১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর। পৃথিবীর কক্ষপথে স্পুটনিক-১ পাঠিয়েছিল সাবেক সোভিয়েত। প্রথম বারের জন্য কোনও উপগ্রহ পাঠানো হয়েছিল মহাকাশে।
তার পর থেকে পেরিয়ে গিয়েছে ৬৭ বছর। মহাকাশবিজ্ঞানে পৃথিবী এখন অনেক এগিয়েছে। বহু দেশের উপগ্রহ এখন কক্ষপথে চক্কর খাচ্ছে।
বিভিন্ন উপগ্রহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে মহাকাশে পাঠায় বিশ্বের দেশগুলি। কেউ আবহাওয়ার গতিবিধি বাতলায় তো কারও কাজ আবার স্রেফ নজরদারি। অনেক উপগ্রহ যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রযুক্তি সরবরাহ করে। এমনকি, ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর খুঁজতেও মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে একাধিক উপগ্রহ।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেই সাতটি দেশের নাম, যারা মহাকাশে সবচেয়ে বেশি উপগ্রহ পাঠিয়েছে।
তালিকার প্রথমেই রয়েছে আমেরিকার নাম। বর্তমানে মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে আমেরিকার পাঠানো প্রায় তিন হাজার উপগ্রহ।
সামরিক, বাণিজ্যিক থেকে শুরু করে বৈজ্ঞানিক— গত কয়েক দশকে বহু কৃত্রিম উপগ্রহ মাকাশে পাঠিয়েছে নাসা। এ ছাড়াও তালিকায় রয়েছে ‘স্পেস-এক্স’-এর মতো বেসরকারি সংস্থার পাঠানো উপগ্রহও।
আমেরিকার পর মহাকাশে সবচেয়ে বেশি উপগ্রহ পাঠানো দেশ হিসাবে উঠে আসে চিনের নাম। সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত মহাকাশে প্রায় ৫০০ কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছে ড্রাগনের দেশ।
তালিকায় এর পরেই নাম রয়েছে রাশিয়ার। মহাকাশে রাশিয়ার ১৬৯টি উপগ্রহ রয়েছে। আমেরিকার মতোই রাশিয়ারও অনেক উপগ্রহ সামরিক, যোগাযোগ এবং বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্যে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে।
চিন এবং রাশিয়ার পরেই তালিকায় রয়েছে ব্রিটেনের নাম। বর্তমানে ব্রিটেনের পাঠানো ১৩৫টি উপগ্রহ মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ব্রিটেনের উপগ্রহগুলি টেলিযোগাযোগ, পর্যবেক্ষণ এবং নেভিগেশনের মতো ক্ষেত্রে পারদর্শী। বর্তমানে মহাকাশে প্রযুক্তিতে প্রচুর টাকাও ঢালছে ব্রিটেন।
মহাকাশে সবচেয়ে বেশি উপগ্রহ পাঠানো দেশগুলির তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে জাপান। জাপানের পাঠানো ৭৮টি উপগ্রহ বর্তমানে মহাকাশে রয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির জন্য বিখ্যাত জাপান। তাই মহাকাশে সে দেশের পাঠানো উপগ্রহগুলির প্রযুক্তিও নজর কেড়েছে বার বার।
তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে ভারত। ভারতের ৬৬টি উপগ্রহ বর্তমানে কক্ষপথে চক্কর খাচ্ছে। তুলনামূলক ভাবে কম খরচে ভাল উপগ্রহ তৈরি এবং তা মহাকাশে পাঠানোর জন্য নাম রয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর।
তালিকায় সাত নম্বর জায়গায় রয়েছে কানাডার নাম। কানাডার তৈরি ৫৬টি কৃত্রিম উপগ্রহ বর্তমানে মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
মহাকাশে একাধিক দেশ একসঙ্গে মিলে তৈরি উপগ্রহের সংখ্যাও কম নয়। মহাকাশে ‘মাল্টিন্যাশনাল’ উপগ্রহের সংখ্যা প্রায় ১৮০। ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফেও বেশ কয়েকটি উপগ্রহ মহাকাশে পাঠানো হয়েছে।
বেসরকারি ক্লায়েন্ট এবং জাতীয় সরকারকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ক্ষমতা প্রদানকারী বেসরকারি সংস্থাগুলির ক্রমবর্ধমান সংখ্যার জন্য ব্যবসাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি তাদের নিজস্ব মহাকাশ প্রোগ্রাম ছাড়াই কম ধনী দেশগুলিতে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার পরই নজরদারি উপগ্রহের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারে ভারত। সেই কারণে তড়িঘড়ি রিস্যাট-১ এর আগে মহাকাশে রিস্যাট-২ পাঠায় দেশ।
২০০৯ সালের ২০ এপ্রিল ইজ়রায়েলে বানানো রিস্যাট-২ আকাশে পাঠিয়েছিল ভারত। ৫৩৬ কিমি উচ্চতা থেকে এই উপগ্রহ সারা বছর নজরে রাখে ভারতের সীমান্তে। সন্দেহজনক কিছু দেখলেই সেই খবর পৌঁছে যায় ভারতের সেনা এবং গোয়েন্দা সংস্থাদের কাছে। ২০১৬ সালে উরিতে সার্জিকাল স্ট্রাইক বা সাম্প্রতিক বালাকোট অভিযান এই উপগ্রহের সাহায্যেই করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়।