Dismantle India Post

দেশভাগের উস্কানি দিয়ে খণ্ডিত ভারতের মানচিত্র প্রকাশ, নেটোর নাম ভাঁড়িয়ে ভয়ঙ্কর চক্রান্তে ইউরোপীয় অর্থনীতিবিদ!

মার্কিন সামরিক জোট ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা’ বা নেটোর পদাধিকারী পরিচয় দিয়ে ভারত ভাগের উস্কানিমূলক পোস্ট করে খবরের শিরোনামে এসেছেন অস্ট্রিয়ান অর্থনীতিবিদ গুন্থার ফেহলিঙ্গার-জান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘রাশিয়া ও চিনপন্থী’ বলেও নিশানা করেছেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৫
Share:
০১ ১৯

নাম ভাঁড়িয়ে ফের ইউরোপে বসে ভারত ভাগের হুঙ্কার! সমাজমাধ্যমে এ দেশের খণ্ডিত মানচিত্র ছড়িয়ে দেওয়া। পাশাপাশি, দেশভাগের জন্য বিরোধী দলগুলিকে কাজে লাগানোর কথা বলে বিস্ফোরক পোস্ট। বিষয়টি নজরে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে নয়াদিল্লি। তড়িঘড়ি ব্লক করা হয় এক্স হ্যান্ডলের (আগে নাম ছিল টুইটার) ওই অ্যাকাউন্ট। এ ভাবে ভারতকে নিশানা করার নেপথ্যে রয়েছে বড় কোনও ষড়যন্ত্র? ঘটনার জেরে এই প্রশ্নেরই জবাব খুঁজছেন দুঁদে কূটনীতিক থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা।

০২ ১৯

অস্ট্রিয়ান অর্থনীতিবিদ গুন্থার ফেহলিঙ্গার-জান। সম্প্রতি, এক্স হ্যান্ডলে তাঁর করা একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে দুনিয়া জুড়ে শুরু হয়েছে শোরগোল। সেখানে ‘ভারত ভেঙে প্রাক্তন ভারত’ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, এ দেশের একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছেন গুন্থার, যেখানে খণ্ডিত ভারতের অংশগুলি পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ এবং স্বাধীন খলিস্তানের অংশ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর ওই পোস্ট এ দেশের আমজনতার ক্ষোভের আগুনে যে ঘি ঢেলেছে, তা বলাই বাহুল্য।

Advertisement
০৩ ১৯

শুধু ভারত ভাগের কথা বলেই থেমে থাকেননি গুন্থার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও নিশানা করেছেন তিনি। এক্স হ্যান্ডলে অস্ট্রিয়ান অর্থনীতিবিদ লিখেছেন, ‘‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী একজন রাশিয়ান মানুষ। খলিস্তানের স্বাধীনতার জন্য আমাদের আরও বন্ধু প্রয়োজন।’’ এই মন্তব্যের পরই সমাজমাধ্যমে শুরু হয় সমালোচনা। এ দেশের নেটাগরিকেরা ইতিমধ্যেই তাঁকে ‘দানব’ বলে খোঁচা দিতে শুরু করে দিয়েছেন।

০৪ ১৯

গুন্থারের পোস্ট ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও ক্ষোভ তৈরি করেছে। এই ইস্যুতে বিদেশ মন্ত্রকে চিঠি পাঠিয়েছেন শিবসেনা সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘অবিলম্বে অস্ট্রিয়ার কাছে এর ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত। ওদের দূতাবাসের সামনে এটা তুলে ধরতে হবে। কারণ, তাদের নাগরিক যেটা করেছেন, সেটা পাগলামি ছাড়া আর কিছুই নয়।’’

০৫ ১৯

উল্লেখ্য, গুন্থার যে এ বারই প্রথম ভারত ভাগের কথা বললেন, এমনটা নয়। ২০২৩ সালে এক্স হ্যান্ডলে করা একটি পোস্টে মোদীকে ‘রুশপন্থী’ এবং ‘চিনপন্থী’ বলে বেনজির আক্রমণ শানান তিনি। পাশাপাশি লোকসভায় বিরোধী নেতা তথা রায়বরেলীর কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক জলঘোলা শুরু হয়ে গিয়েছে।

