অভিনয়জগতে কেরিয়ার শুরু করে সাফল্যের সিঁড়ি চড়ার মধ্যবর্তী সময়ে বলিপাড়ার একাধিক তারকা ফ্লপ ছবিতে অভিনয় করেছেন। এমনকি সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছোনোর পরেও ফ্লপ ছবি যোগ হয়েছে তাঁদের কেরিয়ারের ঝুলিতে। অভিনেতাদের এই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন জীতেন্দ্র, ধর্মেন্দ্র, বিনোদ খন্না, অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে শাহরুখ খান এবং অক্ষয় কুমারের মতো তারকারা।
তবে এমন এক জন অভিনেতাও রয়েছেন, যিনি কেরিয়ারে ছবি করেছেন ৩৫০-র বেশি। ফ্লপ হয়েছে তাঁর বহু ছবি। তার পরেও কাজের অভাব হয়নি। বরং একসঙ্গে একই সময়ে ৪১টি ছবির শুটিং করার দরুন নোটিস পেয়েছিলেন তিনি।
এই অভিনেতা আর কেউ নন, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। মিঠুনকে কোনও নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে বাঁধা যায় না। হিন্দি ছবিতে তিনি যেমন অভিনয় করেছেন, বাঙালি হওয়ার সুবাদে একই সঙ্গে বাংলা ছবিতেও অভিনয় করে গিয়েছেন তিনি।
মিঠুন অভিনীত অনেক সিনেমা বক্স অফিসে সুপারহিট হয়। তিনিই প্রথম বলি অভিনেতা যাঁর ছবি ১০০ কোটির ব্যবসা করেছিল। ১৯৮২ সালে মুক্তি পাওয়া সেই সিনেমার নাম ছিল ‘ডিস্কো ড্যান্সার’।
মিঠুনের কেরিয়ারে ফ্লপ ছবির সংখ্যাও কম নয়। নব্বইয়ের দশকে একের পর এক ফ্লপ ছবিতে অভিনয় করে গিয়েছেন তিনি। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮—এই পাঁচ বছরের সময়কালে পর পর ৩৩টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মিঠুন। এই ছবিগুলির প্রতিটিই ফ্লপ হয়েছিল বলে বলিপাড়া সূত্রে খবর। সম্পূর্ণ কেরিয়ারে মিঠুন প্রায় ১৮০টি ফ্লপ ছবিতে অভিনয় করেছেন।
কিন্তু তার পরেও হাল ছাড়েননি অভিনেতা। ধারাবাহিক ভাবে কাজ চালিয়ে যান তিনি। কাজের অভাবও হয়নি তাঁর।
মিঠুন এতটাই সফল ছিলেন যে, এক বছরে সর্বাধিক সংখ্যক ছবি মুক্তির জন্য তিনি একবার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি অভিনেতাকে নিয়ে আরও এক তথ্য প্রকাশ্যে এনেছেন তাঁর পুত্র নমাশী চক্রবর্তী।
নমাশী নিজেও বলিপাড়ায় পা দিয়েছেন। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে নমাশী জানিয়েছেন যে তাঁর বাবা ২৪৯টি ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। শুধুমাত্র ১৯৮৯ সালেই ১৯টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল মিঠুনের।
কিন্তু কী ভাবে একসঙ্গে এত ছবিতে অভিনয় করতে পারতেন মিঠুন? নমাশী ব্যাখ্যা করেছেন, সেই সময় প্রায়শই স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতারা সিনেমা বানাতেন এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়া অনেক সহজ ছিল।
নমাশীর কথায়, “একটা সময় ছিল যখন তারকাদের খুব কম অবসর সময় থাকত। আজকের তারকাদের হাতে অনেক বেশি সময় থাকে। সেই সময়, যে কেউ তারকাদের কাছে গিয়ে ছবি তৈরির কথা বলতে পারতেন। এখন সিনেমার জগৎ অনেক বেশি কর্পোরেট। সংস্থাগুলি সাধারণত তারকাদের প্রতিনিধিত্ব করে। সেই সময় নিজের পছন্দমতো কাজ করার স্বাধীনতা ছিল অভিনেতাদের।”
নমাশী আরও জানিয়েছেন, ১৯৯৩ সালে তাঁর বাবা-সহ অন্য অভিনেতারা সিনেমা ও টিভি শিল্পী সমিতি ‘সিন্টা’র থেকে একটি নোটিস পেয়েছিলেন। সেই নোটিসে অভিনেতাদের একসঙ্গে ৪০টির বেশি ছবিতে কাজ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
মিঠুন যখন এই নোটিস পান তখন নাকি তিনি একসঙ্গে ৪১টি ছবিতে কাজ করছিলেন, যার মধ্যে ৩৫টিতে তিনি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছিলেন। তেমনটাই জানিয়েছেন নমাশী।
নমাশী আরও জানিয়েছেন, মিঠুনের পাশাপাশি গোবিন্দ এবং রাহুল রায়ও একই চিঠি পেয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ১৯৯০-এর দশকে গোবিন্দ নামী বলি তারকাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। ১৯৯০ সালে ‘আশিকি’র সাফল্যের পর রাহুল রায়ের খ্যাতিও বাড়তে থাকে হু হু করে।
ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নমাশী আরও জানিয়েছেন, সেই বছরগুলিতে শুটিংয়ের ব্যস্ত সময়সূচির কারণে খুব কমই অবসর পেতেন মিঠুন। বাড়িতেও কম থাকতেন। নমাশীর দাবি, ১০ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি তাঁর বাবার সঙ্গে খুবই কম সময় কাটিয়েছিলেন।
নমাশীর কথায়, ‘‘বাবা খুব ভোরে শুটিংয়ের জন্য বেরিয়ে যেতেন এবং যখন তিনি ফিরে আসতেন, তখন আমি ঘুমিয়ে পড়তাম। আমি কয়েক দশক ধরে তাঁকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে দেখেছি। এখনও সমান পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।’’
২০২৪ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত হন মিঠুন। মিঠুনকে শেষ দেখা গিয়েছে বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত ‘দ্য বেঙ্গল ফাইল্স’ ছবিতে। ওই ছবিতে তাঁর সঙ্গে অভিনয় করেছেন পুত্র নমাশীও।