খুনের মিথ্যা অভিযোগে জেল খেটেছেন ৪৩ বছর। জেল থেকে বেরোতেই এ বার নির্বাসনের খাঁড়া আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ায় থাকা ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুবু বেদমের মাথায়।
খুনের মিথ্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ৪৩ বছর জেল খেটেছেন সুবু। চলতি অক্টোবরের শুরুতে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। কিন্তু এ বার কয়েক দশকের পুরনো নির্বাসন মামলায় আদেশের ভিত্তিতে তাঁকে হেফাজতে নিয়েছে মার্কিন অভিবাসন এবং শুল্ক দফতর (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বা আইসিই)।
খুনের অভিযোগে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে পেনসিলভেনিয়ার হান্টিংডন স্টেট কারেকশনাল ইনস্টিটিউশন কারাগারে বন্দি ছিলেন ৬৪ বছর বয়সি সুবু। তবে তাঁর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় গত ৩ অক্টোবর মুক্তি পান তিনি।
তবে স্বাধীনতার জন্য সুবুর দীর্ঘ সংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন এবং শুল্ক দফতর এখন তাঁকে ভারতে পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করেছে।
ভারতে জন্মগ্রহণের পর মাত্র ন’মাস বয়সে পরিবারের সঙ্গে আমেরিকা চলে যান সুবু। তাঁর পড়াশোনা এবং বড় হওয়া পেনসিলভেনিয়াতেই।
১৯৮২ সাল। সুবু তখন ১৯ বছরের তরুণ। সেন্টার কাউন্টিতে বন্ধু টমাস কিনসারকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হন তিনি। যদিও সুবু দাবি করেছিলেন, খুন তিনি করেননি।
অন্য দিকে, সরকারি আইনজীবীদের অভিযোগ ছিল যে, কিনসারকে .২৫ ক্যালিবারের পিস্তল দিয়ে গুলি করেছিলেন সুবু। এর পরেই শুরু হয় তাঁর আইনি লড়াই।
যে পিস্তল দিয়ে সুবু খুন করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল, সেটি কখনও উদ্ধার হয়নি। পুরো মামলাটি করা হয়েছিল পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে।
১৯৮৩ সালে বন্ধুকে হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয় সুবুকে। প্যারোল ছাড়াই তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনানো হয়।
তবে হাল ছাড়েননি সুবু। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ২০২২ সালে, অর্থাৎ জেলে ৪০ বছর কাটিয়ে ফেলার পর সুবুর পক্ষে নতুন করে মামলা শুরু করে ‘পেনসিলভেনিয়া ইনোসেন্স প্রজেক্ট’।
সুবুকে নির্দোষ সাব্যস্ত করতে নতুন করে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করা শুরু করেন তাঁর আইনজীবীরা। তাঁদের হাতে আসে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের একটি রিপোর্ট এবং হাতে লেখা কিছু নোট।
সে সব রিপোর্টে উঠে আসে, কিনসারের খুলিতে যে গুলিটি পাওয়া গিয়েছিল তা .২৫ ক্যালিবারের গুলির থেকে তুলনামূলক ভাবে ছোট। আরও বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ ইঙ্গিত দিয়েছিল যে সুবু নির্দোষ।
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে সুবুর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ খারিজ করে দেন পেনসিলভেনিয়ার জেলা অ্যাটর্নি বার্নি ক্যান্টোর্না। আদালত এ-ও জানিয়ে দেয়, এই মামলার পুনঃবিচার করা অন্যায্য এবং অসম্ভব।
এর পর ৩ অক্টোবর হান্টিংডন স্টেট কারেকশনাল ইনস্টিটিউশন থেকে মুক্তি পান ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুবু। পেনসিলভেনিয়ার ইতিহাসে সুবুর আগে কোনও নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া ব্যক্তি এত দীর্ঘ সময় ধরে জেল খাটেননি।
তবে মুক্তি পেয়েও শান্তি জোটেনি সুবুর কপালে। জেল থেকে বেরিয়ে আসার পরেই তাঁকে হেফাজতে নিয়েছে অভিবাসন এবং শুল্ক দফতর।
নির্বাসন-আদেশ উদ্ধৃত করে আমেরিকার অভিবাসন এবং শুল্ক দফতর জানিয়েছে, ‘অপরাধমূলক অতীত’-এর কারণে মুক্তির পর পরই সুবুকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
মার্কিন অভিবাসন এবং শুল্ক দফতর এ-ও জানিয়েছে, ১৯৮০-এর দশকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতারির আগে মাদক বিতরণের অভিযোগও ছিল সুবুর বিরুদ্ধে। সেই দোষ তিনি স্বীকারও করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুবুর পরিবারও মাদক বিতরণের বিষয়টি কম বয়সে ঘটিয়ে ফেলা ভুল হিসাবে বর্ণনা করেছে। সেই সময়ই সুবুকে নির্বাসিত করার কথা ছিল। কিন্তু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করার কারণে তাঁকে আমেরিকা থেকে বহিষ্কার সম্ভব হয়নি।
আর সে কারণেই হত্যার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর সুবুকে এখন কয়েক দশকের পুরনো মামলায় হেফাজতে নিয়েছে মার্কিন অভিবাসন এবং শুল্ক দফতর। তাঁকে নির্বাসিত করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে খবর।