ভারত-পাক সংঘাতের আবহে পাকিস্তানকে সমর্থনের অভিযোগ উঠেছে তুরস্কের বিরুদ্ধে। আর তার পরে পরেই সে দেশের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ করেছে ভারত। তার মধ্যে ভারতীয় বিমানবন্দরগুলিতে তুর্কি সংস্থা সেলেবির কাজ করার অনুমতি বাতিল করার সিদ্ধান্ত অন্যতম।
ভারতের সেই সিদ্ধান্তের পরই এ বার তড়িঘড়ি নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল সেলেবি। জানিয়ে দিল, তুরস্কের সঙ্গে সংস্থার কোনও সম্পর্ক নেই।
সংস্থাটিতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোয়ানের পরিবারের সদস্যের মালিকানা রয়েছে বলে যে তথ্য উঠে এসেছিল, তা-ও মিথ্যা বলে দাবি করা হয়েছে সেলেবির তরফে।
উল্লেখ্য, ভারতের ন’টি বিমানবন্দরে কার্গো ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বা ব্যবস্থাপনার কাজে যুক্ত ছিল সংস্থাটি। ‘সেলেবি এয়ারপোর্ট সার্ভিসেস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’-সহ সেলেবির আরও দু’টি সংস্থা ভারতের ন’টি বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সংক্রান্ত কাজ করে। বিমানবন্দরগুলি হল— দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, চেন্নাই, অহমদাবাদ, গোয়া, কোচিন এবং কান্নুর।
কিন্তু ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে’ বৃহস্পতিবার সংস্থাটির ভারতীয় বিমানবন্দরে কাজ করার অনুমতি বাতিল করেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। ভারতের তরফে সংস্থার নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিলের পর মালিকানা এবং কার্যক্রম নিয়ে ইতিমধ্যেই বিবৃতি দিয়েছে ‘সেলেবি অ্যাভিয়েশন ইন্ডিয়া’।
সেলেবির তরফে জানানো হয়েছে, তাদের সংস্থার তুরস্কের মালিকানা এবং কার্যক্রম সম্পর্কে যে তথ্য ছড়িয়েছে তা ‘মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর’। রাজনীতির সঙ্গে সংস্থাটির কোনও সম্পর্ক নেই। তুরস্কের কেউ সংস্থার মালিক নন বলেও দাবি করেছে সেলেবি।
এমনটাও শোনা যাচ্ছিল যে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্ডোয়ানের কন্যা সুমেয় এর্ডোয়ানেরও মালিকানা রয়েছে সেলেবিতে।
তবে এক বিবৃতিতে সেলেবির গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং মেজর স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট-কন্যার সঙ্গে সংস্থার কোনও সম্পর্ক নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘মূল প্রতিষ্ঠানে সুমেয় নামে কোনও অংশীদার নেই। সংস্থার মালিকানা কেবল সেলেবিওগলু পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ক্যান সেলেবিওগলু এবং কানান সেলেবিওগলু মালিক। তাঁদের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা একটি পেশাদার বিমান পরিষেবা সংস্থা।’’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘আমরা কোনও ভাবেই তুর্কি সংস্থা নই। স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত নিয়ম সম্পূর্ণ রূপে মেনে চলি। কোনও সরকার বা ব্যক্তির সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক যোগাযোগ আমাদের নেই।’’
সেলেবির দাবি, মূল প্রতিষ্ঠানের ৬৫ শতাংশ কানাডা, আমেরিকা, ব্রিটেন, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং পশ্চিম ইউরোপের বিনিয়োগকারীদের মালিকানাধীন।
জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগের কথা জানিয়ে দিল্লি বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালে ব্যবস্থাপনার জন্য সেলেবির ছাড়পত্র বাতিল করার পর এই বিবৃতি জারি করেছে সংস্থা।
এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে সেলেবি বলেছে, ‘‘আমাদের সমস্ত কাজ ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নজরদারির মধ্যে হয়। আমরা ভারতীয় বিমান চলাচল, জাতীয় নিরাপত্তা এবং করব্যবস্থার সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করি।’’
সংস্থাটি বলেছে, ‘‘বিশ্বব্যাপী বিমান চলাচলের কেন্দ্র হিসাবে ভারতের অগ্রগতিতে অর্থপূর্ণ অবদান রাখার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সেলেবি। আমরা নিশ্চিত যে ভুয়ো তথ্যকে হারিয়ে দেবে সঠিক তথ্য। সত্যের প্রতিষ্ঠা হবে।’’
পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ইসলামাবাদকে সমর্থন এবং ভারতীয় সেনার অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুরের’ নিন্দা করার অভিযোগ উঠেছে আঙ্কারার বিরুদ্ধে। তার পর থেকেই তুরস্কের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা গিয়েছে।
তুরস্কের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ভারতীয় বিমানবন্দরগুলিতে সেলেবির কাজ করার অনুমতি তাৎক্ষণিক ভাবে বাতিল করেছে অসামরিক বিমান চলাচল সিকিউরিট ব্যুরো।
তুরস্ক থেকে মুখ ফিরিয়েছেন ভারতীয় পর্যটকেরাও। সে দেশে ঘুরতে যাওয়ার বুকিং হু হু করে বাতিল করছেন ভারতের নাগরিকেরা। নতুন করে বুকিংয়ের সংখ্যাও এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে।
একটি জনপ্রিয় অনলাইন ভ্রমণ সংস্থা বুধবার বিবৃতি দিয়ে এই দুই দেশের বুকিং বাতিলের কথা জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘গত এক সপ্তাহে ভারতীয় পর্যটকদের অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। তুরস্ক এবং আজ়ারবাইজানের বুকিং ৬০ শতাংশ কমে গিয়েছে। বুকিং বাতিলের পরিমাণ আচমকা বেড়ে গিয়েছে প্রায় ২৫০ শতাংশ।’’