০৬ ১৯

খণ্ডিত ভারতের মানচিত্র-সহ অস্ট্রিয়ান অর্থনীতিবিদের পোস্ট প্রকাশ্যে আসতেই ওই অ্যাকাউন্ট ব্লক করে নয়াদিল্লি। যদিও তত ক্ষণে পোস্টটির স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। সেখানে দিল্লি, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থানকে স্বাধীন খলিস্তানের অংশ হিসাবে দেখিয়েছেন গুন্থার। এ ছাড়া জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখের একটি বড় অংশ পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট মানচিত্রটির উপরে ডান দিকে ‘ভারতের বাস্তবতা’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

০৭ ১৯

১৯৬৮ সালে অস্ট্রিয়ার লিনজ়েতে জন্ম হওয়া গুন্থারকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় শক্তিজোট ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা’ বা নেটো (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন) সম্প্রসারণের কট্টর সমর্থক বললে অত্যুক্তি হবে না। পাশাপাশি ২৭টি রাষ্ট্রের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও বড় করতে চান তিনি। ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ডিগ্রি রয়েছে তাঁর।

০৮ ১৯

পশ্চিমি জোটকে আরও শক্তিশালী করতে এর আগে বহু বার ব্রাজ়িল এবং রাশিয়াকে টুকরো টুকরো করার কথা বলেছেন গুন্থার। উস্কানিমূলক পোস্ট ছড়িয়ে বিভিন্ন সময়ে যথেষ্ট বদনাম কুড়িয়েছেন তিনি। পাশাপাশি পরিচয় ভাঁড়াতে সমাজমাধ্যমে নিজেকে নেটোর অস্ট্রিয়ান কমিটির সদস্য বলেন ভারত-বিদ্বেষী ওই ব্যক্তি। কখনও আবার ‘নেটোর সম্প্রসারণবাদ কমিটি’র সদস্যপদ থাকার কথাও বলতে শোনা গিয়েছে গুন্থারকে।

০৯ ১৯

গত শতাব্দীতে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ঠান্ডা যুদ্ধে জড়িয়ে নেটো তৈরি করে আমেরিকা। ১৯৪৯ সালের ৪ জুলাই জন্ম হওয়া সংশ্লিষ্ট চুক্তিটি আসলে একটা সামরিক সমঝোতা। এর সদর কার্যালয় রয়েছে বেলজ়িয়ামের ব্রাসেলসে। বর্তমানে এতে রয়েছে ৩২টি রাষ্ট্র। তবে তাদের অস্ট্রিয়ান কমিটি বা সম্প্রসারণবাদ কমিটি বলে কোনও শাখা বা দফতর নেই।

১০ ১৯

প্রথম পর্যায়ে মাত্র ১২টা দেশ নিয়ে তৈরি হয় নেটো। কিন্তু পরবর্তী কালে কলেবরে বাড়তে থাকে এই সামরিক চুক্তি সংস্থা। ধীরে ধীরে এগোতে এগোতে সেটা রাশিয়ার দরজায় পৌঁছে গিয়েছে। মস্কোর প্রতিবেশী ইউক্রেনকেও সদস্যপদ দেওয়ার তোড়জোর শুরু করে নেটো। ঠিক তখনই প্রমাদ গোনে ক্রেমলিন। এর পর জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কিভ আক্রমণের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর ফলে গত সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে পূর্ব ইউরোপে চলছে যুদ্ধ।

১১ ১৯

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়া ইস্তক রাশিয়ার থেকে সস্তা দরে অপরিশোধিত খনিজ তেল আমদানি করা শুরু করে ভারত। এই বিষয়ে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তাই গত ২৭ অগস্ট থেকে এ দেশের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন তিনি। ওয়াশিংটনের যুক্তি, মস্কোর থেকে নয়াদিল্লি ‘তরল সোনা’ কেনার জেরে শক্তিশালী হচ্ছে তাদের অর্থনীতি। ফলে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো অর্থ হাতে পাচ্ছে ক্রেমলিন।

১২ ১৯

এই পরিস্থিতিতে রুশ তেল আমদানি বন্ধ না করলে ভারতের উপর অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা চাপানোর হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। ফলে বিকল্প বাজারের সন্ধান শুরু করে দিয়েছে নয়াদিল্লি। গত ৩১ অগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চিনের তিয়েনজ়িনে ‘সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা’ বা এসসিওর (সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজ়েশন) বৈঠকে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেখানে ড্রাগন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সারেন তিনি।

