বালুচিস্তানের তুরবাতে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত সে দেশের ধর্মীয় নেতা মুফতি শাহ মির। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, নমাজ শেষে মসজিদ থেকে বার হওয়ার সময় সশস্ত্র হামলাকারীরা মুফতিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
গুরুতর জখম অবস্থায় মুফতিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। খবর, পুরো বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে পাক গোয়েন্দা সংস্থাগুলি।
পুলিশ জানিয়েছে, হামলার নেপথ্যে কী কারণ তা জানার এবং অপরাধীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তবে শুধু ধর্মীয় নেতা নন, মনে করা হয় পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর হয়েও কাজ করতেন মুফতি। ২০১৬ সালের ৩ মার্চ গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন অফিসার কূলভূষণ যাদবকে গ্রেফতার করে পাক সেনা।
ইসলামাবাদের অভিযোগ, ভারতের গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং বা র-এর হয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছিলেন কুলভূষণ। অন্য দিকে, আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে ভারত জানিয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত নৌসেনা অফিসার কুলভূষণকে ইরান থেকে অপহরণ করা হয়েছে। তার পর বালুচিস্তানে বিদ্রোহীদের মদত দেওয়ার মতো মিথ্যা গল্প সাজিয়েছে পাকিস্তান।
মনে করা হয়, কুলভূষণকে অপহরণে বড় হাত ছিল মুফতির। এ-ও মনে করা হয়, পাক গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গে নিবিড় যোগ ছিল তাঁর। আইএসআইয়ের হয়ে নাকি গোপন তথ্যও খুঁজে বার করতেন তিনি। তার পর তা আইএসআই এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে পৌঁছে দিতেন।
অভিযোগ, বালুচিস্তানের তুরবাত এলাকার বাসিন্দা মুফতি আইএসআইয়ের নির্দেশে মানব পাচারের ব্যবসা চালাতেন। এর আড়ালে মাদক ও অস্ত্র পাচারও নাকি করতেন।
মুফতি পাকিস্তানের বিভিন্ন সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে যেতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। পাকিস্তান থেকে আসা সন্ত্রাসীদের ভারতে অনুপ্রবেশ করার ক্ষেত্রেও নাকি অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন তিনি। অর্থাৎ, সেই অর্থে তিনি ভারতের শত্রুও ছিলেন।
অভিযোগ, আইএসআইয়ের নির্দেশে আফগানিস্তানেও গিয়েছিলেন মুফতি। সেখান থেকে অনেক তথ্য পাক সেনাবাহিনীর কাছে পাচার করেন। বালুচ বিদ্রোহীদের দমনেও নাকি সক্রিয় ছিলেন তিনি।
মনে করা হয়, মুফতির পাচার করা তথ্যের ভিত্তিতেই সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্রোহী দমন করতে কড়া পদক্ষেপ করছে পাকিস্তানের সেনা। সেগুলি এমন পদক্ষেপ ছিল, যা সঠিক তথ্য ছাড়া করা সম্ভব ছিল না।
সেই মুফতির মৃত্যুতে পাকিস্তান জুড়ে হইচই পড়েছে। এই ঘটনা নাকি নাড়িয়ে দিয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থার মাথাদেরও। ধর্মীয় নেতার উপর কে হামলা চালাল তা জানতে খোঁজ খোঁজ রব পড়ে গিয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুফতি যে বিদ্রোহীদের তথ্য গোপনে পাক সেনা এবং গুপ্তচর সংস্থার কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন, তা জানতে পেরে গিয়েছিল ওই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি। তাই ‘সাপ’ নিকেশের সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
মনে করা হচ্ছে তুরবাত এলাকার মসজিদ থেকে নমাজ পড়ে বেরোনোর সময় বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের পাঠানো কোনও চরই খতম করেছে মুফতিকে।
সংবাদমাধ্যম ‘আরব নিউজ়’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুফতির হত্যা প্রসঙ্গে জেলা পুলিশ কর্তা রশিদ-উর-রহমান জেহরি বলেছেন, ‘‘মুফতি শাহ মির আজিজ মসজিদের ভিতরে নমাজ পড়ছিলেন। তখন বন্দুকধারীদের এক জন মসজিদে প্রবেশ করে এবং মুফতি বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ঝাঁঝরা করে দেয়।’’
‘চোখের মণি’কে হারিয়ে আইএসআইয়ের চরেরা খুনির খোঁজ শুরু করেছে বলেও জানা গিয়েছে।