন।
বর্তমানে ধীরেন্দ্রকৃষ্ণের প্রভাব শুধুমাত্র মধ্যপ্রদেশে সীমাবদ্ধ নেই। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলিতেও ছড়িয়ে পড়েছে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বাগেশ্বর বাবার সেই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানোর জন্য কংগ্রেস এবং বিজেপি— উভয় পক্ষই নাকি তাঁর সঙ্গে ভাব জমানোর চেষ্টা করেছে অতীতে। মধ্যপ্রদেশের জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজের কাছে বাগেশ্বর বাবার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। আর সে কারণেই ওই চেষ্টা।
তবে বাগেশ্বর ধামের প্রধানের সঙ্গে নৈকট্যের নিরিখে এগিয়ে ছিল বিজেপিই। প্রধানমন্ত্রীর বাগেশ্বর ধামে আসার পর সেই বিষয়ে আবার সিলমোহর পড়ল।
বিজেপি সূত্রে খবর, আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনে গ্রামীণ ভোটারদের মধ্যে ধীরেন্দ্রকৃষ্ণের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে চাইছে পদ্মশিবির।
অতীতে তাঁর করা মন্তব্যের জন্য বিতর্কেও জড়িয়েছেন ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ। এক বার এনসিইআরটি-র তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের একটি অধ্যায় ‘লভ জিহাদ’ প্রচার করছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।
ধীরেন্দ্রকৃষ্ণের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁকে সরাসরি বিতর্কসভায় যোগ দেওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ করেন ভারতীয় যুক্তিবাদী শ্যাম মানব। বাগেশ্বর বাবা কুসংস্কার প্রচার করছেন বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
‘অখিল ভারতীয় অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতি’ (সর্বভারতীয় কুসংস্কার নির্মূল কমিটি) কুসংস্কার বিরোধী আইনে ধীরেন্দ্রকৃষ্ণের বিরুদ্ধে নাগপুর পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে। যদিও সেই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হননি বাগেশ্বর ধামের প্রধান।