১৩ ১৯

এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই কড়া সমালোচনায় ট্রাম্পের শুল্কনীতিকে বিঁধেছে বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশ। পাশাপাশি, রাশিয়া-চিন-ভারতের একটি ত্রিশক্তি জোট তৈরি হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তারা। এই ইস্যুতে সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে মুখ খোলেন জার্মান চ্যান্সেলার ফ্রেডরিখ মেয়ার্ৎজ়। তিনি বলেন, ‘‘সাংহাই সহযোগিতার নামে মস্কো, বেজিং এবং নয়াদিল্লি অনেকটাই কাছাকাছি চলে এসেছে। এটা সত্যিই চিন্তার। কারণ, এই তিন দেশের অর্থনীতি অনেক বড় এবং তারা পরমাণু শক্তিধর।’’

১৪ ১৯

এসসিও সম্মেলন শেষ হতে না হতেই প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছিল ফিনল্যন্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজ়ান্ডার স্টাবের গলায়। সেপ্টেম্বরের গোড়ায় রাজধানী হেলসিঙ্কিতে একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপ এবং আমেরিকাকে বৈশ্বিক দক্ষিণ (পড়ুন গ্লোবাল সাউথ) এবং ভারতের প্রতি আরও সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নইলে আমরা হেরে যাব।’’

১৫ ১৯

আর তাই ভারতকে রাশিয়া এবং চিনের অক্ষ থেকে বার করে আনতে তৎপর হয়েছে পশ্চিম ইউরোপ। নয়াদিল্লির সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ বাড়াচ্ছে ফ্রান্স, ইটালি এবং জার্মানির মতো দেশ। গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি আন্তোনিও কোস্টা এবং ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, দ্বিতীয়টি ২৭টি দেশের সংগঠন ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন’ বা ইইউয়ের অংশ।

১৬ ১৯

বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, ২০২৫ সাল শেষ হওয়ার আগেই ভারতের সঙ্গে ‘মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি’ (পড়ুন ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট বা এফটিএ) সেরে ফেলতে চাইছে ইইউ। সে ক্ষেত্রে ইউরোপের ২৭টি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন কয়েক গুণ বাড়ানোর সুযোগ পাবে নয়াদিল্লি। এ ব্যাপারে মোদী সরকারকে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে ইইউয়ের অন্যতম সদস্য জার্মানি। এ দেশের সঙ্গে পণ্য আমদানি ও রফতানির মাত্রা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা রয়েছে বার্লিনের।

১৭ ১৯

অন্য দিকে গত ৫ সেপ্টেম্বর ‘ভারত ও রাশিয়াকে চিনের অন্ধকারে হারিয়ে ফেললাম’ বলে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন ট্রাম্প। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ১৮০ ডিগ্রি বেঁকে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ভারতকে হারিয়ে ফেলিনি। ভারতের উপর আমরা খুব বড় একটা শুল্ক আরোপ করেছি— ৫০ শতাংশ। এটা খুবই চড়া শুল্ক।’’ এর পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে।

১৮ ১৯

ভারত সম্পর্কে ট্রাম্পের এ-হেন ইতিবাচক মন্তব্যের পর নিজে থেকেই বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ৬ সেপ্টেম্বর সকালে সমাজমাধ্যমে দু’লাইনের একটি পোস্ট করেন তিনি। সেখানে নমো লেখেন, ‘‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনুভূতি এবং আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ওঁর ইতিবাচক বক্তব্যের প্রশংসা করছি। আমরা এর সম্পূর্ণ প্রতিদান দেব।’’ ফলে দু’তরফে যে বরফ গলতে শুরু করেছে বলে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।

১৯ ১৯

গত জুলাইয়ে আমেরিকা সফরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন নেটোর মহাসচিব মার্ক রাটে। এর পরই প্রধানমন্ত্রী মোদীর নাম করে নয়াদিল্লিকে হুমকি দেন তিনি। বলেন, ‘‘রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে গেলে ভারতকে তার ফল ভুগতে হবে।’’ তাঁর ওই হুঁশিয়ারির দু’মাসের মাথায় গুন্থারের পোস্ট প্রকাশ্যে আসায় অবশ্য নতুন করে প্রকাশ্যে এল ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। এর প্রভাব ভারত-মার্কিন এবং ভারত এবং পশ্চিম ইউরোপের সম্পর্কে কতটা পড়বে, তার উত্তর দেবে সময়।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement